জাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৫:৪৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ছাত্রলীগ নেত্রীর নিয়োগ না হওয়ায় অবরুদ্ধ জাবি উপাচার্য

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে রোববার অবরুদ্ধ করেন শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ছবি : কালবেলা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে রোববার অবরুদ্ধ করেন শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ছবি : কালবেলা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে ছাত্রলীগ নেত্রীর নিয়োগ না হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে অপর এক বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে বাধা দিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় দুই ঘণ্টা উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রাখেন তারা। রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের তৃতীয় তলায় উপাচার্য অফিসের সামনে অবস্থান নিয়ে নিয়োগপ্রার্থীদের বের করে দেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

পরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নতুন রেজিস্ট্রার ভবনের কাউন্সিল শাখায় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ৩০-৪০ জন নেতাকর্মীর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নূরুল আলম। এ সময় উপউপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক শেখ মনজুরুল হক, উপউপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মোস্তফা ফিরোজ, ট্রেজারার অধ্যাপক রাশেদা আখতার ও বিভিন্ন অনুষদের ডিন ও শিক্ষকরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।

জানা যায়, রিমোট সেনসিং অ্যান্ড জিআইএস ইনস্টিটিউটের একজন শিক্ষক নিয়োগের জন্য নিয়োগ বোর্ড শুরু হওয়ার কথা ছিল রোববার সকাল ১০টায়। এ সময় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এসে প্রার্থীদের বের করে দিয়ে উপাচার্য অফিস অবরোধ করেন। পরে দুপুর ১২টায় উপাচার্যের সচিব গৌতম কুমার বিশ্বাস এসে প্রার্থীদের জানান, ‘উপাচার্যের নির্দেশে অনিবার্য কারণবশত আজকের মতো বোর্ড স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তী তারিখ জানিয়ে দেওয়া হবে।’

শিক্ষক নিয়োগে বাধা দেওয়ার বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বাইরে কাউকে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে চাই না। এই দাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে অনেকবার জানিয়েছি শাখা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে। স্যার আজকে অপারগ হয়ে জানিয়েছেন, তিনি চান কিন্তু অনেকের চাপে তা সম্ভব হয় না। আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পরিপন্থি লোকদের শিক্ষক হিসেবে চাই না।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রসায়ন বিভাগে প্রভাষক হিসেবে শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাদিয়া আফরিনকে নিয়োগ দিতে বেশ আগে থেকেই উপাচার্যকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছিলেন ছাত্রলীগের নেতারা। সর্বশেষ গত ৩০ আগস্ট অর্ধশত নেতাকর্মী নিয়ে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মো. শরীফ এনামুল কবিরের কক্ষে যান শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল। এ ছাড়া তিনি গত বেশ আগে থেকেই বর্তমান উপাচার্য ও সাবেক উপাচার্যের কক্ষে গিয়ে ওই নেত্রীকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন বলে কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে। চেষ্টা তদবিরের পরও নিয়োগ না হওয়ায় আজ রিমোট সেনসিং অ্যান্ড জিআইএস ইনস্টিটিউটের নিয়োগ বোর্ডে বাধা দিয়ে উপাচার্যকে অবরোধ করেন নেতাকর্মীরা।

রসায়ন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় রসায়ন বিভাগের তিন প্রভাষককে নিয়োগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ইতোমধ্যে নবনিযুক্ত প্রভাষকরা বিভাগে চাকরিতে যোগদান করেছেন। নবনিযুক্ত তিনজন প্রভাষক ৩৯ ব্যাচ, ৪৩ ব্যাচ ও ৪৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী। তারা প্রত্যেকেই নিজ বর্ষে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে প্রথম বা দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন। অপরদিকে ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাদিয়া আফরিন স্নাতকে পঞ্চম ও স্নাতকোত্তরে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষায় নকল করে বহিষ্কৃত এবং প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

