দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির প্রতিবাদে ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক’ প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দিয়েছেন মো. নূরুল হুদা নামে একজন আইনজীবী। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে কৃতিত্বপূর্ণ ফল নিয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন।
শনিবার (১৩ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের মওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দেন।
নূরুল হুদা লালমনিরহাট জেলার মৃত আহর উদ্দীনের ছেলে। তিনি জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ভর্তি হন। এলএলবিতে (সম্মান) সিজিপিএ-৩.৬৫৪ এবং এলএলএমে ৩.৬০৭ অর্জন করেন। এলএলবি পরীক্ষার ফলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদে প্রথম স্থান অর্জন করায় ২০১৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয় স্বর্ণপদক এবং ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক পান। বর্তমানে তিনি সুপ্রিম কোর্টে আইন পেশায় নিয়োজিত।
২০১৮ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর আবেদন করেন জানিয়ে নূরুল হুদা বলেন, ‘নিয়োগ বোর্ড বসার আগে বোর্ডের অন্যতম সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপ-উপাচার্য চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়া আমার স্ত্রীকে অবৈধ আর্থিক লেনদেনের প্রস্তাব দেন। তার ভাগনে ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক গাজী তৌহিদুর রহমান কৌশলে আমার কাছ থেকে বিভিন্ন অনৈতিক সুবিধা নেন। নিয়োগ বোর্ডের আরেক সদস্য ও আইন বিভাগের তৎকালীন সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল হান্নান আমার থেকে দুই লাখ টাকা ধার নেন। বিষয়গুলো নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য আব্দুস সোবাহানকে জানানো হলেও তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি। প্রশ্নবিদ্ধ ও সুবিধাভোগী সদস্যদের নিয়ে গঠিত নিয়োগ বোর্ডের সুপারিশে তিনজনকে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়, যাদের সবার ফল আমার চেয়ে কম।’
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তদন্ত কমিটি নিয়োগ বোর্ডকে অবৈধ ঘোষণা দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গঠিত ইউজিসির তদন্ত কমিটির সামনে ২০২০ সালের ১৭-১৮ সেপ্টেম্বর উপস্থিত হয়ে আমি ও আমার স্ত্রী শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্য এবং বিভিন্ন অনিয়মের তথ্য-প্রমাণ তুলে ধরি। ইউজিসির তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ১ ও ২নং পর্যবেক্ষণে শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্য ও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে জানানো হয়।’
নূরুল হুদা আরও বলেন, ‘ইউজিসির তদন্ত প্রতিবেদনে আইন বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডকে অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি ২০১৭ সালের শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা অনুযায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত উপাচার্য আব্দুস সোবাহানের মেয়ে ও জামাতাসহ ৩৪ জন শিক্ষকের নিয়োগ বাতিলের সুপারিশ করে।
শুধু রাজশাহী নয়, দেশের বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০২৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অন্তত ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেন, স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে ইউজিসি প্রায় ১৪টির তদন্ত প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত দোষী ব্যক্তিদের কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।’
মন্তব্য করুন