

শীতকালে ঠান্ডা আবহাওয়া, কুয়াশা আর দূষণের কারণে শরীর সহজেই দুর্বল হয়ে পড়ে। এ সময় সর্দি-কাশি, হজমের সমস্যা বা ক্লান্তি দেখা দেওয়া খুবই স্বাভাবিক। বাইরে থেকে যতই গরম কাপড় পরা হোক, শরীরকে ভেতর থেকে শক্তিশালী রাখাও জরুরি। আর সেই কাজে সহজ ও প্রাকৃতিক একটি খাবার হতে পারে গুড়।
শীতে গুড়ের ব্যবহার আমাদের দেশে নতুন নয়। পিঠা-পুলি থেকে শুরু করে নানা খাবারে গুড় ব্যবহৃত হয়। তবে শুধু স্বাদের জন্য নয়, গুড়ের রয়েছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যগুণ। শীতকালে নিয়মিত অল্প পরিমাণ গুড় খেলে শরীর নানা দিক থেকে উপকৃত হতে পারে।
শরীর উষ্ণ রাখতে সাহায্য করে
শীতে শরীর গরম রাখা বড় চ্যালেঞ্জ। গুড়ে প্রাকৃতিকভাবে শরীরের তাপ বাড়ানোর ক্ষমতা আছে। এটি শরীরের ভেতর থেকে উষ্ণতা তৈরি করে, ফলে ঠান্ডায় তুলনামূলক আরাম অনুভব হয়। সকালে গুড় দিয়ে হালকা শরবত পান করলে বা খাবারের পর অল্প গুড় খেলে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং ঠান্ডা কম লাগে।
হজম শক্তি বাড়ায়
খাবারের পর এক টুকরো গুড় খাওয়ার অভ্যাস অনেকেরই আছে। এতে হজম ভালো হয় এবং পেট ফাঁপা কমে। শীতে হজমের গতি ধীর হয়ে যায়, তখন গুড় হজম প্রক্রিয়াকে সক্রিয় করে। এটি মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছাও পূরণ করে এবং সঙ্গে শরীর পায় কিছু প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ।
রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
গুড়ে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, জিঙ্ক ও সেলেনিয়াম শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। শীতে সর্দি, কাশি ও মৌসুমি সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে। নিয়মিত অল্প গুড় খেলে এসব সমস্যা কিছুটা কমে। এছাড়া মাথাব্যথা ও ঠান্ডাজনিত অস্বস্তিও হালকা করতে পারে গুড়।
শ্বাসনালি পরিষ্কার রাখতে সহায়ক
শীতকালে অনেকেরই কাশি, বুক ভার লাগা বা শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। গুড় শ্বাসনালি পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত গুড় খেলে শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা কিছুটা কমে এবং ফুসফুসের কার্যকারিতা ভালো থাকে।
আয়রনের ভালো উৎস
গুড় প্রাকৃতিকভাবে আয়রনসমৃদ্ধ। এতে থাকা আয়রন শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে। যাদের আয়রনের ঘাটতি রয়েছে, তাদের জন্য গুড় উপকারী হতে পারে (তবে চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরি)।
প্রাকৃতিক শক্তি জোগায়
গুড় সাদা চিনির চেয়ে স্বাস্থ্যকর। এতে থাকা পুষ্টি উপাদান ধীরে ধীরে শক্তি দেয়, ফলে শরীর দীর্ঘ সময় কর্মক্ষম থাকে। সাদা চিনি দ্রুত শক্তি দিলেও পরে ক্লান্তি বাড়ায়, কিন্তু গুড় সে তুলনায় ভালো বিকল্প।
গুড়ও মিষ্টি জাতীয় খাবার, তাই পরিমিত খাওয়াই ভালো। সুস্থ মানুষ প্রতিদিন অল্প পরিমাণ গুড় সুষম খাদ্যের অংশ হিসেবে খেতে পারেন। যাদের ডায়াবেটিস আছে, তাদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া গুড় খাওয়া উচিত নয়। গুড়ের মান ও বিশুদ্ধতার ওপর নির্ভর করে পরিমাণ ভিন্ন হতে পারে।
শীতে গুড় খাওয়ার নানা সহজ উপায় আছে। চলুন জেনে নিই
- তিলের লাড্ডু বা নাড়ুতে
- ভাজা বাদামের সঙ্গে
- ডালিয়া বা পায়েসে
- চায়ের সঙ্গে চিনি বাদ দিয়ে গুড় ব্যবহার করে
- পিঠা-পুলি বা ঘরোয়া মিষ্টিতে
অল্প পরিমাণে নিয়মিত গুড় খেলে শীতকালে শরীর থাকবে উষ্ণ, শক্তিশালী ও সুস্থ।
সূত্র : এনডিটিভি
মন্তব্য করুন