দৈনিক আজকের কাগজের প্রকাশক ও সম্পাদক, জেমকন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা কাজী শাহেদ আহমেদ গতকাল সোমবার (২৮ আগস্ট) মারা গেছেন। তাকে নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন অধ্যাপক আসিফ নজরুল।
মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘কেমন ছিলেন কাজী শাহেদ আহমেদ’ শিরোনামে নিজের প্রোফাইলে একটি লেখা পোস্ট করেছেন তিনি।
তিনি লেখেন, ‘পিএইচডি করে দেশে ফেরার পর আমার আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ ছিল। নাঈম ভাই (নাঈমুল ইসলাম খান) ততদিনে আবার সম্পাদক হিসেবে যোগ দিয়েছেন আজকের কাগজে। তিনি আমাকে সেখানে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরির একটি বিশেষ সেলের দায়িত্ব দেন।
অফিসটা ছিল আজরতপাড়ায়, মহাখালী রেল ক্রসিংয়ের কাছে। দুপুরে গ্রাউন্ডফ্লোরে আমরা লাঞ্চ করতে যেতাম। কাজী শাহেদ আহমেদও যেতেন। আজকের কাগজের সাংবাদিকরা গোল হয়ে তার পাশে বসত। আমিও বসতাম, কিন্তু অচিরেই দুটো সমস্যার সম্মুখীন হলাম।
এক: বাকি সবাই তাকে স্যার বলে ডাকত, যার কোনো কারণ আমি খুজে পেতাম না। দুই: তিনি একাই কথা বলতেন এবং বাকিরা নিয়মিত বিরতিতে হেসে গড়িয়ে পড়ত তা শুনে। আমার পক্ষে উনাকে স্যার ডাকা আর বাধ্যতামূলকভাবে হাসা কোনোটা সম্ভব ছিল না। ফলে লাঞ্চ খাওয়া বাদ দিলাম সেখানে।
কাজী শাহেদ রুচিশীল ও ব্যক্তিত্ববান মানুষ ছিলেন। তিনি নিজে প্রতিভাবান ছিলেন, প্রতিভার কদর বুঝতেন। তিনি ভাগ্যবানও ছিলেন। তিনি এরশাদ এবং পরবর্তী সব সরকারের আমলে ব্যবসায় আনুকূল্য পেয়েছেন। বিএনপি আমলে খাম্বা (সিমেন্টের ইলেকট্রিক পোল) ব্যবসাটা মূলত তার হলেও, তার কোনো বদনাম হয়নি, হয়েছে তারেক রহমানের। তার কোনো অনিয়ম বা বিচ্যুতি নিয়েও (যেমন: পঞ্চগড়ে তার চা বাগানের ভেতর নদীর অংশবিশেষ ঢুকিয়ে ফেলা) মিডিয়ার আলোচনা হয়নি। এমন ভাগ্যের ছোঁয়া তার জীবনে থাকলেও বাংলাদেশের নৈতিকতার মানদণ্ড অনুসারে তিনি উন্নত মানুষ ছিলেন।
তিনি বাংলাদেশে নতুন ধারার সাংবাদিকতার প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন, বহু সফল প্রতিষ্ঠানের জন্ম দিয়েছেন, বহু মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে এতে। শুধু এসব কারণে হলেও তিনি শ্রদ্ধা পাওয়ার মতো ব্যক্তি ছিলেন। তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি।’
উল্লেখ্য, সোমবার (২৮ আগস্ট) সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় রাজধানীর একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কাজী শাহেদ।
১৯৪০ সালের ৭ নভেম্বর যশোরে জন্মগ্রহণ করেন কাজী শাহেদ আহমেদ। ইঞ্জিনিয়ারিং পাসের পর ১৪ বছর সেনাবাহিনীতে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির প্রতিষ্ঠাকালীন প্লাটুন কমান্ডারদের একজন হন কাজী শাহেদ।
১৯৭৯ সালে ‘জেমকন গ্রুপ’ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ব্যবসায়ী জীবন শুরু করেন বরেণ্য এই সাংবাদিক। প্রকাশক ও সম্পাদক ‘খবরের কাগজ’ ও ‘আজকের কাগজ’। বাংলাদেশে প্রথম অর্গানিক চা বাগানের প্রতিষ্ঠাতাও তিনি। তার রয়েছে অসামান্য কিছু অলাভজনক উদ্যোগ। এসব অলাভজনক উদ্যোগের মধ্যে আছে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ ও কাজী শাহেদ ফাউন্ডেশন।
সাহিত্য পরিমণ্ডলেও সুপরিচিত কাজী শাহেদ আহমেদ। তার প্রথম গ্রন্থ ‘আমার লেখা’ প্রকাশিত হয় ১৯৯৫ সালে। একই বছরে প্রকাশিত হয় ‘ঘরে আগুন লেগেছে’ বইটি। ২০১৩ সালে তার ৭৩ বছর বয়সে প্রথম উপন্যাস ‘ভৈরব’ প্রকাশিত হয়, যা এরই মধ্যে ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে। আত্মজীবনী ‘জীবনের শিলালিপি’ প্রকাশিত হয় ২০১৪ সালে। একই বছর প্রকাশিত হয় উপন্যাস ‘পাশা’। ২০১৭ সালে প্রকাশিত হয় উপন্যাস ‘দাঁতে কাটা পেনসিল’। ২০১৮ সালে প্রকাশিত হয় তার সবশেষ উপন্যাস ‘অপেক্ষা’।
মন্তব্য করুন