রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি ও হল সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছিলেন ১,২৩৩ জন। তবে মনোনয়ন যাচাই-বাছাই ও প্রত্যাহার শেষে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় আছেন ৯০৩ জন। রাকসুর ইতিহাসে এবারই সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচারণায় মাঠে নেমেছে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরসহ বেশ কয়েকটি প্যানেল।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, আসন্ন রাকসু নির্বাচনে চূড়ান্ত ভোটার সংখ্যা ২৮ হাজার ৯০৫ জন এবং প্রার্থী সংখ্যা ৯০৩ জন। গড়ে প্রতি ৩২ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
সোমবার সকাল থেকে বৃষ্টি উপেক্ষা করে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে প্রার্থীদের প্রচারণা চালাতে দেখা গেছে।
এ সময় প্রার্থীরা জানান, রোববার (১৩ সেপ্টেম্বর) ব্যালট নম্বর পাওয়ার পর থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়, যার কারণে তারা ওইদিন থেকে তেমন প্রচারণা চালাতে পারেননি। সোমবার সকালে আবহাওয়া কিছুটা ভালো থাকলেও, সাড়ে ৯টার পর আবারও বৃষ্টি শুরু হয়। এতে তাদের প্রচারণায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। বিশেষ করে, আচরণবিধি অনুযায়ী কোনো একাডেমিক ভবনে প্রবেশ করা যাবে না, আর বৃষ্টির কারণে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই একাডেমিক ভবনের ভিতরে অবস্থান করছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সোমবার বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেট, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে ও প্রথম বিজ্ঞান ভবনসহ ছেলেদের হলগুলোতে প্রচারণা চালিয়েছে ছাত্রশিবিরের ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোটের’ প্রার্থীরা। এ সময় প্যানেলের ভিপি (সহসভাপতি) প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদ, জিএস (সাধারণ সম্পাদক) ফাহিম রেজাসহ অন্য প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় শিবির সমর্থিত প্যানেলের জিএস প্রার্থী ফজলে রাব্বি মো. ফাহিম রেজা বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের দেখে খুবই উচ্ছ্বসিত। আমরা যখন তাদের কাছে যাচ্ছি, তখন তারা তাদের প্রত্যাশার কথা জানাচ্ছেন। আমরা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ক্যাম্পাসকে কেমন দেখতে চাই, তা জানাচ্ছি। বিশেষ করে ছাত্রীরা খুব আনন্দের সঙ্গে আমাদের গ্রহণ করছেন।’
এদিকে সকালে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা কার্যক্রম শুরুর পর থেকেই ছাত্রদলের অনেক নেতাকর্মীকে শিক্ষার্থীদের কাছে লিফলেট বিলি করতে দেখা গেছে।
প্রচারণার বিষয়ে ছাত্রদল সমর্থিত ভিপি প্রার্থী শেখ নূর উদ্দিন আবীর বলেন, ‘রোববার সন্ধ্যা থেকে তাদের আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়েছে। তবে বৃষ্টির কারণে আমরা হলগুলোতে গণসংযোগ করেছি। বৃষ্টির কারণে আজও একাডেমিক ভবনের ভেতরে গিয়ে প্রচার চালাতে না পারলেও, আমরা আচরণবিধি মেনে প্রাচারণা চালাচ্ছি এবং শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভালো সাড়াও পাচ্ছি।’
এছাড়াও, ক্যাম্পাসের আমতলা, টুকিটাকি চত্বর, বিভিন্ন অ্যাকাডেমিক ভবনের সামনে প্রাচরণা চালিয়েছে, সমন্বয়কদের আধিপত্যবাদবিরোধী প্যানেল, র্যাডিকেল ফর চেইঞ্জ, ইসলামি ছাত্র আন্দোলনের সচেতন শিক্ষার্থী প্যানেলসহ স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীদের মাঝে লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে ভোট চেয়ে জনসংযোগ করেন তারা।
সার্বিক বিষয়ে রাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. এফ নজরুল ইসলাম বলেন, প্রার্থীরা তাদের প্রচারণা শুরু করেছেন। আমরা আশা করি সবাই আচরণবিধি মেনে চলবেন। যদি কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়, প্রথমে তাদের সতর্ক করা হবে এবং এরপরও যদি কেউ আচরণবিধি ভঙ্গ করে তাহলে নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রচারণায় প্রার্থীদের মানতে হবে যেসব নির্দেশনা
রোববার বিকেল ৫টায় চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশন। এরপরই প্রার্থীদের প্রচারণার ক্ষেত্রে বেশি কিছু বিধি-নিষেধ বা নির্বাচনী আচরণবিধি মান্য করতে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। আচরণবিধি অনুযায়ী, প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার দিন থেকে ভোট গ্রহণের ২৪ ঘণ্টা আগ পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত প্রচারণা চালানো যাবে। তবে, প্রার্থী ও ভোটার ছাড়া অন্য কেউ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না।
প্রচারণায় সাদা-কালো পোস্টার ব্যবহার করা যাবে, যার আকার হবে সর্বোচ্চ ৬০ সেমি দৈর্ঘ্য এবং ৪৫ সেমি প্রস্থ। ভবনের দেয়ালে লেখালেখি বা পোস্টার লাগানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। প্রার্থী পরিচিতি সভা ছাড়া অন্য কোনো সভায় মাইক ব্যবহার করা যাবে না।
এ ছাড়া শুধু সংশ্লিষ্ট হলের রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমতি নিয়ে ছাত্রদের আবাসিক হলে ছাত্রী এবং ছাত্রীদের আবাসিক হলে ছাত্ররা পরিচিতি সভায় প্রবেশ করতে পারবেন। ক্যাম্পাসে কোনো সভা আয়োজনের জন্য প্রক্টরকে সভার স্থান ও সময় সম্পর্কে আগাম জানাতে হবে। নির্বাচনী কার্যক্রম চলাকালে সবাইকে পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে হবে এবং বহিরাগত কাউকে আবাসিক হলে থাকতে দেওয়া যাবে না।
আচরণবিধিতে আরও বলা হয়েছে, কোনো প্রার্থী বা তার পক্ষে কেউ প্রতিদ্বন্দ্বীকে ভয়ভীতি দেখাতে, বলপ্রয়োগ করতে বা ভোটদানে বাধা সৃষ্টি করতে পারবেন না। হল ও একাডেমিক ভবনের অভ্যন্তরে মিছিল বা সমাবেশ নিষিদ্ধ। এছাড়া, প্রচারণায় মিডিয়ার মাধ্যমে মানহানিকর, অশালীন বা উসকানিমূলক কথাবার্তা বলা যাবে না।
এসব নিয়ম লঙ্ঘন করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে তাৎক্ষণিকভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট করার চেষ্টা বা নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।
এ বিষয়ে রাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. এফ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সোমবার থেকে রাকসুর নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হয়েছে। প্রার্থীরা আচরণবিধি মেনে প্রচার চালাতে পারবেন। এছাড়া, আচরণবিধিতে কিছু বিষয় এখনো সংযোজন করা হয়নি, তা আজকের মধ্যেই চূড়ান্ত করা হবে।’
মন্তব্য করুন