প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় বন্ধুত্ব গড়া সত্যিই কঠিন। এর একটা বড় কারণ হলো—এই বয়সে নতুন বন্ধু বানানোর সুযোগ বা পরিবেশ অনেক কমে যায়। ছোটবেলায় যেমন স্কুল, খেলাধুলা বা বিভিন্ন ক্লাসে গিয়ে বন্ধু তৈরি হতো, বড় হয়ে সেসব সুযোগ আর থাকে না।
করোনাভাইরাস মহামারির পর অনেক কিছুর মতো মানুষের ব্যবহার, অভ্যাস আর অগ্রাধিকারেও পরিবর্তন এসেছে। যার প্রভাব পড়েছে নতুন বন্ধু তৈরি করার উপায় ও জায়গাতেও।
২০২১ সালের একটি জরিপ অনুযায়ী, আমেরিকানরা আগের তুলনায় এখন কম বন্ধুত্ব করে। ঐতিহ্যগতভাবে যেসব জায়গায় মানুষ বন্ধু বানাত—যেমন: স্কুল, চার্চ বা পরিচিত কারো মাধ্যমে—সেগুলোর গুরুত্বও কমে যাচ্ছে। এখন বেশি মানুষ কর্মস্থলে নতুন বন্ধু পায়।
নতুন বন্ধু তৈরি করা আর সেই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা সবসময় সহজ কাজ না। অনেক সময় আমরা বুঝতেই পারি না বন্ধুত্ব আমাদের জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। মাঝে মাঝে দরকার পড়ে নিজের বন্ধুত্বগুলো পর্যালোচনা করার—আমাদের জীবনে বন্ধুর সংখ্যা কেমন, কাদের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করা যায়, আর কাদের থেকে দূরে থাকা উচিত।
বন্ধুত্ব কেন গুরুত্বপূর্ণ?
বন্ধুত্ব আমাদের সঙ্গে মনের মিল থাকা মানুষের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করতে সাহায্য করে। এতে আমরা একাকিত্ব বা বিচ্ছিন্নতার অনুভব থেকে রক্ষা পাই। বন্ধুদের সঙ্গ আমাদের জীবনে উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে চলতে সাহস দেয়।
বন্ধুরা আমাদের স্বপ্ন ও আগ্রহকে সাহস জোগায় এবং কঠিন সময়ে পরামর্শ বা মানসিক সহায়তা দেয়।
বন্ধুত্ব আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে এবং আমাদের জীবনে আনন্দ আনে। আমরা জীবনের বিভিন্ন সময়ে—স্কুল, কাজ বা অন্য কোনো জায়গায়—নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হই, এবং কেউ কেউ সারা জীবনের বন্ধু হয়ে যায়।
বন্ধুরা আমাদের মূল্যবোধ, কাজের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি আর জীবনের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সঙ্গে যুক্ত রাখে। খুব কাছের বন্ধুরা আমাদের মানসিক শক্তি জোগায়, বিশেষ করে যখন জীবন একটু একঘেয়ে বা কঠিন হয়ে ওঠে।
যখন আমরা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ি, তখন বন্ধুরা আমাদের সাহস দেয় নতুন কিছু শুরু করার। আবার যখন আমরা কাজ বা অন্য কোনো সমস্যায় ডুবে যাচ্ছি, তখন বন্ধুরাই আগে বুঝে যায়—এখন একটু বিরতি দরকার।
জীবনের নানা ধাপে বন্ধুরাই আমাদের পাশে থাকে। তারা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমরা কে, কী চাই, আর আমাদের জীবন কোন দিকে এগোনো উচিত। সত্যিকারের বন্ধুরা বদলের সময়েও আমাদের পাশে দাঁড়ায়, আমাদের সামর্থ্য মনে করিয়ে দেয়, স্ট্রেস কমায়, আর একাকিত্বের হাত থেকে বাঁচায়।
বন্ধুত্বের ১০টি উপকারিতা
শুধু গুরুত্বপূর্ণই না, বন্ধুত্বের অনেক বাস্তব উপকারিতাও আছে। নিচে বন্ধুত্বের ১০টি উপকারিতা দেওয়া হলো:
- আমাদের অন্তর্ভুক্তির অনুভূতি দেয়
- আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদা বাড়ায়
- উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদরোগের মতো স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি কমায়
- একাকিত্ব ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতা দূর করে
- নতুন কিছু শেখায় ও আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বাড়ায়
- প্রিয়জন হারালে দুঃখ মোকাবিলা করতে সাহায্য করে
- প্রেমের সম্পর্ক না টিকলে মানসিক সমর্থন দেয়
- আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে উৎসাহ দেয় এবং নতুন কিছু চেষ্টা করতে অনুপ্রাণিত করে
- জীবনে হাস্যরস ও আনন্দ নিয়ে আসে
- খারাপ অভ্যাস থেকে বের হয়ে আসতে সাহায্য করে
বন্ধুত্ব গড়ার পথে ৩টি সাধারণ বাধা ও সমাধান
বন্ধুত্ব গড়তে গেলে কিছু বাধাও আসে। জীবনের ব্যস্ততায় অনেক সময় এই সম্পর্কগুলো গড়তে বা ধরে রাখতে কষ্ট হয়।এখানে ৩টি সাধারণ সমস্যার কথা বলা হলো, আর সঙ্গে কিছু উপায়—যেগুলো দিয়ে আপনি এগুলো কাটিয়ে উঠতে পারেন:
১. যদি আপনি প্রায়ই ভুলে যান
যে কোনো মিটিং বা দেখা করার প্ল্যান কোথাও লিখে রাখেন—যেমন: ক্যালেন্ডারে, স্টিকি নোটে বা ফোনে। ভুলে যাওয়া স্বাভাবিক, কিন্তু বন্ধুদের সঙ্গে সময় না দিলে তো সম্পর্ক গড়ে উঠবে না, তাই না?
২. যদি আপনার অনেক কাজ থাকে
আপনি যখন বাজার করতে যান বা জিমে যান—তখন একা না গিয়ে বন্ধুকে সঙ্গে ডাকেন। একসঙ্গে কাজ করতেও পারেন বা বাড়ি থেকে কাজ করেও সময় কাটাতে পারেন। চাইলে বন্ধুর কাজের তালিকাও দেখে নিতে পারেন—একসঙ্গে কিছু শেষ করা যায় কি না।
৩. যদি প্রত্যাখ্যানের ভয় থাকে
যদি অতীতে কেউ আপনাকে আঘাত দিয়ে থাকে, তাহলে নতুন করে বন্ধুত্ব গড়তে ভয় পাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু প্রত্যাখ্যান বা ব্যর্থতা ভেবে সব বন্ধুত্বকে দূরে ঠেলে দেওয়া ঠিক না। বরং ভাবেন—সামাজিক সম্পর্ক কত উপকারী। চাইলে কাউন্সেলরের সঙ্গে কথা বলেও আপনি নতুন করে সাহস পেতে পারেন।
বন্ধুত্ব জীবনের এমন এক উপহার—যেটা যত্ন করে গড়তে হয়, কিন্তু একবার পেলে তা আমাদের জীবনকে সুন্দর করে তোলে।
সূত্র : বেটার আপ
মন্তব্য করুন