বাসস
প্রকাশ : ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৪১ পিএম
আপডেট : ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:০৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

পররাষ্ট্র উপদেষ্টার চীন সফরে আলোচনায় থাকতে পারে যেসব বিষয়

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। পুরোনো ছবি
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। পুরোনো ছবি

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন রাষ্ট্রীয় সফরে চীনের বেইজিংয়ের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছেন। সোমবার (২০ জানুয়া‌রি) বিকেলে মো. তৌহিদ হোসেনের ঢাকা ত্যাগ করার তথ্য জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের এ সফর ঢাকা-বেইজিং সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করবে। সফরে ঋণের সুদের হার কমানো, পানি প্রবাহ সংক্রান্ত তথ্য বিনিময়, চিকিৎসা সহযোগিতা এগিয়ে নেওয়া এবং মিয়ানমার পরিস্থিতির সমাধানে চীনের ব্যাপক অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করার বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে।

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই’র আমন্ত্রণে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এ সফর করছেন। গত বছরের আগস্টে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর এই সফরকে ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর’ হিসেবে অবহিত করা হচ্ছে।

মঙ্গলবার বেইজিংয়ে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করবেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।

ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন ইঙ্গিত দিয়েছেন, ঢাকার পূর্বের অনুরোধ পূরণ করে হাইড্রোলজিক্যাল তথ্য বিনিময়ে একটি বাস্তবায়ন পরিকল্পনা স্বাক্ষর করতে প্রস্তুত রয়েছে বেইজিং।

সফরকালে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ তিস্তা নদী প্রকল্পে চীনের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়েও আলোচনা প্রাধান্য পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

উপদেষ্টার প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে চীনকে অগ্রাধিকার দেওয়ার এ সিদ্ধান্ত পূর্ববর্তী সরকারগুলোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার একটি উল্লেখযোগ্য ইঙ্গিত বহন করে। পূর্বে, পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা প্রায়ই ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক বিবেচনার কারণে ভারতকে তাদের প্রাথমিক গন্তব্য হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনার বাইরেও উপদেষ্টা চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন এবং চায়না ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ ও সাংহাই ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজে বক্তৃতা দেবেন। এছাড়াও বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য সাংহাইয়ে ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন উপদেষ্টা।

রোববার চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও এ সফরের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে অবহিত করেন। রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি চীনের শ্রদ্ধার কথা পুনর্ব্যক্ত করে বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা, সংস্কার, গণতান্ত্রিক উত্তরণ ও উন্নয়ন উদ্যোগের প্রতি সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।

চীন সফরে যেসব বিষয় আলোচনায় থাকতে পারে :

অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন সহযোগিতা

চীন বাংলাদেশে বড় বিনিয়োগকারী, বিশেষ করে অবকাঠামো প্রকল্পে ভিন্ন ভিন্ন সুদের হারে ঋণের সুবিধা দিচ্ছে।

এই সফরের মূল অগ্রাধিকারগুলোর মধ্যে রয়েছে ঋণের শর্তাবলি পুনর্বিবেচনা করা, যেমন- সুদের হার বর্তমান ২-৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা, প্রতিশ্রুতি ফি মওকুফ করা ও গ্রেস পিরিয়ড ১৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ৩০ বছর করা।

২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের পাশাপাশি চীনা বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও চীনে রপ্তানি বৃদ্ধির বিষয়েও আলাপ-আলোচনা হবে।

গত সপ্তাহে এক ব্রিফিংয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, আলোচনায় অর্থনৈতিক বিষয়গুলো প্রাধান্য পাবে। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ঢাকা-বেইজিং সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন

১৯৭৫ সালের ৩১ আগস্ট চীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ায় ঢাকা-বেইজিং কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে এ সফর অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দুদেশই এই মাইল ফলকটি স্মরণীয় করে রাখতে বছরব্যাপী নানা অনুষ্ঠান উদযাপনের পরিকল্পনা করেছে। ৫০তম বার্ষিকী উদযাপনের কর্মসূচি এ সফরকালে ঘোষণা করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এ সফর পারস্পরিক সমঝোতা, বন্ধুত্ব এবং দুদেশের মধ্যে একটি প্রাণবন্ত অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি করবে, কৌশলগত ও কারিগরি সহযোগিতাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

