জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) জিমনেসিয়ামে বাস্কেটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করার মতো কোর্ট নেই। তবে অনুশীলনের জন্য যে কোর্ট রয়েছে তার রঙ উঠে যাওয়ায় লাইনগুলো বোঝা যায় না। বৃষ্টি হলেই জিমনেসিয়ামের ছাদ থেকে পানি পড়ে। একমাত্র ব্যায়ামাগারেরও শোচনীয় অবস্থা। খেলোয়াড়রা পান না তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধা। এসব সমস্যাও বিশ্ববিদ্যালয় বাস্কেটবল দলের সাফল্যের পথে কাঁটা হয়ে উঠতে পারেনি। বছরের পর বছর সাফল্য নিয়ে আসছে বাস্কেটবল দলটি।
গত ১০-১৩ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় বাস্কেটবল প্রতিযোগিতা ২০২৪ এ ব্রোঞ্জ পদক জয় করেছে জাবি বাস্কেটবল দল। এর আগে ২০১৯ সালে ‘বঙ্গবন্ধু ইন্টার-ইউনিভার্সিটি স্পোর্টস চ্যাম্পিয়নশিপ’ এ স্বর্ণ জয়ের গৌরব অর্জন করে জাবি বাস্কেটবল দল। একই বছর আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় বাস্কেটবল প্রতিযোগিতায় রানারআপ, ‘বঙ্গবন্ধু ইন্টার-ইউনিভার্সিটি স্পোর্টস চ্যাম্পিয়নশিপ-২০২২’ এ রানারআপ হয় তারা।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেকারিং বাজেট হিসেবে বার্ষিক মোট ১৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। যার মধ্যে প্রায় ৬০ হাজার টাকা বাস্কেটবলের জন্য বরাদ্দ। আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতায় সাফল্য পাওয়া বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটের তুলনায় যা বেশ অপ্রতুল। ফলে প্রতিযোগিতা চলাকালে খেলোয়াড়দের মানসম্মত ক্রীড়াসামগ্রী প্রদান করা সম্ভব হয় না। আবার দলের চাহিদা অনুযায়ী খেলোয়াড় কোটায় পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয় না। যারা ভর্তি হন তাদেরও নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার বাধ্যবাধকতা থাকায় অনুশীলনে অতিরিক্ত সময় দিতে পারেন না। ফলে খেলোয়াড়রা অধিক সুযোগ-সুবিধার আশায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে।
বাস্কেটবল দলের ফরোয়ার্ড এবং দর্শন বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী শাহানুর রহমান সজিব বলেন, দলের সাফল্যের পেছনে আমাদের কোচ-ম্যানেজারের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। তবে অবকাঠামোগত দুর্বলতা থাকায় আমাদের পক্ষে নিয়মিত অনুশীলন করা সম্ভব হয় না। ব্যায়ামের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিও নেই। এ ছাড়া বিভাগ থেকে খেলোয়াড়দের বিশেষ কোনো সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয় না। অনুশীলনের কারণে নিয়মিত ক্লাসে যেতে না পারলে উপস্থিতির নম্বর কাটা হয়। যারা ঢাকার বিভিন্ন ক্লাবে অনুশীলন করে তাদের উপস্থিতি নম্বর ছাড়াই পরীক্ষায় বসতে হয়। এভাবে তো পাস করাই কঠিন হয়ে যায়।’
দলের কোচ এবং শারীরিক শিক্ষা বিভাগের উপপরিচালক মো. আজমল আমিন টুটুল বলেন, বাস্কেটবল দল ধারাবাহিকভাবে সাফল্য পেয়ে আসছে। তবে আমাদের কোর্টের অবস্থা বেশ শোচনীয়। বৃষ্টির পানি জমে থাকে। সেভাবে সংস্কারও করা হয়নি। এ ছাড়া বিকেএসপি কোটার শর্ত থাকায় আমরা বাইরের ভালো প্লেয়ার ভর্তি করাতে পারি না। এসব বিষয় ভালোভাবে বিবেচনা করা জরুরি। এ ছাড়া খেলাধুলার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম বৃদ্ধিতে অবদান রাখা শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পুরস্কৃত করা গেলে খেলোয়াড়রা আরও বেশি অনুপ্রাণিত হবে।
শারীরিক শিক্ষা বিভাগের পরিচালক বেগম নাছরীন বলেন, বিশ্বদ্যিালয়ের বর্তমান জিমনেসিয়াম একটি পরিত্যক্ত ভবন। আন্তঃবিভাগ প্রতিযোগিতার সময় শুধু কোর্ট রং করা হয়। আর কোনো সংস্কার করা হয় না। আর ব্যায়ামাগারের যন্ত্রপাতির বিষয়টি দ্রুতই সমাধান হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন স্পোর্টস কমপ্লেক্সের কাজ চলছে। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে সেটি হস্তান্তর করা হলে অবকাঠামোগত সমস্যার সমাধান পাওয়া যাবে। আর কোটায় খেলোয়াড় ভর্তির বিষয়টি নিয়ে পরীক্ষা কমিটির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সার্বিক বিষয়ে আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।
মন্তব্য করুন