কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৭:২৮ পিএম
আপডেট : ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮:১৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

সচেতনতাই পারে বিরল ‘এসএমএ’ রোগ প্রতিরোধ করতে

কিউর এসএমএ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে র‍্যালির আয়োজন করা হয়। ছবি : সংগৃহীত
কিউর এসএমএ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে র‍্যালির আয়োজন করা হয়। ছবি : সংগৃহীত

স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি (এসএমএ) একটি দুরারোগ্য বিরল রোগ। পেশির সঞ্চালনকে নিয়ন্ত্রণ করে যে মোটর নিউরোন, তা নষ্ট হওয়াই জিনঘটিত এই বিরল রোগের কারণ। রোগের তীব্রতা অনুযায়ী, টাইপ ওয়ান থেকে টাইপ ফোর পর্যন্ত হয় এসএমএ। এর ওষুধ বাজারে এলেও তা সাধারণের কেনা সাধ্যাতীত। পৃথিবীর অনেক দেশের মতো আমাদের দেশেও এই রোগে আক্রান্ত রোগী রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) কিউর এসএমএ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আয়োজিত র‍্যালি এবং মানববন্ধনে বক্তারা এসব কথা বলেন। র‌্যালিটি দোয়েল চত্বর থেকে শুরু হয়ে আবদুল গণি রোড হয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এসে শেষ হয়।

তারা বলেন, সচেতনতার অভাবে এই রোগে আক্রান্তদের একটি বড় অংশ টেস্ট এবং চিকিৎসায় আওতায় আসছে না। ফলে চিকিৎসার অভাবেই দেশে অসংখ্য শিশু এই রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারাচ্ছে।

কিউর এসএমএ বাংলাদেশ জানায়, এসএমএর লক্ষণগুলো বিকাশের আগে প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করা হলে পরবর্তীতে চিকিৎসার ভালো ফল পেতে তা সহায়ক হয়। একটি নবজাতকের স্কিনিংয়ের সাহায্যে প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করা যেতে পারে। ওষুধের পাশাপাশি থেরাপিসহ আনুষঙ্গিক সেবার মাধ্যমে একজন আক্রান্ত শিশুকে স্বাভাবিক জীবন দেওয়া যায়। এমনকি গর্ভাবস্থায় এমনিওটিক ফ্লুইড পরীক্ষা করে অনাগত শিশুটি আক্রান্ত কি না জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। তাই সচেতনতাই পারে এই রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে।

সংগঠনটি বলে, এসএমএ রোগটি বাবা-মায়ের জিনগত সমস্যার কারণে হয়। যদি কোনো দম্পতি এসএমএ ক্যারিয়ার হয় বা এসএমএ রোগ হওয়ার জন্য দায়ী জিন বহনকারী হয়, তাদের বাচ্চার ২৫ শতাংশ আশঙ্কা থাকে এসএমএ রোগ হওয়ার। ২৫ শতাংশ সম্ভাবনা থাকে সুস্থ বাচ্চা হওয়ার, আর ৫০ শতাংশ আশঙ্কা থাকে, সুস্থ বাচ্চা হলেও এসএমএ ক্যারিয়ার হওয়ার।

জানা যায়, দেশে এখন পর্যন্ত চিহ্নিত রোগী ১৬৫ জন। উন্নত বিশ্বে প্রতি ১০ হাজার জনে একজন এসএমএ আক্রান্ত রোগী রয়েছে বলে ধরণা করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে আত্মীয়তার মধ্যে বিয়ে বেশি হয়। তাই এই সংখ্যা এ অঞ্চলে বেশি হওয়ার আশঙ্কা বেশি।

কারণ, এই রোগ সাধারণত জিনগত সমস্যার কারণে হয়। আর এই জিনগত সমস্যা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়তার বিয়ের হলে সেসব পুরুষ-মহিলার থেকে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। যার অন্যতম কারণ ধরা হয় আত্মীয়দের মধ্যে বিয়ে হওয়া। সে হিসেবে আশঙ্কা করা হচ্ছে, বাংলাদেশে এই রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। কিন্তু টেস্ট করার সুযোগ কম থাকায় এটি নির্ণয় দুরূহ বিষয় হয়ে পড়েছে। যদি এসএমএ টেস্ট সহজ ও কম খরচে করা সম্ভব হতো তাহলে দেখা যেত, বাংলাদেশে মহামারি আকারে এটি ছড়িয়ে আছে।

এসএমএ রোগের টেস্ট বাংলাদেশে করা যায় না। ভারতে এই পরীক্ষা করা হলেও খুব ব্যয়বহুল। ফলে এই রোগের লক্ষণ দেখেই চিকিৎসা করেন ডাক্তাররা। এ ছাড়া, প্রায় কাছাকাছি লক্ষণ দেখা যাওয়া অন্যান্য রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এসব কারণে এসএমএ-তে বাংলাদেশে মৃত্যুহার পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি।

