দেবীগঞ্জ (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২২ মে ২০২৫, ১০:২৯ এএম
অনলাইন সংস্করণ

মেয়াদ শেষেও কাজ হয়নি অর্ধেক

সেতু নির্মাণ না হওয়ায় ভোগান্তিতে গ্রামবাসী। ছবি : কালবেলা
সেতু নির্মাণ না হওয়ায় ভোগান্তিতে গ্রামবাসী। ছবি : কালবেলা

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে খড়খড়ি নদীর ওপর নির্মাণাধীন সেতুর কাজ নির্ধারিত সময়ের দুই মাস পার হলেও অর্ধেকও সম্পন্ন হয়নি। সোনাহার মল্লিকাদহ ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ এই সেতুটি ঘিরে প্রতিদিন চলাচল করেন আশপাশের প্রায় ১০ হাজার মানুষ। বর্ষা শুরু হওয়ার আগেই কাজ শেষ না হলে স্থানীয়দের দুর্ভোগ আরও বাড়বে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোনাহার মল্লিকাদহ ইউনিয়নের উমেষের ডাঙ্গা খড়খড়ি নদী পার হয়ে সোনাহার ইউনিয়নের ৪, ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার বাদশা বাজার ও ভবানীগঞ্জ এলাকার প্রায় দশ হাজার মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করেন। ইউনিয়ন পরিষদ, হাসপাতাল ও উপজেলা সদরে যাওয়ার এটি একমাত্র সহজ যোগাযোগের পথ। এ ছাড়া শত শত শিক্ষার্থী প্রতিদিন এই নদী পার হয়ে বিদ্যালয়ে যায়। শুষ্ক মৌসুমে নদীটি হেঁটে পার হওয়া গেলেও বর্ষা মৌসুমে যাতায়াতে চরম দুর্ভোগের মুখে পড়তে হয়।

দেবীগঞ্জ উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ‘IRIDP-3’ প্রকল্পের আওতায় পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার সোনাহার মল্লিকাদহ ইউনিয়নের উমেষের ডাঙ্গা এলাকায় খড়খড়ি নদীর ওপর ৯০ মিটার দীর্ঘ একটি পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। সেতুটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ কোটি ৩০ লাখ ৪৭ হাজার ৪৮৪ টাকা। নির্মাণের দায়িত্বে রয়েছে চট্টগ্রামের নাসিরাবাদ এলাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোহাম্মদ ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স লিমিটেড।

২০২৩ সালের ১৮ অক্টোবর নির্মাণকাজ শুরু হয় এবং ২০২৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হওয়ার পর দুই মাস অতিবাহিত হলেও এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি পিলার নির্মাণ কাজও।

বুধবার (২১ মে) সরেজমিনে সোনাহার মল্লিকাদহ ইউনিয়নের উমেষের ডাঙ্গা এলাকায় সেতু নির্মাণকাজের অগ্রগতি পরিদর্শনে দেখা যায়, নির্ধারিত চারটি পিলারের মধ্যে এখন পর্যন্ত তিনটি পিলারের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি একটির কাজ এখনো শেষ না হওয়ায় সেতুর মূল কাঠামো নির্মাণেও কোনো অগ্রগতি নেই। নদীর দুই পাশেই নির্মাণসামগ্রী এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। কোথাও কোথাও রডে মরিচা ধরে গেছে। পিলারের ঢালাইয়ের কাজে ব্যবহৃত পাথরের সঙ্গে মাটির মিশ্রণ স্পষ্ট যা নির্মাণকাজের মান নিয়েও প্রশ্ন তুলছে। এ ছাড়া কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে নদীতে পানি বাড়তে শুরু করেছে।

স্থানীয়রা জানান, আগে এই নদীর ওপর বাঁশের তৈরি একটি সাঁকো থাকলেও সেতুর নির্মাণ শুরুর আগে সেটি ভেঙে ফেলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ফলে বর্তমানে এলাকাবাসীকে ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হতে হচ্ছে। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এমন ধীরগতিতে কাজ চলতে থাকলে আগামী বর্ষার আগেই সেতুর নির্মাণ শেষ হওয়া অনিশ্চিত, আর তা হলে ভোগান্তি আরও চরমে পৌঁছাবে।

স্থানীয় বাসিন্দা গোলাম রব্বানী বলেন, ২০২৩ সালে সেতুর কাজ শুরু হয়েছে। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। অথচ এখনো পিলার নির্মাণের কাজই শেষ হয়নি। এখানে একটা বাঁশের সাঁকো ছিল, সেটিও কাজের সুবিধার্থে ভেঙে ফেলা হয়েছে। যেভাবে কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে অল্প কিছুদিনের মধ্যে নদীতে পানি চলে আসবে। তখন এই এলাকার মানুষ কীভাবে যাতায়াত করবে?

