বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতাসংক্রান্ত প্রথম যৌথ কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঢাকা সেনানিবাসে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের (এএফডি) সার্বিক তত্ত্বাবধানে তিন দিনব্যাপী সভা সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আইএসপিআর জানিয়েছে, এ সভা দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সামরিক সম্পর্ক জোরদার ও পারস্পরিক প্রতিরক্ষা লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হবে। এই ঐতিহাসিক বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য ছিল পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়ন, কৌশলগত সহযোগিতা সম্প্রসারণ এবং যৌথ সামরিক প্রশিক্ষণ, শিক্ষা, প্রতিরক্ষা, শিল্প ও অনুশীলনসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতে কার্যকর সমন্বয় সাধন। সভা শেষে কার্যবিবরণী স্বাক্ষর করেছে দুদেশ।
আইএসপিআর জানিয়েছে, বৈঠকে সৌদি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন মেজর জেনারেল হামেদ রাফি আল-আমরি এবং তার সঙ্গে আরও ১৪ জন সামরিক ও বেসামরিক সদস্য অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন এএফডির প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল এসএম কামরুল হাসান। বৈঠকে দুই দেশের প্রতিনিধি দল ভ্রাতৃত্ব, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহযোগিতার চেতনায় আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন এবং ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের রূপরেখা চূড়ান্ত করেন।
সৌদি প্রতিনিধিদলের নেতা তার সমাপনী বক্তব্যে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী তথা বাংলাদেশের জনগণকে উষ্ণ আতিথিয়তার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। মুসলিম ভাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ বাংলাদেশ ও সৌদি আরব ভবিষ্যতেও সামরিকসহ সব ক্ষেত্রে একসঙ্গে কাজ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন উভয় দেশ সামরিক সহযোগিতার মাধ্যমে পারস্পরিক সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারবে। পরিশেষে তিনি দুটি দেশের মধ্যকার সামরিক সহযোগিতার এই ধারা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সমাপনী বক্তব্যে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের দলনেতা লেফটেন্যান্ট জেনারেল এসএম কামরুল হাসান বৈঠকে অংশগ্রহণকারী সৌদি প্রতিনিধি দলের প্রধান মেজর জেনারেল হামেদ রাফে আল-আমরিসহ উভয় দেশের প্রতিনিধি ও উপস্থিত সংবাদকর্মীদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি এই বৈঠককে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে অভিহিত করেন।
একইসঙ্গে, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষ থেকে সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ এবং যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান আল সৌদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন, যাদের সম্মতি ও সহযোগিতায় এই যৌথ বৈঠক সম্ভব হয়েছে।
তার বক্তৃতায় তিনি উভয় দেশের পারস্পরিক শ্রদ্ধা, ভ্রাতৃত্ব ও শান্তির অঙ্গীকার তুলে ধরেন এবং ভবিষ্যতেও এ ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। লেফটেন্যান্ট জেনারেল কামরুল তার বক্তব্যে দুই পবিত্র মসজিদের রক্ষক হিসেবে সৌদি আরবের মর্যাদা এবং আন্তর্জাতিক শান্তিপ্রক্রিয়ায় তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কারণে সৌদি আরবের প্রতি বাংলাদেশের জনগণের ভালোবাসা ও সম্মানের বিষয়টি উল্লেখ করেন।
উভয় দেশের জনগণের মঙ্গল ও সমৃদ্ধি কামনা এবং ভবিষ্যতে সৌদি প্রতিনিধি দলকে পুনরায় বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে তিনি তার বক্তব্য শেষ করেন।
পরিশেষে, বাংলাদেশ- সৌদি আরব প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বিষয়ক যৌথ কমিটির দ্বিতীয় সভা ২০২৬ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এছাড়া উভয় দেশের প্রতিনিধিরা একটি অফিসিয়াল ফটো সেশনে অংশগ্রহণ করেন। এর পাশাপাশি, সৌদি আরবের প্রতিনিধি দলের সম্মানে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ কর্তৃক সন্ধ্যায় একটি নৈশভোজের আয়োজন করা হয়।
মন্তব্য করুন