ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল গত কয়েক বছরে অসাধারণ ভূ-কৌশলগত এবং ভূ-অর্থনৈতিক গতি লাভ করেছে। বঙ্গোপসাগরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত হওয়ায় বাংলাদেশের পক্ষে নিষ্ক্রিয় থাকার কোনো সুযোগ নেই। বরং এ অঞ্চলে বাংলাদেশের গুরুত্ব আরও বেড়েছে।
শনিবার (২ সপ্টেম্বের) ‘বাংলাদেশের ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক : অপর্চুনিটিস অ্যান্ড ওয়ে ফরওয়ার্ড’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনারে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন।
এদিকে সেমিনারের প্রধান অতিথি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বাংলাদেশ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের সদস্যদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়াতে প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিস) এবং বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর রিজিওনাল স্টাডিজের (বিএফআরএস) যৌথ আয়োজনে বিস মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এমপি। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব) মাসুদ বিন মোমেন।
উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন বিস চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত এ এফ এম গওসোল আযম সরকার এবং সমাপনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন বিস মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শেখ পাশা হাবিব উদ্দিন। দিনব্যাপী এ সেমিনারে অংশ নেন ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবর, নয়াদিল্লির সেন্টার ফর রিসার্চ অন স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড সিকিউরিটি ইস্যুজের আহ্বায়ক ও ঢাকায় ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ, সাবেক রাষ্ট্রদূত শমসের মবিন চৌধুরী, আহমদ তারিক করিম, আইওআরএ সেক্রেটারি জেনারেল এইচ ই সালমান আল ফারিসি, টোকিও ইউনিভার্সিটি অব ফরেন স্টাডিজের প্রফেসর ড. হিদেকি শিনোদা, যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউট উইলসন সেন্টারের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চেয়ারপারসন প্রফেসর ড. লাইলুফার ইয়াসমিনসহ দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কৌশলগত দিক থেকে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলটি বাংলাদেশ এবং বিশ্বের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বের। এটি কিছু ব্যস্ততম সমুদ্রপথ, গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য রুট এবং বিভিন্ন সংস্কৃতি ও সমাজের আবাসস্থল। এই অঞ্চলটি অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং পরিবেশগত সুরক্ষা থেকে নিরাপত্তা পর্যন্ত জটিল সব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। বাংলাদেশ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর সাথে শক্তিশালী অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক উপভোগ করে। বঙ্গোপসাগরের একটি উপকূলীয় দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হওয়ার জন্য তার ‘ভিশন ২০৪১’ বাস্তবায়নের জন্য ইন্দো-প্যাসিফিকের স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে। যা দীর্ঘমেয়াদি সমৃদ্ধি, সামাজিক প্রতিক্রিয়াশীলতা, প্রযুক্তিগত গতিশীলতা, স্থিতিস্থাপকতা দ্বারা চিহ্নিত। আমরা বিশ্বাস করি যে ইন্দো-প্যাসিফিক দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া, সহযোগিতা এই অঞ্চলের বিশেষ করে বৃহত্তর বিশ্বের স্থিতিশীলতা, শান্তি এবং সমৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বাস করে যে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা ও সমন্বয় অভিন্ন সমৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য। আমাদের ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক বিশ্বকে জানানোর একটি প্রচেষ্টা যে এই অঞ্চলটির অভিন্ন সমৃদ্ধির জন্য নয়, কেবল যারা এখানে বাস করে শুধু তাদের জন্যও নয়, বরং পুরো বিশ্বের জন্য।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে বাংলাদেশকে আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি কেন্দ্রে পরিণত করার চেষ্টা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চলমান থাকবে। আমাদের আউটলুক অন্তর্ভুক্তিমূলক হওয়ার কারণে উন্নয়ন ও নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আগ্রহী দেশগুলোর সঙ্গে কাজ করবে বাংলাদেশ। তবে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কাজ করার মানে এই নয়, আমরা কোনো সামরিক জোটে যোগ দিচ্ছি।
বক্তারা বলেন, এই এলাকাকে দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রবেশদ্বার হিসাবে বিবেচনা করা হয়, যা আঞ্চলিক এবং আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্য ও বাণিজ্যিক কার্যক্রমের কেন্দ্রে পরিণত করছে। তাই এ অঞ্চলের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো গেলে পুরো বিশ্ব উপকৃত হবে।
মন্তব্য করুন