বাসস
প্রকাশ : ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:৫০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ফুসফুসে গুলি নিয়ে কাতরাচ্ছে রাশেদ, দরকার উন্নত চিকিৎসা

হাসপাতালের বিছানায় আহত রাশেদ। ছবি : সংগৃহীত
হাসপাতালের বিছানায় আহত রাশেদ। ছবি : সংগৃহীত

জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ফুসফুসে গুলি লেগে আহত হন রাশেদ।

পুরোপুরি সুস্থ না হয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে যাওয়ার পর আবার ব্যথা শুরু হয় রাশেদের। ফুসফুসে গুলি থাকায় কোনো কিছু করতে পারছেন না তিনি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা আবারও তাকে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজে নিয়ে যান। সেখানকার চিকিৎসকরাও জানান, ফুসফুস থেকে গুলি বের করা সম্ভব নয়। ফলে ঔষধপত্র দিয়ে রাশেদকে গ্রামে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। রাশেদের মূলত দরকার আরও উন্নত চিকিৎসা। কিন্তু অর্থের অভাবে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারছে না তার পরিবার। ফলে রাশেদ নিত্যদিন এক ভয়াবহ যন্ত্রণার ভেতর দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছয় ভাই-বোনের মধ্যে রাশেদের অবস্থান পঞ্চম। রাশেদের বড় ভাই জোবাইদ মিয়া জানান, শরীরে গুলি নিয়ে রাশেদ খুব কষ্ট করছে। এ সময় তিনি বলেন, ছাত্র ভাইদের ডাকে আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল রাশেদ। স্থানীয় ছাত্র ভাইয়েরা নিয়মিত খোঁজখবর নিচ্ছে তার। তবে ঢাকার ভাইয়েরা যদি খোঁজখবর নিয়ে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করে রাশেদের গুলিটি দ্রুত বের করে দিত তাহলে আমার ভাইটি বেঁচে যেত।

রাশেদের বাবা সোলাইমান মিয়া (৬৫) কোনো কাজকর্ম করতে পারেন না। স্থানীয় তাবলিগ জামাতের সঙ্গে ইসলামি দাওয়াতি কাজ করেন।

তিনি বলেন, দেশের জন্য লড়াই করতে গিয়ে আমার ছেলের আজ এই অবস্থা হয়েছে। তাকে সুস্থ করা দরকার। কিন্তু আমি কীভাবে কী করব, বুঝতে পারছি না।

রাশেদের মা মঙ্গল বেগম (৫৫) বলেন, বাবা আমরা অনেক কষ্ট করে চলি। তারপর রাশেদের এ অবস্থা। জানি না রাশেদের জীবনে কী হবে।

সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে রাশেদের গুলিটি দ্রুত বের করার জন্য তিনি জোর দাবি জানান।

এ দিকে পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় তার উন্নত চিকিৎসা করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে তার নিয়মিত খোঁজখবর নিচ্ছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া স্থানীয় শিক্ষার্থীরা। রাশেদের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। রাষ্ট্রীয়ভাবে রাশেদের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থার দাবি জানিয়ে শিক্ষার্থী আরিফুল জামান তপু বলেন, আমরা রাশেদকে হারাতে চাই না।

গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থী রাশেদ মিয়া বলেন, সহপাঠীদের সঙ্গে ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছি। গুলি লাগার পর আর কিছু মনে নেই। এখনো একটি গুলি বুকের মধ্যে রয়েছে। এতে অনেক কষ্ট পাচ্ছি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক একেএম মুরাদ জানান, রাশেদের ফুসফুসের মধ্যে একটি গুলি এখনো আটকে রয়েছে। আরও উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। না হলে আটকে থাকা গুলি থেকে ইনফেকশন হয়ে যেতে পারে।

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্র প্রতিনিধি বায়েজিদুর রহমান সিয়াম রাশেদের সুচিকিৎসার জন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার কাছে ইতোমধ্যে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে বলে জানান।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের দারুল কোরআন আল ইসলামিয়া মাদ্রাসার নাজারাত শাখার শিক্ষার্থী রাশেদ মিয়া। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে গত ৪ আগস্ট বুকে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। উদ্ধার করে প্রথমে জেলা সদর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা নিশ্চিত করেন, রাশেদের বুকে দুটি গুলি লেগেছে। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিলে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বুক থেকে বের করা হয় একটি গুলি। অন্যটি ফুসফুসে আটকে থাকায় বের করতে পারেননি ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) চিকিৎসকরা।

চিকিৎসা নেওয়ার পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চলে আসেন গুলিবিদ্ধ রাশেদ (১৫)। পরে বুকে প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হলে আবারও গত ২২ আগস্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। পরবর্তী সময়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা তাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তির ব্যবস্থা করে দেয়। তারাও একাধিক চেষ্টা করে ফুসফুসে আটকে থাকা গুলিটি অস্ত্রোপচার করে বের করতে পারেননি। পরে তাকে প্রয়োজনীয় ঔষধ ও ব্যবস্থা দিয়ে ছাড়পত্র প্রদান করে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ)।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

লুট হওয়া ২৫ লাখ ঘনফুট সাদা পাথর উদ্ধার

ক্ষমা চেয়ে আবেদন উমামা ফাতেমার

যেসব লক্ষণে বুঝবেন আপনি লো ব্লাড প্রেশারে ভুগছেন

গণহত্যা মামলায় আফ্রিদি গ্রেপ্তার, ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া প্রত্যয় হিরণের

চুরির মামলার হাজিরার টাকা জোগাতে ফের চুরি, অতঃপর...

বাবা-মায়ের ডিভোর্স নিয়ে মুখ খুললেন গোবিন্দ-কন্যা

সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি হচ্ছে দেশ সেরা ইলেকট্রনিকস ব্র্যান্ড যমুনার পণ্য 

জেন-জির নতুন ট্রেন্ড ‘থিম পার্টি’, কী হয় সেখানে

নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপ / আসন্ন বিশ্বকাপের জন্য পাকিস্তানের ১৫ সদস্যের শক্তিশালী দল ঘোষণা

মামলা নিয়ে বিচলিত নন পলক, আইনজীবীকে ট্রায়ালের প্রস্তুতির নির্দেশ

১০

ঘুষকাণ্ডে এবার জামায়াতের সেই পিপির নিয়োগ বাতিল

১১

ভরা মৌসুমেও ইলিশের আকাল

১২

শোকজের জবাব দেবেন ফজলুর রহমান

১৩

হত্যাচেষ্টার নতুন মামলায় পলক, রাষ্ট্রদ্রোহে জাহাঙ্গীর গ্রেপ্তার

১৪

অস্ত্র উদ্ধারে পুরস্কার ঘোষণা সরকারের

১৫

প্রিয় মানুষের অভিমান ভেঙে ফেলুন সহজ কিছু উপায়ে

১৬

ইসলামী সংগীত গাইলেন ইউটিউবার সাইদুল হাসান

১৭

টঙ্গীতে ব্রিজ নির্মাণ ও সড়ক সংস্কারের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ 

১৮

ভারতে আসছে আর্জেন্টিনা, প্রতিপক্ষ হিসেবে যাদের নাম আলোচনায়

১৯

তৌহিদ আফ্রিদির ৭ দিনের রিমান্ড চেয়েছে সিআইডি

২০
X