বৈষম্যমুক্ত ৯ম পে-স্কেলসহ ৭ দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী দাবি আদায় ঐক্য পরিষদ। মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৫টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের অডিটরিয়ামে এক প্রতিনিধি সমাবেশে এসব দাবি করেন তারা।
এ সময় তারা স্থায়ী পে-কমিশন গঠন, টাইমস্কেল, সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহাল, বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি অব্যাহত রাখা, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারিদের মধ্যে সৃষ্ট পদবি এবং স্কেল বৈষম্য নিরসনের লক্ষে সচিবালয় এবং সচিবালয়ের বাহিরের সব কর্মচারীদের এক ও অভিন্ন নিয়োগবিধি প্রণয়নসহ ৭ দফা দাবি করেন।
প্রতিনিধি সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন নাগরিক ঐক্যর সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নূরুল হক নুর, গণসংগতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান।
সমাবেশে মো. মাহমুদুল হাসানের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ১১-২০ ফোরামের সমন্বয়ক ও সভাপতি মো. লুৎফর রহমান। মুখ্য সমন্বয়ক ওয়ারেছ আলীর সভাপতিত্বে লিখিত দাবি পাঠ করেন বাংলাদেশ তৃতীয় শ্রেণি সরকারি কর্মচারী সমিতির সমন্বয়ক ও মহাসচিব মো. ছালজার রহমান।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের ৭ দফা দাবিতে আজকের সমাবেশ অত্যান্ত যৌক্তিক। ২০১৫ সালের পে-স্কেল ছিল একটি বৈষম্যে ভরা পে-স্কেল। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনে আকাশ-পাতাল ব্যবধান। বর্তমান বাজারে এই বেতন-ভাতা দিয়ে কর্মচারীরা কোনোভাবেই চলতে পারেন না। আপনাদের দাবির সঙ্গে আমরা সম্পূর্ণ একমত। আপনাদের এই দাবি বাস্তাবায়নের জন্য আমরা সবাই মিলে সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাবো।
জুনায়েদ সাকি বলেন কর্মচারীদের পেট খালি রেখে দুর্নীতি না করার জন্য পরামর্শ দেওয়াটা হাস্যকর। তাদের বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী পর্যাপ্ত বেতন-ভাতা দিতে হবে।
ইলিয়াস খান বলেন বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ফসল হলো বর্তমান সরকার। এই সরকারের আমলে কর্মচারীদের বেতন ও পদবি বৈষম্যসহ সব বৈষম্য দূর করা হবে। এ জন্য দরকার হলে আমাকে যেখানে যেতে হয় আপনাদেরকে নিয়ে সেখানে যাবো, আমি চাই কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী নির্ধারণ করা হোক এবং সর্বনিম্ন বেতন কমপক্ষে ২৫ হাজার টাকা করা হোক।
সমাবেশে বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী দাবি আদায় ঐক্য পরিষদের ৭ দফা দাবি বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মো. ইউনূসের দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রজাতন্ত্রের ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারিদের বেতন ও পদবি বৈষম্য তুলে ধরা হয়।
