অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে ধারণ করে সব পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙার এক লড়াই থেকে ১৯৮৯ সাল থেকে শুরু হয় চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রা। সামরিক সরকারের শৃঙ্খল ভেঙে করা এই আয়োজন জাতিসংঘের ইউনেস্কোর কল্যাণে বর্তমানে বাঙালি কৃষ্টি ও সংস্কৃতির অভিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে বিশ্বের বুকে। কিন্তু শুরু থেকেই অসাম্প্রদায়িক এ লড়াইয়ের বিরোধিতা করে এসেছে মৌলবাদী শক্তি।
বাঙালির এই ঐক্যবোধের চেতনাকে ধ্বংস করতে রমনার বটমূলে বোমা হামলাও চালানো হয়। ধর্মীয় বিভক্তি টেনে পহেলা বৈশাখের আয়োজনকে বিতর্কিত করার সেই লড়াইয়ে সঙ্গে দিচ্ছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের পক্ষে সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাওয়া শিক্ষার্থী শেখ আসিফ আহমেদ।
পহেলা বৈশাখের প্রতীকী আয়োজনে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে প্রত্যেককে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করার প্রেরণা থাকলেও বিষয়টিকে ধর্ম বিশ্বাস দিয়ে যাচাইয়ের চেষ্টা এবং নাস্তিকদের কুসংস্কারাচ্ছন্ন কার্যক্রম হিসেবে মনে করছেন বুয়েটের ১৯তম ব্যাচের এই শিক্ষার্থী।
সম্প্রতি পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লেখেন, নাস্তিকসমাজ না বিশ্বাস করে শুভ শক্তিতে, না বিশ্বাস করে অশুভ শক্তিতে, না বিশ্বাস করে মঙ্গল করার কেউ আছে, না বিশ্বাস করে অমঙ্গল করার কেউ আছে।
তিনি আরও লিখেছেন, তো তারা মঙ্গল শোভাযাত্রায় কার কাছেই মঙ্গল কামনা করতে যায় আর কোনো অশুভ শক্তিকেই তাড়াতে যায়? সারা বছর বিজ্ঞানমনস্কতার ঢেঁকুর তুলে নিজেরাই কুসংস্কারাচ্ছন্ন হয়ে ওঠে কোন যুক্তিতে?
বরাবরের মতই পহেলা বৈশাখকে কটাক্ষ করে এবারও ফেসবুক পোস্ট ছিল মৌলবাদীদের দ্বারা পরিচালিত বাঁশেরকেল্লা ফেসবুক পেজে।
বুয়েটে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন কার্যক্রমে হিযবুত তাহরীরের সমর্থন প্রদানের বিষয়টি নতুন নয়। বুয়েটে রাজনীতি বন্ধ ও তাদের এই মৌলবাদী-জিহাদি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে একাত্মতা প্রকাশের কথা জানিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ইমেইল করে এই জঙ্গিবাদী গোষ্ঠী।
অন্যদিকে ছাত্রলীগের সভাপতির রাতে বুয়েট ক্যাম্পাসে যাওয়ার ঘটনা নিয়ে সামাজিকমাধ্যম ফেসবুকে ভুল তথ্য ছড়িয়েছেন বলে দাবি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের। তিনি লিখেছেন, বুয়েটকে ছাত্রলীগের কমিটি দেওয়ার ভেন্যু হিসেবে ব্যবহার করাল। রাত ৩টায় ছাত্রলীগের ৫০ জনের অধিক বহিরাগত নেতাকর্মী গার্ডদের সঙ্গে জোরাজুরি করে প্রবেশ করল।
তবে তার বক্তব্যের কোনো ভিত্তি পাওয়া যায়নি গত কয়েক দিনেও। এমনকি সিসি ক্যামেরার ভিডিও থেকেও এমন তথ্যের সত্যতা মেলেনি।
এদিকে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি হবে না কি হবে না, এ বিষয়ে আদালতের নির্দেশনার ওপর বুয়েট কর্তৃপক্ষ আপিল করবেন বলে জানান। সেই সঙ্গে আইনি প্রক্রিয়া, আইনজীবী নিয়োগ ও প্রতিটি কার্যক্রমে বুয়েট শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের অনুরোধও জানান বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিসি সত্য প্রসাদ মজুমদার। সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষা ও একাডেমিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার কথাও জানান তিনি।
বুয়েটের শিক্ষক সমিতি এবং অ্যালামনাইয়ের পক্ষ থেকেও ক্লাস-পরীক্ষা নিয়মিত করার আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু বর্তমান ও সাবেক কিছু শিক্ষার্থী বুয়েটে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উসকে দেয়ার জন্য মিথ্যা তথ্য ও গুজব ছড়িয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ অনেকের।
মন্তব্য করুন