রিমোট সেনসিং অ্যান্ড জিআইএস ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক শেখ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের বিভাগের জন্য শিক্ষক নিয়োগ খুবই জরুরি ছিল। একটি শূন্য পদের বিপরীতে ২৩ জন প্রার্থী ছিলেন। তবে বোর্ড স্থগিত হওয়া খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।’

শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, ‘ছাত্রলীগ কোনো শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে বাধা দেয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদে স্বাধীনতাবিরোধী ও জামায়াত-বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত লোকদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এরই প্রতিবাদে সাধারণ শিক্ষার্থীরা অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে।’

ছাত্রলীগ নেত্রীর নিয়োগের সঙ্গে অবরোধের কোনো সম্পর্ক আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আজকের কর্মসূচির সঙ্গে রসায়ন বিভাগের নিয়োগের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা তো চাইলেই সিন্ডিকেট আটকে দিতে পারতাম। আমরা চাই স্বজনপ্রীতি বাদ দিয়ে প্রকৃত মেধার মূল্যায়ন হোক।’

নিয়োগবোর্ড স্থগিতের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নুরুল আলম বলেন, ‘অনিবার্য কারণবশত আজ নিয়োগবোর্ড স্থগিত হয়েছে। এটা অনেক কারণেই হতে পারে। তবে আজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রার্থীদের বের করে দেন। এক্সটার্নালরা উপস্থিত থাকার পরও নিয়োগবোর্ড বসানো যায়নি।’

তবে অবরোধের বিষয়টি অস্বীকার করে উপাচার্য আরও বলেন, ‘আমাকে কেউ অবরুদ্ধ করেনি। তারা শুধু নিয়োগ প্রার্থীদের বাধা দিয়েছে। পরে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা আমাদের সঙ্গে বসেছিলেন। স্বাধীনতাবিরোধী কারও নিয়োগ না দেওয়ার বিষয়ে তারা দাবি জানিয়েছেন। আমরা তাদের দাবির বিষয়ে শুনেছি। তাদের আশ্বস্ত করেছি, আমার হাত দিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী কারও নিয়োগ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে হবে না।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘রিট করার মাধ্যমে ডাকসু নির্বাচনকে বানচালের পাঁয়তারা চালাচ্ছে শিবির’

কুমিল্লায় একই পরিবারের চারজন নিহতের ঘটনায় সেই বাসটি জব্দ

অভিনেত্রীর বাড়ি থেকে কোটি টাকার গহনা উধাও

বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণে আরও সময় প্রয়োজন : ডিসিসিআই সভাপতি

‘অলৌকিকভাবে’ ঘরবাড়িতে ধরছে আগুন, আতঙ্কে গ্রামবাসী

দুবাইয়ে ওমান প্রবাসীর হাতে বাংলাদেশি যুবক খুন

ঢাবিতে ফজলুর রহমানের কুশপুত্তলিকা দাহ

ফজলুর রহমানকে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিল বিএনপি

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল / ইন্টার্ন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. আল আমিন, সাধারণ সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত

রাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু

১০

উপদেষ্টা আসিফের নামে ভুয়া ছবি প্রচার

১১

নিজের চুল থেকে তৈরি টুথপেস্ট সুরক্ষা দেবে দাঁতকে : গবেষণা

১২

খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে ফিরোজায় পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী

১৩

নখসহ মানুষের আঙুল পাওয়া গেল চিকেন রোলে, অতঃপর...

১৪

সাড়ে ৩১ কেজি ওজনের কষ্টি পাথরের মূর্তিসহ আটক ২

১৫

স্পাইডারম্যান সেজে মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন যুবক, বড় জরিমানা করল পুলিশ

১৬

বাড়ি ফিরেছেন ফারুকী, তিশা লিখলেন আলহামদুলিল্লাহ

১৭

শোকজের খবরে যা বললেন ফজলুর রহমান

১৮

বিএনপির এক নেতাকে সব পদ থেকে বহিষ্কার

১৯

হাতাহাতির ঘটনায় ইসিতে এনসিপির অভিযোগ

২০
X