লিখিত বক্তব্যে সমন্বয়ক মো. ছালজার রহমান বলেন, ‘আমাদের সংগঠনের ব্যানারে ২০১৯ সাল থেকে সংবাদ সম্মেলন, স্মারকলিপি প্রদান, মানববন্ধন, বিভাগীয় সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছি। সর্বশেষ ২০ আগস্ট জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ঘোষিত ৩০ আগস্ট শাহবাগ জাদুঘরের সামনে অবস্থান কর্মসূচির আহ্বান করা হয়েছিল। কিন্তু দেশের চলমান অবস্থা বিবেচনা এবং প্রধান উপদেষ্টার কর্মচারীদের দাবির বিষয়ে আশ্বাসের প্রেক্ষিতে প্রোগ্রাম স্থগিত করা হয়। বিগত সরকার বেতন-ভাতাদি সব আশাকে নিরাশায় পরিণত করে সরকার ৫শতাংশ বিশেষ সুবিধা প্রদান করে। সরকারের এ ঘোষণায় প্রজাতন্ত্রের ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারিরা চরমভাবে হতাশ ও ক্ষুদ্ধ। সরকারের এ ৫শতাংশ বিশেষ সুবিধা বর্তমান বাজার ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তাছাড়াও আমাদের সংগঠনের দাবি ছিল কর্মচারী অংগনে বৈষম্য দূর করা। কিন্তু তা না হয়ে প্রদেয় ৫শতাংশ বিশেষ সুবিধায় ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারিদের বৈষম্য আরও বৃদ্ধি হয়েছে। ১১-২০ গ্রেডের অধিকাংশ কর্মচারীদের মূল বেতন ২০ হাজার টাকার নীচে, তাদের আগামী ৪/৫ বছরের বিশেষ সুবিধা সর্বনিম্ন ১ হাজার) টাকার ঊর্ধ্বে উঠবে না।
অথচ ১-৯ম গ্রেডের কর্মচারীদের এ সুবিধা চক্রবৃদ্ধি হারে বৃদ্ধি পেতে থাকবে। আমরা এ ধরনের বিশেষ সুবিধা চাইনি। বর্ণিতকারণে বিগত সরকার কর্তৃক প্রদত্ত ৫ শতাংশ বিশেষ সুবিধা পুনঃবিবেচনা করে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা অনুযায়ী বর্তমান সময়ের মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তা মূল বেতনের সঙ্গে সংযোজন ও সব ভাতাদি যুগোপযোগী করার জন্য সবিনয়ে অনুরোধ জানান। একইসঙ্গে যথা শিগগিরই বৈষম্যমুক্ত ৯ম পে-স্কেল বাস্তবায়নেরও দাবি জানাচ্ছি।
সেমিনারে বক্তব্যে মুখ্য সমন্বয়ক ও সভাপতি বলেন, দ্বিতীয় বারের মতো ছাত্র-জনতার স্বাধীন দেশে এ রকম বৈষম্য আমরা দেখতে চাই না। দ্রব্যমূল্যেও লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি ও পরিবারের ভরণ-পোষণের ব্যয়ভার প্রাপ্ত বেতনের অর্থ দিয়ে মাসের ১৫ দিনও চলা সম্ভব হয় না। ৫ বছর পর পর পে-স্কেল প্রদানের প্রথা চালু থাকলেও ২০১৫ সালের ৮ম পে-স্কেল প্রদানের পর দীর্ঘ ৯ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে এ পর্যায়ে কর্মচারিদের ৯ম পে-স্কেলসহ ভাতাদির অসংগতি দূর করার জন্য প্রধান উপদেষ্টার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি। একই সঙ্গে অনতিবিলম্বে সব দপ্তর, অধিদপ্তরের কর্মচারীদের পদনাম সচিবালয়ের মতো পরিবর্তন করে বেতন ও পদবি বৈষম্য দুর করে পূর্বের মতো টাইম স্কেল, সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহালসহ এক ও অভিন্ন নিয়োগ বিধি বাস্তবায়ন করার জন্য প্রধান উপদেষ্টার কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, ১১ থেকে ২০ গ্রেডের বঞ্চিত লাখ লাখ কর্মচারীদের দাবির বিষয় বিবেচনা করার বক্তব্য প্রদান করায় প্রজাতন্ত্রের কর্মচারিদের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের নেকহায়াত ও সুস্থতা কামনা করছি।
তিনি আরও বলেন, অনতিবিলম্বে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের ন্যায্য দাবি বাস্তবায়ন করা না হলে বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারীদের দাবি আদায় ঐক্য পরিষদের ব্যানারে আন্দোলনের কর্মসূচি দেওয়া হবে। দাবি বাস্তবায়নের লক্ষে ওই কর্মসূচি পরবর্তীতে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানানো হবে।
মন্তব্য করুন