ভরা মৌসুমেও পটুয়াখালীর পায়রা নদীতে ইলিশের দেখা মিলছে না। এতে হতাশায় দিন কাটছে এ অঞ্চলের শত শত জেলে ও আড়তদারের। ইলিশের সংকটের বাজারে দাম আকাশছোঁয়া হওয়ায় সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে।
জেলেরা জানান, ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে নদীতে জাল ফেললেও কাঙ্ক্ষিত ইলিশ মিলছে না। অনেক সময় শূন্যহাতে ফিরতে হচ্ছে তাদের। স্থানীয়দের দাবি, অস্বাভাবিক আবহাওয়া, নদীর ডুবোচর এবং স্রোতের পরিবর্তনে ইলিশের বিচরণ কমে গেছে।
এদিকে বাজারে ঘুরে দেখা যায়, অল্প কিছু ইলিশ উঠলেও দাম সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে। কেজিপ্রতি ইলিশ ১ হাজার ৭০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ফলে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের ক্রেতারা ইলিশ কেনা থেকে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) মৎস্য অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. সাজেদুল হক বলেন, সাগরের লবণাক্ততা বৃদ্ধি, সমুদ্রের উষ্ণতা, অবৈধ জাল ও নৌচলাচলের কারণে ইলিশ আসতে পারছে না। এর ফলে উৎপাদন মারাত্মকভাবে কমে যাচ্ছে। এ অবস্থা কাটাতে নিয়মকানুন মেনে চলা, জেলেদের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন, ডুবোচর ও নাব্য সংকটে ইলিশের মাইগ্রেশন রুট পরিবর্তনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কার্যকর উদ্যোগ না নিলে এ অঞ্চলের শত শত জেলে কর্মহীন হয়ে পড়বেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, অতিবৃষ্টি-অনাবৃষ্টি, তীব্র তাপপ্রবাহ, নদীর নাব্য হ্রাস ও দূষণের কারণে ইলিশের মাইগ্রেশনে বড় বাধা তৈরি হয়েছে। ফলে ডিম ছাড়তে মা ইলিশ মিঠাপানির নদীতে আসতে পারছে না। এ ছাড়া জাটকা ধ্বংস, বাধাজাল ও কারেন্ট জালের ব্যবহার সংকট আরও বাড়াচ্ছে।
জেলেরা অভিযোগ করেছেন, সরকারি তদারকি না থাকায় অবৈধ জাল এখনো নদীতে ব্যবহৃত হচ্ছে। আবার নদী খনন কার্যক্রম ধীরগতির হওয়ায় পায়রার গভীরতা দিন দিন কমছে। স্থানীয়রা বলছেন, দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ না নিলে আগামীতে ইলিশ শুধু স্মৃতিতেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বে।
মন্তব্য করুন