বাসস
প্রকাশ : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:৫১ এএম
অনলাইন সংস্করণ

‘হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার সময়ও বাইরে গুলি চলছিল’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহীদ হন জয়। ছবি : সংগৃহীত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহীদ হন জয়। ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা মেডিকেলে পৌঁছে দেখি, আমার ছেলে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে। তার বিছানা রক্তে ভিজে গেছে। সাত ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তাতেও তাকে বাঁচানো যায়নি। বলছিলাম শহীদ জয়ের কথা।

১৫ বছর বয়সী জয় ছিলেন গার্মেন্টস শ্রমিক। ৫ আগস্ট সকালে ছিল স্বৈরশাসক হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরানোর লক্ষ্যে ঐতিহাসিক ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে যোগ দিতে রাজধানীর ডেমরার পশ্চিম সানারপাড়ের ব্যাংক কলোনির ভাড়া বাসা থেকে বের হন। সেদিন ১৬ বছরের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটলেও বিজয় দেখে যেতে পারেননি জয়। আন্দোলনের সময় যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি শহীদ হন। জয়ের মৃত্যু তার মাকে (হাসি বেগম) এক শূন্যতার অন্ধকারে ফেলে দিয়েছে।

হাসি বেগম (৩৫) একা দুই সন্তানকে বড় করেছেন। ২০১৫ সালে তালাকপ্রাপ্ত হওয়ার পর গার্মেন্টসে দিনরাত পরিশ্রম করে মানুষ করেছেন তাদের। তিনি জানতেনই না যে তার ছেলে মাহমুদুল হাসান জয় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েছে। তার মৃত্যুর পর জয় ছাত্র-জনতার মিছিলে স্লোগান দিচ্ছে-এমন একটি ছবি দেখে তিনি এটি প্রথম জানতে পারেন।

বাসসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জয়ের মা বলেন, ‘৫ আগস্ট সকাল সাড়ে ১১টার দিকে জয় বাসা থেকে বের হয়। তখনও সে নাশতা খায়নি। আমি ভেবেছিলাম, সে দোকানে গেছে। এক ঘণ্টা পর দুপুর সাড়ে ১২টায় ফোন দিলাম, কিন্তু দেখি ফোন বন্ধ।’

হাসি বেগম জানান, বিকেল ৩টার দিকে জয়ের বন্ধুরা এসে তাকে জানান, জয় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী হাসপাতালে পৌঁছে জানালো, জয় সংকটাপন্ন অবস্থায় আছে এবং প্রচুর ও পজিটিভ রক্ত প্রয়োজন।’ মাগরিবের নামাজের পর কোনোভাবে হাসপাতালে পৌঁছেন তিনি।

তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘ঢাকা মেডিকেলে পৌঁছে দেখি, আমার ছেলে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে। তার বিছানা রক্তে ভিজে গেছে। সাত ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তাতেও তাকে বাঁচানো যায়নি।’

রাত ১০টার দিকে ডাক্তাররা সবাইকে আইসিইউ থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। কিন্তু হাসি থাকতে চান। তখন এক নার্স তাকে জানান, গুলি তার ছেলের মাথার ভেতর দিয়ে বের হয়ে গেছে, বেঁচে থাকার আর কোনো সম্ভাবনা নেই।

জয়ের মা কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, ‘রাত ৩টার কিছু আগে আমার ছেলে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে।’সেই দিন হাসপাতাল থেকে মরদেহ নেওয়ার সময় কোনো ময়নাতদন্ত হয়নি, কারণ চারদিকে তখনও লাশের সারি।

হাসি জানান, ‘হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার সময়ও বাইরে গুলি চলছিল।’

জয়ের মরদেহ যখন সানারপাড়ে পৌঁছে, তখন পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। জন্ম থেকে এ এলাকায় বেড়ে ওঠা ছেলেটির মৃত্যুর খবরে এলাকাবাসী গভীরভাবে ব্যথিত হন।

স্থানীয়রা জয়ের স্মরণে এক চত্বরে তার নামকরণ করেছেন ‘জয় চত্বর’।

আমি গার্মেন্টসে কাজ করে আমার সন্তানদের বড় করেছি, মায়ের কাছে রেখে কাজে যেতাম। কিন্তু এই দিন দেখার জন্য আমি তাদের বড় করিনি, বলেন হাসি

তিনি আরও বলেন, ‘সবার মুখে শুনলাম, জয় নিয়মিত আন্দোলনে যেত। অথচ আমি জানতামই না। ৫ আগস্ট তাকে অনেকেই বাধা দিয়েছিল, কিন্তু সে কারও কথা শোনেনি। বরং বলেছিল, প্রয়োজনে শহীদ হব। সে স্বাধীনতার স্বাদ পেতে চেয়েছিল, কিন্তু আমার কথা ভাবেনি।’

জয় পরিবারকে সাহায্য করতে এক বছর আগে চাকরি নিয়েছিল। কেননা হাসির স্বামীর আয়ে সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে পড়ছিল।

‘আমার ছেলে আমার সুখ চেয়েছিল। মৃত্যুর কয়েক দিন আগে সে তার নানিকে বলেছিল, সে একটা ভালো কাজ শিখবে, যাতে আমাদের আর কষ্ট করতে না হয়। সে বলেছিল, ‘আমার মা অনেক কষ্ট করেছে, আমি মাকে এই কষ্ট থেকে মুক্ত করব।’

হাসি বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘কিন্তু ঘাতকদের গুলি আমার ছেলের স্বপ্ন শেষ করে দিল।’

তিনি তার ছেলের মৃত্যুর জন্য দায়ীদের ফাঁসির দাবি জানান।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

শিল্পার সৌন্দর্যের গোপন রহস্য ফাঁস করলেন সঞ্জয়

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ২০ কিমি যানজট, যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে 

নাক ডাকার সমস্যায় ভুগছেন? জেনে নিন সমাধান

বন্যার পানিতে মাছ ধরতে গিয়ে একজনের মৃত্যু

বিয়ের আগেই অন্তঃসত্ত্বা, যা বললেন নেহা

১২ শিক্ষকের সেই স্কুলে এবারও সবাই ফেল

দ্বিতীয় দিনের বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আলোচনা শেষ

এসএসসিতে আমিরাতের ২ প্রতিষ্ঠানে পাসের হার ৭২ শতাংশ

এক দেশে ৩৫%, অন্যদের ২০% শুল্কের ইঙ্গিত ট্রাম্পের

এসএসসির ফল পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন শুরু, যেভাবে করবেন

১০

গাজায় বিস্ফোরণে ইসরায়েলি সেনা নিহত, উত্তেজনা চরমে

১১

প্রথম প্রেম ভুলতে পারেননি আনুশকা

১২

রাবিপ্রবিতে প্রথমবার ছাত্রদলের কমিটি

১৩

শেষ ওভারের নাটকীয়তায় রংপুরের জয়

১৪

প্রতিদিন ১৫ মিনিট হাঁটলেই ৭ পরিবর্তন আসবে আপনার

১৫

কক্সবাজারে এসএসসিতে ফেল করায় শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

১৬

নদীতে সেতু ভেঙে পড়া নিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীর রোমহর্ষক বর্ণনা

১৭

যমজ দুই ভাইয়ের আশ্চর্যজনক ফলাফল

১৮

ছবিতে প্রথমে কী দেখতে পাচ্ছেন, উত্তরই বলে দেবে আপনি আসলে কেমন

১৯

৮ শিক্ষকের স্কুলে ৯ পরীক্ষার্থী, অথচ সবাই ফেল

২০
X