কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:০৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

সংবিধানের সবকিছু ফেলে না দিয়ে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংশোধন হতে পারে

আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা সংবিধান সংশোধন নিয়ে বিভিন্ন মতামত ব্যক্ত করেন। ছবি : সংগৃহীত
আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা সংবিধান সংশোধন নিয়ে বিভিন্ন মতামত ব্যক্ত করেন। ছবি : সংগৃহীত

ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হওয়ার পরে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধান সংশোধনে কমিশন গঠন করেছে। অনেকে আবার সংবিধান পুনর্লিখনের দাবি তুলেছেন।

কিন্তু এই সরকারের সংবিধান সংশোধনের ম্যান্ডেট আছে কি না, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলেছেন। কেউ কেউ বলছেন, সংবিধান পুনর্লিখন করা যাবে না, তা নয়; কিন্তু বিষয়টি কীভাবে করা হবে তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে।

বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস (ব্লাস্ট) ও বাঙলার পাঠশালা আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

আইনজীবী শরিফ আহমেদ ভুঁইয়া সংবিধান সংশোধন বা পুনর্লিখনের চেয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিকঠাক কাজ করছে কি না, তা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই সরকার নির্বাচিত নয়। সে কারণে তিনি মনে করেন, সংবিধান সংশোধন বা পুনর্লিখনের ম্যান্ডেট তাদের নেই। বড়জোর এই সরকার সেই প্রক্রিয়া শুরু করে দিতে পারে।

তবে কিছু বিষয়ে মানুষের মধ্যে ঐকমত্য আছে, যেমন নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার। পাঁচ বছর পরপর শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার পালাবদল নিশ্চিত করতে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা আছে। সেটা থাকলে গত ১৫ বছরে যত অপকর্ম হয়েছে, তার অন্তত ৬০ ভাগ কমে যেত।

তবে মৌলিক পরিবর্তন করতে হলে জনমত গঠন করতে হবে বলে মত দেন শরিফ ভুইয়া। সে জন্য তার পরামর্শ, সেদিকে না গিয়ে এই সরকারের উচিত, ফাংশনাল সংশোধনের মধ্যে সীমিত থাকা।

ব্যারিস্টার মুস্তাফিজুর রহমান খান বলেন, এই ছাত্র-জনতার আন্দোলনে কি সংবিধান সংশোধনের দাবি ছিল, যদি তা না থাকে, তাহলে এখন কেন এই উদ্যোগ।

এর আগে ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর সাহাবউদ্দিন আহমেদের সরকারের সময় এমন দাবি উঠেছিল; কিন্তু তখন তারা সেটা করেনি। তারপরও সংবিধান সংশোধন হতে পারে বলে মত দেন মুস্তাফিজুর রহমান।

তিনি বলেন, কী প্রক্রিয়ায় সংশোধন হবে, তা গুরুত্বপূর্ণ। সংবিধান সভার মাধ্যমে হতে পারে; আবার আলোচনার মাধ্যমে হতে পারে। কিন্তু আলোচনার মাধ্যমে হলে জামায়াতে ইসলামী ও হেফাজতে ইসলামের মতো দল তাতে অংশগ্রহণ করবে; এর মধ্য দিয়ে তারা মূল ধারায় চলে আসার সুযোগ পাবে। তিনি আরও বলেন, ১৩তম ও ১৫তম সংশোধনীর বিষয়ে মামলা চলছে। দেখা যাক, এর ফল কী হয়।

অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম বলেন, পরিস্থিতি এমন জায়গায় আছে যে শুধু সংশোধন করলে হবে না, পুনর্লিখনও করতে হবে। বিশেষ করে নির্বাহী বিভাগের কাঠামো বিবর্তনের পরামর্শ দেন তিনি। ১০৬ নম্বর ধারার মতো কিছু বিষয়ের স্পষ্টীকরণ দরকার। সেই সঙ্গে মনে রাখতে হবে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নির্বাহী বিভাগ দেবে, বিষয়টি এমন নয়; বরং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অন্তর্নিহিত।