রোহিঙ্গা ইস্যু

এখনো কোনো সমাধান অর্জিত না হলেও, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যকার রোহিঙ্গা সংকটে চীন দীর্ঘদিন ধরে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করে আসছে। এবারের সফরে রোহিঙ্গা ইস্যু প্রধান আলোচনায় আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।

তৌহিদ রোববার চীনা রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছেন, নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচার জন্য পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন সহজতর করতে ঢাকা চীনের কাছ থেকে ‘অত্যন্ত জোরদার’ ও ‘সক্রিয়’ ভূমিকা প্রত্যাশা করে।

স্বাস্থ্য সহযোগিতা

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বাংলাদেশি নাগরিকদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশের নিকটবর্তী কুনমিংয়ে কমপক্ষে তিন থেকে চারটি সেরা পর্যায়ের হাসপাতাল মনোনীত করার জন্য চীনকে অনুরোধ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

হোসেন আরও জানান, ঢাকার উপকণ্ঠে পূর্বাচলে একটি পূর্ণাঙ্গ আধুনিক চীনা হাসপাতাল স্থাপনে বাংলাদেশ ভূমি ও লজিস্টিক সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে।

বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা মোকাবিলা

চীন বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। বাংলাদেশ চীন থেকে বছরে ২৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে, অপরদিকে রপ্তানির পরিমাণ মাত্র ৬৭০ মিলিয়ন ডলার।

চীনের বাজারে শতভাগ শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের রপ্তানি এখনো কম, যার ফলে উল্লেখযোগ্য বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা দেখা দিয়েছে।

সফর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বেইজিংয়ে উপদেষ্টার আলোচনার সময় এ বৈষম্য মোকাবিলার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বল ছুঁড়ে মেরে শাস্তির মুখে নাহিদ রানা

গণভোট করলে কী হবে, জানালেন তারেক রহমান

জেদ্দাফেরত পাঁচ যাত্রীর কাছ থেকে ৭০০ গ্রাম স্বর্ণ জব্দ

১৩ নভেম্বর গণপরিবহন চলবে কি না, জানাল মালিক সমিতি

সাতক্ষীরায় জুলাই স্মৃতিস্তম্ভে আগুন, প্রতিবাদে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ

দিনে কয়টি প্যারাসিটামল খাওয়া নিরাপদ? উত্তর জেনে এখনই সাবধান হন

আ.লীগের মিছিল থেকে আটক ৩

হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অবসরের পথে অস্কার!

এনসিপির যুব সংগঠন থেকে ২৩ নেতার পদত্যাগ

সাবেক মেয়র আইভীর জামিন স্থগিত

১০

নিজের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চাইলেন নেইমার

১১

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন না হলে দেশ বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে : নুর

১২

অস্ত্র মামলা / মামুন হত্যাকাণ্ডের দুই শুটারসহ ৫ জন রিমান্ডে 

১৩

সাবেক এমপিদের জন্য আমদানিকৃত ৩১ বিলাসবহুল গাড়ি সরকারের মালিকানায়

১৪

২০২৬ বিশ্বকাপ / এখনও বাকি ২০টি টিকিটের লড়াই

১৫

জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর দীপ মারা গেছেন 

১৬

রেললাইনের স্লিপার ফেলে ট্রেন দুর্ঘটনার চেষ্টা 

১৭

বিএনপির প্রতিটি সিদ্ধান্ত দেশের স্বার্থকে সামনে রেখে নেওয়া হয় : আইয়ুব খান

১৮

মিসরে আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম বাংলাদেশি তরুণী

১৯

মেসি বার্সা ছেড়ে যাওয়ায় কোনো অনুশোচনা নেই লাপোর্তার

২০
X