লিউকেমিয়া বা অস্থিমজ্জার ক্যানসার। এই রোগ সাধারণত শিশুদের মধ্যে দেখা যায়। দেশে প্রায় ১৮ লাখের মতো শিশু এ রোগে আক্রান্ত। লিউকেমিয়া চিকিৎসায় তেমন কোনো কার্যকর ওষুধ ছিল না। সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের গবেষণাভিত্তিক এফ.হফম্যান-লা রোশ ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি একটি ওষুধ আবিষ্কার করেছে, যেটা লিকিউমিয়া রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে ক্যানসারের আধুনিক চিকিৎসায় বাংলাদেশি শীর্ষ ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালসের সাথে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। এ লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠান দুটি সমঝোতা চুক্তি করেছে। এ চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের রোগীদের কাছে ক্যানসারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত উন্নতমানের ওষুধ সরবরাহ করবে রোশ। এতে করে ক্যানসার চিকিৎসা বৈশ্বিক মানে উন্নত হওয়ার পথে আরও এগিয়ে যাওয়ায় আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। রোববার (১২ নভেম্বর) রাতে রাজধানীর রেডিসন ব্লু হোটেল এ সমঝোতা স্বাক্ষরিত হয়।
এ সময় সুইজারল্যান্ডভিত্তিক রোশ ফার্মাসিউটিক্যালসের সেন্ট্রাল ইউরোপ, তুরস্ক ও ভারতীয় উপমহাদেশের আঞ্চলিক প্রধান আদ্রিয়ানো ট্রেভে বলেন, ওষুধ শিল্পে বাংলাদেশ যথেষ্ট সুনাম কুড়িয়েছে। দিন দিন আরও উন্নত হচ্ছে। আরও আধুনিকতা আনতে সহযোগিতা করতে চাই আমরা। এ চুক্তির ফলে নতুন অনেক সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাবে এবং বাংলাদেশের রোগীদের জন্য রোশের উন্নতমানের ইনোভেটিভ ওষুধ পাওয়ার পথ সহজতর হয়ে যাবে।
রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. নাসের শাহরিয়ার জাহেদী বলেন, সুইজারল্যান্ডের কোম্পানি এফ.হফম্যান-লা রোশ বিশ্বের অন্যতম গবেষণাভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান। ১২৫ বছর যাবত এই কোম্পানি শুধু নিজেদের গবেষণা ছাড়া কোনো ওষুধ মার্কেটিং করেনি। তারা বর্তমান পৃথিবীতে কিছু কিছু জটিল রোগের এমন কিছু ওষুধের আবিষ্কার করেছে, যা গোটা মানব সভ্যতাকে উপকৃত করেছে। বিশেষ করে ক্যানসার, কিডনি রোগ, কার্ডিয়াক ডিজিজের ক্ষেত্রে এবং সম্প্রতি চোখের রোগের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছে। আজকে আমরা কো-প্রমোশনের যে অনুষ্ঠানটি করলাম, সেটি লিকিউমিয়া রোগের একটি ওষুধের। এই রোগটি বিশেষ করে যারা ছোট বাচ্চা, তারাই আক্রান্ত হয়। এ রোগের ফলে তাদের ব্লাড সেলগুলো ভেঙে যায়, ফলে তাদের নানা ওষুধ দিতে হয়, ব্লাড ট্রান্সমিশন করতে হয়।
তিনি বলেন, আমাদের জানা মতে, প্রায় ১৮ লাখের মতো শিশু বাংলাদেশে আছে, আমার মনে হয় এই সংখ্যাটা আরও অনেক বেশি। এই রোগটার এমন কোনো ওষুধ ছিল না যা নিরাময় দিতে পারে। রুশ সম্প্রতি একটি ওষুধ আবিষ্কার করেছে, যেটা এই লিকিউমিয়া রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশি যেসব হেমাটোলজিস্ট আছেন, তাদের সাথে আমরা ওষুধটি নিয়ে আলোচনা করেছি। এতদিন রুশ এবং রেডিয়েন্ট দুটি কোম্পানি পার্টনারশিপ ছিল, তারা তাদের মতো প্রমোশন করত। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের মানুষকে যদি আরো ভালো সেবা দিতে হয়, তাহলে আমাদের কো-প্রমোশনের আওতায় আমরা একসাথে রোগীদের কাছে যাব এবং রোগীদের প্রতি আমাদের সেবার দায়িত্বটাকে ভাগ করে নেব। যাতে আমরা বাংলাদেশের মানুষকে আরও উপযুক্ত সেবার মাধ্যমে তাদের আমরা সুস্থ রাখতে পারি এবং সুস্থ করতে পারি।
এই ওষুধটির যদি আপনারা আন্তর্জাতিক মূল্য দেখেন, তাহলে আমাদের অনেকের পক্ষেই এটা কেনা সম্ভব নয়। আমাদের দেশটা হলো এমন যেখানে প্যারাসিটামল থেকে শুরু করে ক্যানসারের ওষুধ পর্যন্ত সবটাই নিজের পকেটের পয়সা দিয়ে কিনতে হয়। আমাদের কোনো হেলথ ইন্স্যুরেন্স নেই বা অন্য কোনো সহযোগিতা বলতে গেলে নেই। তা ছাড়া এই রোগটিতে (লিউকিমিয়া) যেহেতু ছোট বাচ্চারা আক্রান্ত হয়, তাই এটি আমাদের কাছে একটি মানবীয় বিষয়। আমরা সরকারের সাথে কথা বলেছি, সরকারও লিউকেমিয়ার জন্য কাজ করছে। আমরা সরকারকে বলেছি, এই ওষুধটা যদি সরকারিভাবে ওনাদের কাছ থেকে নিয়ে সাধারণ মানুষদের বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে দেওয়া হয়, তাহলে রুশ সরকারের জন্য অত্যন্ত ন্যূনতম মূল্যে এটি সরবরাহ করবে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন রুশ বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার মার্ক হীব ও রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও লেফটেন্যান্ট জেনারেল সিনা ইবন জামালি (অব.)।
মন্তব্য করুন