ঘুম থেকে উঠে হঠাৎ দেখতে বা জানতে পারলেন আপনার কোনো একজন প্রিয় মানুষ আর বেঁচে নেই। মনে মনে ভাবছেন সুস্থ একজন মানুষের হঠাৎ কি হল! তবে কোনোভাবেই কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না! আজকের আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার যুগে আমরা অনেক রোগের চিকিৎসা করতে পারছি। তবুও অনেক মানুষ হঠাৎ মারা যাচ্ছেন, যাদের আগে তেমন কোনো অসুস্থতাই হয়তো ছিল না। এই ধরনের মৃত্যু আমাদের অবাক করে এবং খুবই দুঃখজনক। বিবিসির প্রকাশিত এক প্রতিবদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
তাহলে, কেন এমন হয়? কী কারণে একজন মানুষ হঠাৎ করে মারা যেতে পারেন? চলুন আজ জেনে নেই কিছু শারীরিক সমস্যা সম্পর্কে, যার ফলে হঠাৎ মারা যেতে পারেন যেকোনো সুস্থ মানুষও।
১. হৃদ্যন্ত্র হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়া : হঠাৎ মৃত্যুর সবচেয়ে বড় কারণ হলো হৃদ্যন্ত্র হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়া। একে সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বলা হয়। এতে হঠাৎ করে হৃদপিণ্ডের হৃৎস্পন্দন থেমে যায়। এটি খুব দ্রুত ঘটে এবং রোগী কয়েক মিনিটের মধ্যেই মারা যেতে পারেন।
অনেক সময় তরুণ ও সুস্থ মানুষ, এমনকি ক্রীড়াবিদরাও এ সমস্যা থেকে মারা যান। কারণ, তাদের হৃদয়ে জন্মগত কোনো সমস্যা থাকতে পারে যা আগে ধরা হয়তো পড়েনি।
২. রক্ত জমাট বেঁধে ফুসফুসে যাওয়া : শরীরে কোনোভাবে রক্তে জমাট বাঁধে সেই জমাটটি যদি শরীরের অন্য কোথাও থেকে উঠে এসে ফুসফুসে আটকে যায়, তাহলে তা খুবই বিপজ্জনক হতে পারে। একে বলে পালমোনারি এম্বোলিজম। এতে শ্বাস বন্ধ হয়ে যেতে পারে এবং মানুষ হঠাৎ মারা যেতে পারেন।
এই সমস্যা বেশি দেখা যায় যারা দীর্ঘ সময় বসে থাকেন বা সম্প্রতি কোনো অপারেশন করিয়েছেন এমন মানুষদের মাঝে।
৩. স্ট্রোক : স্ট্রোক সাধারণত মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বন্ধ বা রক্তনালির ফেটে যাওয়ার কারণে হয়ে থাকে। এটি মস্তিষ্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং তাৎক্ষণিক মৃত্যু ঘটাতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা জন্মগত রক্তনালির সমস্যা থাকলে এই ঝুঁকি বেশি থাকে।
৪. রক্তনালির ফেটে যাওয়া : অ্যানিউরিজম হলো শরীরের কোনো রক্তনালি ধীরে ধীরে ফুলে যাওয়া। এটি হঠাৎ ফেটে গেলে শরীরে ভেতরে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয় এবং মানুষ দ্রুত মারা যেতে পারেন। এটি বেশিরভাগ সময় আগে থেকে ধরা পড়ে না।
৫. মৃগী ও হঠাৎ মৃত্যু : যাদের মৃগী রোগ আছে, তাদের ক্ষেত্রে হঠাৎ মৃত্যুর একটা বিরল ঘটনা ঘটতে পারে। একে মৃগী রোগে হঠাৎ মৃত্যু বলে। এটি সাধারণত ঘুমের মধ্যে ঘটে এবং চিকিৎসকরা এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত নন কেন এটা হয়। তবে নিয়মিত চিকিৎসা নিলে এ সমস্যার ঝুঁকি কমানো যায়।
৬. ওষুধের প্রতিক্রিয়া বা ওভারডোজ : কিছু মানুষ ভুলভাবে বা অতিরিক্ত ওষুধ খেয়ে ফেললে মৃত্যু হতে পারে। এমনকি সাধারণ কিছু ওষুধেও কারো শরীরে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। আজকাল ফেন্টানিল নামের একটি মাদক অনেক মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
৭. অজানা রোগ বা অবহেলিত সমস্যা : অনেক মানুষ এমন কিছু রোগ নিয়ে বাঁচেন যা তারা জানেনই না। যেমন – ডায়াবেটিস, হার্টের সমস্যা বা ইনফেকশন। যখন এসব সমস্যা আচমকা মারাত্মক হয়ে ওঠে, তখন হঠাৎ মৃত্যু ঘটে যেতে পারে।
প্রতিরোধ করা কি সম্ভব?
সব হঠাৎ মৃত্যু রোধ করা সম্ভব না হলেও কিছু পদক্ষেপ নিলে ঝুঁকি কমানো যায়:
১। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান, বিশেষ করে পরিবারের কারো যদি হার্ট বা স্ট্রোকের ইতিহাস থাকে।
২। শরীরে কোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দিলে গুরুত্ব দিন, যেমন: বুকে ব্যথা, মাথা ঘোরা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি।
৩। ভালোভাবে ঘুমানো, ধূমপান না করা ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা।
৪। যদি জন্মগত কোনো রোগের ইতিহাস থাকে, তাহলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
হঠাৎ মৃত্যু আমাদের জীবনের অনিশ্চয়তার একটি বড় উদাহরণ। যদিও সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা যায় না, তবে সচেতনতা, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, এবং সুস্থ জীবনযাপন আমাদের অনেক দূর পর্যন্ত নিরাপদ রাখতে পারে।
মন্তব্য করুন