দিনাজপুরের বিরামপুর পৌর শহরের সোনাপাড়ার গোহাটের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ছোট যমুনা নদী। এলাকার মানুষের চলাচলের সুবিধার জন্য ৯ বছর আগে ওই নদীর ওপর কাঠের সেতু। কিন্তু এরপর আর সেতুটি সংস্কার করা হয়নি। এতে সেতুটি নড়বড়ে হয়ে গেছে। সেতুটির পাটাতনও নষ্ট হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ওই সেতু দিয়ে চলাচল করছেন ৩০ হাজার মানুষ।
বিরামপুর পৌর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালে প্রায় ১৬ লাখ টাকা খরচ করে ছোট যমুনা নদীর ওপর ওই সেতু নির্মাণ করা হয়। সেতুটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৩০ মিটার ও প্রস্থ প্রায় ২ মিটার। সেতুটি নির্মাণের ফলে ছোট যমুনা নদীর পশ্চিম পাড়ের প্রায় ১৫ হাজার মানুষের বিরামপুর পৌর শহরে যাতায়াতে অনেক সুবিধা হয়।
স্থানীয় সূত্র ও পৌর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিরামপুর পৌর মেয়র ছিলেন আজাদুল ইসলাম আজাদ। ২০১৫ সালে নদীর দুই পাড়ের মানুষের যাতায়াতের সুবিধার জন্য নিজস্ব অর্থায়নে পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে কাঠের সেতুটি নির্মাণ করেন তিনি। ২০১৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত লিয়াকত আলী সরকার দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে আককাস আলী পৌর মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সেতুর পাশের এলাকার কয়েক ব্যক্তি বলেন, নির্মাণের পর থেকে সেতুটির ওপর দিয়ে প্রতিদিন রিকশা, ভ্যান ও ইজিবাইক চলাচল করছে। এই সেতুর ওপর দিয়ে কয়েকশ’ মানুষও পারাপার হন। নির্মাণের দুই বছর পর সেতুর পাটাতন, কাঠ ও পেরেক নষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়া সেতুর লোহার খুঁটিগুলো মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে গেছে। একটি খালি ভ্যান উঠলেও সেতুটি দুলতে থাকে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সেতুর পূর্বপাশের পৌরসভার সোনাপাড়া আর পশ্চিমে রাজসিংহপুর মহল্লা। সেতুর কাঠের পাটাতন খুলে গেছে। কোনো কোনো কাঠের ওপরে লোহার পেরেক বের হয়ে আছে। আর এর ওপর দিয়েই মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেল নিয়ে মানুষ পারাপার হচ্ছেন। সেতুর পূর্বপাশের প্রায় শতাধিক কৃষকের জমি রয়েছে সেতুর পশ্চিম পাশে। নদীর পশ্চিম পাড় ঘেঁষে প্রায় ২০ জন কৃষক প্রায় ১০০ বিঘা জমিতে ঘাস আবাদ করেন। এসব জমি থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকার ঘাস ব্যবসায়ীরা জমি থেকে ঘাস কিনে নদীর পূর্ব পাশে শহরে নিয়ে যান। কিন্তু সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সেতু থেকে দক্ষিণে ঘাটপাড় এলাকার সড়ক সেতু হয়ে প্রায় তিন কিলোমিটার পথ ঘুরে শহরের বাজারে ঘাস নিয়ে যেতে হয়।
পৌর শহরের সারংগপুর এলাকার ভ্যানচালক মোস্তাফিজুর রহমান এ সেতু দিয়ে ভ্যানে করে নিয়মিত ঘাস বহন করেন। তিনি বলেন, আগে তো এই ব্রিজের ওপর দিয়ে ভ্যানে করে পাঁচ-ছয় মণ ঘাস পার করা যেত, এখন অবস্থা খারাপ হওয়ায় বেশি ঘাস নিয়ে উঠলে সেতুটি দুলতে থাকে। এ জন্য ভ্যানে ৩০ থেকে ৪০ কেজি করে ঘাস নিয়ে ব্রিজের পূর্ব পাশে রেখে আসি। এভাবে কম কম করে পার করে পরে ওপার থেকে সবগুলা একসঙ্গে নিয়ে বাজারে যাই। আবার কখনো ঘাটপাড় ব্রিজ ঘুরে শহরের বাজারে যাই।
হাতিডুবা গ্রামের জেসমিন বেগম বলেন, সেতুর পাটাতন ভেঙে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। পারাপারের সময় মনে হয় ভেঙে নিচে পড়ে যাবো। সেতুটি দ্রুত সংস্কার করা দরকার।
পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোজাফফর রহমান বলেন, আজাদ ভাই মেয়র থাকাকালে ছোট যমুনা নদীর ওপর নিজস্ব অর্থায়নে ওই বেইলি সেতু তৈরি করেছিলেন। তিনি যেটি করেছিলেন সেটি এলাকার মানুষের জন্য যথেষ্ট ভালো উদ্যোগ ছিল। ওনার পরে এক মেয়র গেছেন, এখন আরেক মেয়র আছেন। যেহেতু এখানে এখন বড় সেতু হচ্ছে না সে জন্য এই সেতুটি বর্তমান মেয়র ভালো করে মেরামত করতে পারতেন। কিন্তু ওই রকম উদ্যোগ তো দেখছি না।
বিরামপুর পৌর মেয়র আককাস আলী কালবেলাকে বলেন, ওই স্থানে মানুষের চলাচলে বড় সেতু প্রয়োজন। তাই ওই সেতুর কাছেই একটি বড় সেতু নির্মাণের চেষ্টা করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন