নানা কারণে সম্প্রতি দেশে ভূমিকম্পের সংখ্যা বেড়েছে। গত দুই মাসের মধ্যে চারবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে দেশে। তবে এসব ভূমিকম্পে কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া না গেলেও আতঙ্ক তৈরি করেছে জনমনে। অনেকেই বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন।
শুক্রবার (১৬ জুন) সকাল ১০টা ৪৮ মিনিটে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে ৪ দশমিক ৫ মাত্রার এই কম্পনের কেন্দ্র ছিল ভারতের শিলংয়ে।
এ ভূমিকম্পের গভীরতা ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে ৭০ কিলোমিটার গভীরে। এর আগেও গত দুই মাসের মধ্যে আরও তিনবার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে দেশ।
গত ৫ মে ভোরে দেশে আরেকটি ভূকম্পন অনুভূত হয়। কেঁপে উঠেছিল রাজধানী ঢাকা। রিখটার স্কেলে ৪ দশমিক ৩ মাত্রার ওই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকার সিটি সেন্টার থেকে ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে দোহারে।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস জানায়, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল দোহার থেকে ১৪ কিলোমিটার পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বে। যার গভীরতা ছিল মাত্র ১০ কিলোমিটার।
এর আগে গত ৩০ এপ্রিল (রোববার) চট্টগ্রামে ৪ দশমিক ৬ মাত্রার কম্পন অনুভূত হয়। এদিন দুপুর ১২টা ৫৬ মিনিটে অনুভূত হওয়া ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল অক্ষাংশ ২২ দশমিক ৯৩ ডিগ্রি উত্তর, দ্রাঘিমা ৯৪ দশমিক ১৯ ডিগ্রি পূর্ব মিয়ানমারের মাউলাইকে।
২৫ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলায় ৩ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল। ওই ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল ভূগর্ভের প্রায় ১৭ কিলোমিটার নিচে। এদিন রাত প্রায় সোয়া ২টার দিকে ঝাঁকুনি দিয়ে কেঁপে ওঠে নারায়ণগঞ্জ শহর, ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জের বেশ কিছু এলাকা।
এ ছাড়া গত এক যুগে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বেশকিছু ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। যার বেশিরভাগ কেন্দ্রস্থল ছিল সিলেট ও চট্টগ্রাম এলাকায়। যদিও এতে ক্ষতির পরিমাণ নেই। তবে সংশয়ের বিষয় হচ্ছে ভূমিকম্পের সংখ্যা নিয়ে, যা দিন দিন বেড়েই চলছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ ফারজানা সুলতানা জানান, বিশ্বেও ভূমিকম্পের সংখ্যা বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশে এর সংখ্যা বাড়লেও আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
ভূমিকম্প কী
ভূমিকম্প হচ্ছে ভূমির কম্পন। ভূ-অভ্যন্তরে যখন একটি শিলা অন্য একটি শিলার ওপরে উঠে আসে, তখন কম্পন হয়। পৃথিবীপৃষ্ঠের অংশবিশেষের হঠাৎ অবস্থান পরিবর্তন বা আন্দোলনই ভূমিকম্পন।
সারা পৃথিবীতে বছরে গড়ে ছয় হাজার ভূমিকম্প হয়। এগুলোর বেশিরভাগই মৃদু, যেগুলো আমরা টের পাই না। সাধারণত তিন ধরনের ভূমিকম্প হয়ে থাকে—প্রচণ্ড, মাঝারি ও মৃদু।
ভূমিকম্প কেন হয়
ভূ-অভ্যন্তরে স্থিত গ্যাস যখন ভূপৃষ্ঠের ফাটল বা আগ্নেয়গিরির মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে, তখন সেই গ্যাসের অবস্থানটি ফাঁকা হয়ে পড়ে আর পৃথিবীর ওপরের তলের চাপ ওই ফাঁকা স্থানে দেবে গিয়ে ভারসাম্য বজায় রাখে। তখনই ভূপৃষ্ঠে প্রবল কম্পনের অনুভব হয়, যা ভূমিকম্প নামে পরিচিত। সাধারণত তিনটি প্রধান কারণে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়ে থাকে—ভূপৃষ্ঠের হঠাৎ পরিবর্তনজনিত কারণে, আগ্নেয়গিরি সংঘটিত হওয়ার কারণে ও শিলাচ্যুতিজনিত কারণে।
মন্তব্য করুন