আমাদের সমাজে অন্তত বিভাজিত। ফলে এখানে ঐকমত্য হওয়া খুবই কঠিন বলে মনে করেন সাইমি ওয়াদুদ। সংবিধানে কোনো আদর্শের আধিপত্য থাকা উচিত নয় বলে তার মত। সেটা হলে বিভাজনের পথ প্রশস্ত হয়। সংবিধানের বিষয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার সংবিধান তার কাছে আদর্শ। তাদের সংবিধান আন্তর্জাতিক আইনের চেয়েও বেশি মানবিক।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আইনজীবী সারা হোসেন। তিনি বলেন, আগের সবকিছু ফেলে দিতে হবে, এমন মনে করার কারণ নেই। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা এই দেশ ও সংবিধান পেয়েছি; তখনকার মানুষের কিছু চিন্তা ছিল, তার প্রতি সম্মান দেখাতে হবে। এসব কিছুই আমাদের ইতিহাস; গর্ব করার অনেক কিছুই আমাদের আছে।

কিছু কিছু অর্জন আমাদের আছে, তা ভূলুণ্ঠিত হতে দেওয়া যাবে না বলে মত দেন সারা হোসেন। তার অভিযোগ, ইদানীং অনেক জায়গায় নারীদের প্রতিনিধিত্ব দেখা যায় না, এটা গ্রহণযোগ্য নয়। নারী-পুরুষের সমানাধিকার আমাদের সংবিধানে প্রতিষ্ঠিত; সেখান থেকে আমরা পিছিয়ে আসতে পারি না।

সারা হোসেন বলেন, এখন আলোচনার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। কিন্তু এখন আমাদের অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে হবে, এই সময় ঠিক কী কী করতে হবে।

অনুষ্ঠানে বক্তারা সংবিধানের আরও অনেক বিষয়ে আলোচনা করেন। নির্বাচন নিয়েও আলোচনা হয়। আমিন আল রশিদ বলেন, নির্বচনের ফলাফল অনুপাতভিত্তিক হওয়া উচিত।

নাফিউল আলম বলেন, জনপ্রতিনিধিদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে সংবিধানের ৭০ নম্বর ধারা তুলে দেওয়া উচিত।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাঙলার পাঠশালা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা আহমেদ জাভেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইকরামুল হক, নাবিলা ফারহিন, ড. কাজী জাহেদ ইকবাল প্রমুখ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সরকারি চাল আত্মসাৎ, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার কারাদণ্ড

কালবেলায় সংবাদ প্রকাশ / অনুদানের গরু ফেরত পেলেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ২ সদস্য

রমনায় বোমা হামলা / দুজনের যাবজ্জীবন, ৯ জনের ১০ বছর কারাদণ্ড

টাকার অভাবে বিয়ে করছেন না সালমান খান

সংবাদ সম্মেলনে আইইবি কর্তৃপক্ষ / প্রকৌশলী শফিকুল ইসলামের মৃত্যু নিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে

বাংলাদেশ সিরিজের আগে নতুন কোচ পেল পাকিস্তান

বিপুল সরকারের ‘ভুলিবো কেমনে’ 

জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলীয় জোটের নিবন্ধন বাতিল চায় জুলাই ঐক্য 

ভারত থেকে পুশইন ব্যক্তিদের শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন

সন্ধ্যার মধ্যে ৮ অঞ্চলে ঝড়ের পূর্বাভাস

১০

আদালতে মমতাজ

১১

ববি উপাচার্যের অপসারণ দাবিতে অনশনে শিক্ষার্থীরা

১২

জুলাইয়ে গুলিবিদ্ধ এনামের চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন তারেক রহমান 

১৩

শেষ হলো এসএসসির লিখিত পরীক্ষা, ১৫ মে শুরু ব্যবহারিক

১৪

ক্লাব বিশ্বকাপে নিষিদ্ধ ১৫,০০০ আর্জেন্টাইন সমর্থক

১৫

কালবেলায় সংবাদ প্রকাশ / আখাউড়ায় ১৫টি টিকিটসহ দুই কালোবাজারি গ্রেপ্তার

১৬

রংপুরে বাসচাপায় একই পরিবারের ৩ জন নিহত

১৭

এসএসসি পরীক্ষায় অনুপস্থিতির কারণ জানতে তদন্তে কমিটি 

১৮

চাঁদার দাবিতে দলিল লেখকদের লাঞ্ছিতের অভিযোগ

১৯

সাভারে অবৈধ ফিশ ও পোলট্রি ফিড কারখানায় অভিযান, জরিমানা লাখ টাকা

২০
X