কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:১৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বৈশাখী সংস্কৃতি- বিরোধ কোথায়? 

মঙ্গল শোভাযাত্রা। পুরোনো ছবি
মঙ্গল শোভাযাত্রা। পুরোনো ছবি

ছোটবেলায় বাপ-চাচাদের প্রায়ই পান্তা ভাত খেতে দেখেছি। আমিও খেয়েছি। সেই সময়ে পান্তা ভাত ছিল অধিকাংশ কৃষক-শ্রমিকের সকালের নাস্তা। তবে পান্তা ভাত ইলিশ মাছ নয়, বরং গুড়, চিনি, কলা, ডিমভাজি বা তরি-তরকারি, এমনকি কেবল লবণ-মরিচ দিয়ে খাওয়া হতো।

বৈশাখে সারা দেশে বিভিন্ন এলাকায় বৈশাখী মেলা আয়োজিত হতো, যেখানে জিলাপি, মুড়ি, বাতাসা, মিষ্টি, পিঠা, পায়েসসহ বিভিন্ন খাবার-দাবার বিক্রি হতো। মাটির তৈরি পুতুল, হাঁড়ি-পাতিল, কাগজের ঘুড়ি, বেতের বাঁশি, বিভিন্ন কারুকাজ ও আসবাবপত্র প্রদর্শিত হতো। ছোট বাচ্চাদের বিনোদনের জন্য চরকির ব্যবস্থা থাকত। বৈশাখ মাসের শুরুতে, ব্যবসায়ী ও দোকানদাররা তাদের পাওনা আদায়ের জন্য ‘হালখাতা’ আয়োজন করতেন। এসব কার্যক্রম ধর্মীয় রীতিনীতির সঙ্গে কোনো সংঘাত সৃষ্টি করত না।

কিছু মেলায় নাচ-গানের পাশাপাশি জুয়া খেলার ব্যবস্থা থাকত, ইসলাম যা সমর্থন করে না। এসব কারণে, আলেম সমাজ মুসলমানদের বিশেষ করে তাদের সন্তান-সন্ততিকে মেলায় যাওয়ার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করতেন। পরে স্থানীয় আলেমদের প্রচণ্ড প্রতিবাদের মুখে অনেক স্থানে জুয়া খেলা বন্ধ হয়ে যায়।

নব্বইয়ের দশকে রমনা বটমূলে বৈশাখী সংস্কৃতিতে পান্তা ভাতে ইলিশের সংযোজন এবং আনন্দ শোভাযাত্রা পরিবর্তে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রার’ প্রবর্তন ঘটে। যদিও কিছু ইসলামিক স্কলার মঙ্গল শোভাযাত্রা ও এতে প্রদর্শিত প্রতিমা, হুতোম প্যাঁচায় মুখোশ ব্যবহারের বিরোধিতা করছেন, কারণ তা তাদের মতে মুসলমানদের আকিদা বিশ্বাসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। প্রশ্ন উঠেছে, মঙ্গল শোভাযাত্রা, পান্তা-ইলিশ, হুতোম প্যাঁচায় মুখোশ ধারন, উল্কি আঁকা ইত্যাদি বাঙালি সংস্কৃতির ঐতিহ্যগত উপাদান কি না! আর ইসলামিক স্কলাররা এসব উপাদানের মধ্যে ইসলামী সংস্কৃতির সংঘাত খুঁজে পান। অনেকেই মনে করেন, পহেলা বৈশাখ উদযাপন কোনো বিশেষ ধর্মের অনুষ্ঠান নয়। অন্যদিকে এটি কোনো ধর্ম বিশ্বাসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়া উচিত নয়।

ভারতের পশ্চিমবাংলার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা তাদের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ধর্মবিশ্বাসের ভিত্তিতে সাংস্কৃতিক চর্চা করবে- এটাই স্বাভাবিক। তবে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ভিত্তিতে বাংলাদেশি বাঙালিদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক চর্চা- এখন সময়ের দাবি। নচেৎ বৈশাখী আয়োজন কখনোই সার্বজনীন হবে না। আমরা যদি আমাদের ঐতিহ্যগত বৈশাখী সংস্কৃতিতে ফিরে যাই, তাহলে দল-মত, ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে বাংলা বর্ষবরণকে গ্রহণযোগ্য ও আনন্দময় করতে পারব বলে মনে হয়। এদেশের বৈশাখী সংস্কৃতির বিশ্লেষণে দেখা যায়, আমাদের ঐতিহ্য পান্তা ভাতের সংস্কৃতি, বিশেষ পোশাক পরিধান,‌ মেলার আয়োজন, বর্ষবরণে সংগীতানুষ্ঠান, ব্যবসায়িক হালখাতা ও আতিথেয়তা। তাই নববর্ষ পালিত হোক আমাদের ঐতিহ্য ও নিজস্ব সংস্কৃতির চর্চায়, যা সম্প্রীতি ও শান্তি বয়ে আনবে।

সবাইকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা।

লেখক ড. ফরিদ আহমদ সোবহানী প্রফেসর, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ সোসাইটি ফর প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি একাডেমিক্স

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মালিক বাড়িতে নেই, গরু বিক্রি করে লাপাত্তা কর্মচারী

শয়তানের নিশ্বাস ছড়িয়ে গৃহবধূর সর্বস্ব লুট

যুদ্ধবিরতি নিয়ে ট্রাম্প / দরকষাকষি চলছে, আরও সময় লাগবে

সকালে ঘুম থেকেই উঠেই কি মোবাইল ফোন ঘাঁটেন, হতে পারে যেসব বিপদ

সাগরে মিলল ১২ কোটি টাকার গুপ্তধন

দেশে কত দামে স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে আজ

বিশ্ব শিশু দিবস আজ 

এনসিপি শাপলা প্রতীক নিয়েই নির্বাচনে অংশ নেবে : সারজিস 

ঢাকার তাপমাত্রা নিয়ে সুখবর দিল আবহাওয়া অফিস

গাজা যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে ইউরোপজুড়ে লাখো মানুষের বিক্ষোভ

১০

রাজধানীতে আজ কোথায় কী

১১

ঘুম থেকে ওঠার পরই কি সারা শরীরে ব্যথা হয়, ভয়াবহ রোগের লক্ষণ নয় তো?

১২

আকিজ গ্রুপে চাকরি, পাবেন গ্র্যাচুইটিও

১৩

ট্রাফিক জরিমানার নামে ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে প্রতারণা, ডিএমপির সতর্কতা

১৪

আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটালেন নদীপাড়ের মানুষ

১৫

টিভিতে আজকের যত যত খেলা

১৬

সোমবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

১৭

তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে, ডিমলার বন্যা রক্ষা বাঁধ ঝুঁকিতে

১৮

৬ অক্টোবর : আজকের নামাজের সময়সূচি

১৯

তিস্তার পানির তোড়ে ভেঙে যেতে পারে ফ্লাইড বাইপাস সড়কটি

২০
X