ঘুষকাণ্ডে জড়িত পটুয়াখালীর সেই নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ও জেলা জামায়াতের রুকন সদস্য অ্যাডভোকেট মো. রুহুল আমিন শিকদারের নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে।
রোববার (২৪ আগস্ট) আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সলিসিটর অনুবিভাগ (জিপি-পিপি শাখা) থেকে তার নিয়োগ বাতিল করে অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে।
ঢাকা বার কাউন্সিলের সচিব বরাবর লিখিত অভিযোগে বিচারক নিলুফার শিরিন উল্লেখ করেন, বুধবার (২০ আগস্ট) সকাল ৯টার দিকে তার বাসার গৃহপরিচারিকার মাধ্যমে মামলার নথিপত্রসহ ৫০ হাজার টাকার একটি বান্ডিল পাঠান পিপি রুহুল আমিন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, নারী ও শিশুবিষয়ক একটি মামলায় জামিনের বিষয়ে বিচারকের মোবাইল নম্বরে বারবার সুপারিশ করেছিলেন রুহুল আমিন। এ ছাড়া আলোচিত শহীদ জসিম উদ্দীনের মেয়ের ধর্ষণ মামলায়ও আসামিপক্ষের হয়ে যোগাযোগ করার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
এ ঘটনার পর বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল ও বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান সিনিয়র অ্যাডভোকেট মো. আসাদুজ্জামান সভাপতিত্বে গত শনিবার (২৩ আগস্ট) অনুষ্ঠিত বার কাউন্সিলের জরুরি সভায় অ্যাডভোকেট মো. রুহুল আমিন শিকদারের আইনজীবী সনদ স্থগিত করে বার কাউন্সিল।
এর আগে, গত বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) জেলা আইনজীবী সমিতি জরুরি সভা আহ্বান করে। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে তার প্রাথমিক সদস্যপদ স্থগিত এবং কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করার পাশাপাশি বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। সমিতির লিখিত সিদ্ধান্ত জেলা প্রশাসক, দুদক, আইন মন্ত্রণালয় ও প্রধান বিচারপতির কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
একই দিন রাতে রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে পেশাগত অনিয়ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর জরুরি সভায় বসে জেলা ও পৌর জামায়াত নেতারা। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তার সদস্যপদ সাময়িকভাবে স্থগিত রেখে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়, যা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার (২০ আগস্ট) সকালে কলাপাড়ায় একটি সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলার (২৬১/২৫) আসামির জামিনের জন্য বিচারকের বাসায় ৫০ হাজার টাকাভর্তি একটি খাম ও মামলার নথিপত্র পাঠান পিপি রুহুল আমিন। এ ঘটনায় বিচারক নীলুফার শিরিন নিজেকে অপমানিত বোধ করে বার কাউন্সিলের সচিব বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
বিচারক অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, এর আগেও একই মামলার এক আসামির জামিনের জন্য রুহুল আমিন তাকে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠিয়েছিলেন। এবার সরাসরি বাসায় ঘুষ পাঠানোয় তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করতে বাধ্য হন।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, পিপি রুহুল আমিন পূর্বেও বিভিন্ন মামলায় আসামি পক্ষের হয়ে তদবির করেছেন এবং আদালতের আদেশ প্রত্যাশামতো না হলে বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে চাপ সৃষ্টি করেছেন। আলোচিত ‘জুলাই শহীদ জসিম কন্যা লামিয়া ধর্ষণ মামলা’তেও (৩৭/২৫) তিনি আসামি পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
মন্তব্য করুন