এসএমএ রোগের থেরাপিসহ অন্যান্য চিকিৎসাসেবার জন্য ডেডিকেটেড কোনো হাসপাতাল নেই। এমনকি, কোনো এসএমএ ক্লিনিকও এখনও গড়ে ওঠেনি। যেখানে নিয়মিত এবং ঝামেলা ছাড়া রোগীরা পরামর্শ নিতে পারেন।

এই রোগের ইনজেকশনের দাম প্রায় ২২ কোটি টাকা। এ ছাড়া দেশে একমাত্র অনুমোদিত রোশ ফার্মার ওষুধ রিজডিপ্লাম। এর প্রতিটি ফাইলের দাম প্রায় ৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা।

আজ ২৯ ফেব্রুয়ারি বিরল ব্যাধি দিবস বা রেয়ার ডিজিস ডে। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিনটি বিরল রোগের জন্য সচেতনতা বাড়াতে এবং বিরল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের জন্য চিকিৎসা এবং চিকিৎসা প্রতিনিধিদের প্রবেশাধিকার উন্নত করার জন্য পালন করা হয়। সে হিসেবে ২৯ ফেব্রুয়ারি বিরল ব্যাধি দিবস বা রেয়ার ডিজিস ডে হিসেবে পালিত হতে যাচ্ছে। ইউরোপীয় সংস্থা ২০০৮ সালে অজানা বা উপেক্ষিত অসুস্থতার জন্য সচেতনতা বাড়াতে দিবসটি প্রতিষ্ঠা করে।

মানববন্ধনে কিউর এসএমএ বাংলাদেশের দাবিসমূহ-

১. দেশে এসএমএ রোগ নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করা।

২. দেশের সকল সরকারি হাসপাতালে এসএমএ ডেডিকেটেড কর্ণার বা এসএমএ কর্ণার স্থাপন করা।

৩. দেশে এসএমএ রোগের প্রকৃত চিত্র জানার জন্য জাতীয়ভাবে জরিপের ব্যবস্থা করা।

৪. বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো সরকারিভাবে এসএমএ রোগীদের জন্য ওষুধের ব্যবস্থা করা।

৫. এসএমএ রোগ সর্ম্পকে জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য কর্মসূচি গ্রহণ।

৬. এসএমএ রোগের জন্য অনুমোদিত ওষুধকে ‘অত্যাবশ্যকীয় তালিকাভুক্ত’ করা।

৭. আক্রান্ত পরিবারগুলোর জন্য প্রয়োজন সাইকোলজিক্যাল সাপোর্টের ব্যবস্থা করা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইউটিউব দেখে পঞ্চগড়ে ভিনদেশি সুপারফুড কিনোয়া চাষ

শুরুর বিপর্যয় কাটিয়ে জিম্বাবুয়ের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ

প্রবাসে স্বামীদের জিম্মি করে দেশে স্ত্রীদের ধর্ষণ (ভিডিও)

স্নাতক পাসে একাধিক পদে চাকরি দেবে হুয়াওয়ে

চরম দুর্দিনে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বাঁশ মালী পরিবারের সদস্যরা

দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতি না দেওয়ায় স্ত্রীকে তালাক দিলেন সরকারি কর্মকর্তা

ছাত্রদলের নতুন কর্মসূচি

পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টে চাকরি, বয়সসীমা অনির্ধারিত

আ.লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন কখনোই সম্ভব নয়: রিজভী

৭০ শতাংশ পরিবেশ সাংবাদিক হামলা-হুমকির মুখে রিপোর্ট করেন : জাতিসংঘ

১০

ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে সৌদির কঠিন শর্তারোপ

১১

বন্ধুর হয়ে দিচ্ছিলেন প্রক্সি পরীক্ষা, অতঃপর...

১২

‘সানজিদার হাত ভাঙা, কান দিয়ে ঝরছিল রক্ত’

১৩

নোবিপ্রবিতে বি ইউনিটের গুচ্ছভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন

১৪

যে কারণে আবারও ধোনির সতীর্থ হতে চান মোস্তাফিজ

১৫

নিহত সেনার মায়ের সঙ্গেও মিথ্যাচার ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর

১৬

ছেলের কবরে বেড়া দিতে গিয়ে মারা গেলেন বাবা

১৭

‘শান্তির সংস্কৃতি’সংক্রান্ত বাংলাদেশের প্রস্তাব জাতিসংঘে গৃহীত

১৮

হল-ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণার মধ্যেই কুবিতে ভর্তি পরীক্ষা

১৯

জলবায়ু পরিবর্তন তহবিলের টাকা কোথায়, জিজ্ঞাসা আমিনুল হকের 

২০
*/ ?>
X