ভ্যানচালক আব্দুল হাকিম বলেন, এক বছর ধরে ব্রিজের কাজ চলছে। কখনো কাজ করে, আবার থেমে যায়। যাতায়াত করতে খুব কষ্ট হয়। নদী পার হতে আমাদের অনেক ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে।

কলেজ শিক্ষার্থী মো. মামুন ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এখানে কোনো ব্রিজ ছিল না। বাঁশের সাঁকো দিয়ে কষ্ট করে স্কুল-কলেজে যেতে হতো। দেড় বছর আগে ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু হলেও এখনো তা শেষ হয়নি। মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে, কিন্তু কবে কাজ শেষ হবে তার কোনো খবর নেই।

কাজের নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হলেও কেন এখনো ব্রিজের অর্ধেক কাজও সমাপ্ত হয়নি- এমন প্রশ্নে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোহাম্মদ ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স লিমিটেডের প্রতিনিধি আরিফ ইসলাম বলেন, আমি এখানে ১৫ দিন আগে এসেছি। এর আগে এখানে কী হয়েছে সে সম্পর্কে আমি কিছু জানি না। আপনাদের অভিযোগগুলো আমি শুনেছি সেগুলো আমি ঠিকাদারকে জানাব।

স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক আল আমিন খন্দকার বলেন, সেতু নির্মাণের শুরু থেকেই অনিয়ম চলছে। ঢালাইয়ের কাজে দিনাজপুরের ব্ল্যাক স্টোন ব্যবহারের কথা থাকলেও মাটিযুক্ত নিম্নমানের পাথর ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব অনিয়ম এলজিইডির ইঞ্জিনিয়ারকে জানালে তিনি উল্টো মামলার হুমকি দেন। এই এলাকায় কাজ না করার কথা বলেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দেবীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. শাহরিয়ার ইসলাম শাকিল বলেন, সময় বাড়ানো হয়েছে। আকস্মিক বৃষ্টিপাতের কারণে টেম্পোরারি সেতুটি নষ্ট হয়ে গেছে। এটি পুনরায় নির্মাণ করে সচল করা হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

লাহোরে ফিরলেন রিশাদ, তিন বাংলাদেশি এক ফ্র্যাঞ্চাইজিতে!

আদালতের রায়ে জনগণের বিজয় হয়েছে : ফখরুল

হারানো বিড়ালের জন্য পুরস্কার ঘোষণা

বাংলাদেশকে কোনো পরাশক্তির ছায়া-যুদ্ধক্ষেত্র করতে দেওয়া যাবে না: এবি পার্টি

শুধু হৃদয় ভাঙা নই, আমি ক্ষুব্ধ, লজ্জিত: বাঁধন

ইশরাকের সমর্থকদের উচ্ছ্বাস, দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি

কুমিল্লা সীমান্তে নারী-শিশুসহ ১৩ জনকে পুশইন

বলিউডকে বিদায় বললেন সুনীল কন্যা আথিয়া শেঠি

২০২৫: ফুটবলের শিরোপা খরা কাটানোর বছর

ইশরাকের শপথ আটকাতে আপিল করবেন রিটকারীর আইনজীবী

১০

জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে বিএনপি

১১

সিনেমা থেকে বাদ দীপিকা পাডুকোন

১২

মমতাজের ওপর ডিম ও জুতা নিক্ষেপ

১৩

লজ্জার সিরিজ হারের পর আত্মসমালোচনায় লিটন

১৪

‘দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ ছাড়া আন্দোলন থামবে না’

১৫

আমাদের কি আসিফ নজরুলের পদত্যাগ চাওয়া উচিত নয়, প্রশ্ন সারজিসের

১৬

৬ দিনের রিমান্ডে মমতাজ

১৭

আরও এক বিচারপতিকে অপসারণ

১৮

মেয়র নির্বাচন করবেন সাদিক কায়েম ও হাসনাত? 

১৯

গাজার ‘সন্তানরা ধীরে ধীরে মারা যাচ্ছে’

২০
X