কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭:০৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

একুশ সব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর বীজমন্ত্র : প্রধান উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি : সংগৃহীত
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি : সংগৃহীত

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বাঙালি জাতির মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে ৫২-এর ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়েই একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, ভাষাভিত্তিক জাতিসত্তা ও রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠনের ভিত রচিত হয়েছিল।

তিনি বলেন, বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি শুধু বেদনার্ত অতীতকে স্মরণ করে অশ্রুবিসর্জনের দিন নয়, বরং এক অবিনাশী প্রেরণা, সব ধরনের অন্যায়, অবিচার ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর বীজমন্ত্র।

শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্‌যাপন উপলক্ষে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করে তিনি এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে লিঙ্গুইস্টিক অলিম্পিয়াড বিজয়ীদের সনদপত্র প্রদান এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা জাতীয় পদক ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা আন্তর্জাতিক পদক প্রদান করা হয়। পুরস্কার বিজয়ীদের অভিনন্দন জানান অধ্যাপক ইউনূস।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা’ এই আন্দোলন বাঙালির মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষার জন্য সূচিত হলেও এর মূল চেতনাটি ছিল স্বাধিকার প্রতিষ্ঠা করা। তা ছিল বাংলার রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তির আন্দোলন। তাই বাঙালির কাছে একুশ মানে মাথানত না করার দৃঢ় প্রত্যয়।

তিনি বলেন, বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি এনে দিতে আমাদের আত্মত্যাগ করতে হয়েছে অনেক। মাতৃভাষার জন্য জীবনদানের এমন ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। জাতি-ধর্মনির্বিশেষে সব জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে মাতৃভাষার চেতনা ও মর্যাদা রক্ষার প্রেরণা ও এ চেতনার সাথে প্রাতিষ্ঠানিকতার সূত্রে ২০০১ সালের ১৫ মার্চ ঢাকায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়। বিশ্বের সব মাতৃভাষার সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও গবেষণার ইতিবৃত্তকে লক্ষ্য করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট তার যাত্রা শুরু করে। মাতৃভাষা যে কোনো নৃগোষ্ঠীর ইতিহাস, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির বাহক। মাতৃভাষার সঙ্গে সব মানুষের আত্মার সম্পর্ক। মাতৃভাষার পর মানুষ যত ভাষাই আত্মস্থ করুক না কেন, সেসব নতুন ভাষায় যতই পারদর্শিতা অর্জন করুক না কেন, মাতৃভাষাকে তার হৃদয়ের গভীরতা থেকে সরাতে পারে না।

ইউনূস বলেন, পৃথিবীর প্রায় সব দেশে নানা দেশের নানা ভাষার কিংবা হাতে গোনা কয়েকটি দেশের কিছু মানুষ নাগরিকত্ব গ্রহণ করে কয়েক প্রজন্ম ধরে বসবাস করেন। নতুন দেশের ভাষা তাদের দৈনন্দিন জীবনে চব্বিশ ঘণ্টার ভাষায় পরিণত হয়ে যায়। কিন্তু তবু সে ভাষা মাতৃভাষায় পরিণত হয় না। তারা নিজেদের মধ্যে একত্র হলেই উৎসাহ সহকারে নিজেদের মূল ভাষায় ফিরে যায়, তাদের মূল ভাষার সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল সৃষ্টি করে নেয় নিজেদের অজান্তেই।

তিনি বলেন, যে-সব শহরে তাদের মাতৃভাষাবাসীর সংখ্যা বেশি তাদের শহরের মেয়র, সিটি কাউন্সিলে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে অনায়াসে নির্বাচিত হয় তারা। তাদের শহরে তারা নিজেদের মাতৃভাষা নির্দ্বিধায় প্রতিষ্ঠিত করে ফেলে। তাদের মাতৃভাষায় সরকারি দৈনন্দিন কাজকর্ম পরিচালনা করে, তাদের ভাষাভাষী পুলিশ শহরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করে। অথচ শহরের গণ্ডি ছাড়ালেই তারা আবার তাদের নতুন ভাষায় সাবলীলভাবে ফিরে যায়। শহরের নতুন নাগরিকদের নিয়ে পুরোনো নাগরিকদের মনে কোনো ক্ষোভের সৃষ্টি হয় না।

সরকার প্রধান আরও বলেন, আজ আমরা মাতৃভাষা দিবসে সব মাতৃভাষা সংরক্ষণের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলাম। আবেগের কারণ তো আছেই, মস্ত বড় স্বার্থের কারণও আছে। এখন আমাদের জানা নেই কোনো অজ্ঞাত নামহীন মাতৃভাষা পৃথিবী সম্পূর্ণ বদলে দেবে। কোনো সম্ভাবনাকে অবজ্ঞা করলে মস্ত বড় ভুল করব। আজ বিশ্ব মাতৃভাষা দিবসে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের সার্বিক সাফল্য কামনা করছি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পাক সীমান্তে ট্যাঙ্ক ও ভারী অস্ত্র মোতায়েন আফগানিস্তানের

তিন মন্ত্রণালয়ের ৩ সচিবকে বদলি

নতুন ধর্ম সচিব কামাল উদ্দিন

খুলনায় শিশু হত্যায় জড়িত ফয়সালের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

শিশু মিমের চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন শিমুল বিশ্বাস

পুয়ের্তো রিকো ম্যাচের আগে দুঃসংবাদ পেল আর্জেন্টিনা

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনসহ ৫ দাবিতে ঢাকার ডিসিকে জামায়াতসহ ৭ দলের স্মারকলিপি

ট্রুডোর সঙ্গে প্রমোদতরীতে ঘনিষ্ঠ কেটি পেরি

রাবিতে ফারুক হত্যা মামলার সব আসামি বেকসুর খালাস

সড়ক দুর্ঘটনায় আহত বাবাকে বাঁচাতে চান হাবিপ্রবির সালমা

১০

রাতের অন্ধকারে ভোট চাই না : সিইসি

১১

খাওয়ার পর বসে থাকার অভ্যাস ধূমপানের মতোই বিপজ্জনক

১২

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে লাইভ চলাকালে ফেসবুক পেজে সাইবার হামলা

১৩

পাকিস্তানের ৫৮ সেনা নিহত, দাবি আফগানিস্তানের

১৪

‘পরোয়ানা জারি হওয়া সেনা কর্মকর্তাদের বিচারের ক্ষমতা রয়েছে ট্রাইব্যুনালের’

১৫

দু-তিন দিন ধরে ফ্ল্যাট বন্ধ, পুলিশ এসে উদ্ধার করল পাঁচটি মৃতদেহ

১৬

‘বৈষম্য আর আধিপত্যবাদের আগ্রাসন থেকে সেফ এক্সিট দরকার’

১৭

২০২৭ বিশ্বকাপ সরাসরি খেলতে বাংলাদেশের সামনে যে সমীকরণ

১৮

আপনার হোয়াটসঅ্যাপ অন্য কেউ ব্যবহার করছে না তো!

১৯

আন্দোলনরত শিক্ষকদের কর্মসূচিতে পুলিশের বাধা, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ

২০
X