কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩১ জুলাই ২০২৫, ০৭:১৩ পিএম
আপডেট : ৩১ জুলাই ২০২৫, ০৭:৫৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

গোপালগঞ্জে এনসিপি নেতাদের উদ্ধার প্রসঙ্গে সেনাসদরের বক্তব্য

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উদ-দৌলা। ছবি : সংগৃহীত
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উদ-দৌলা। ছবি : সংগৃহীত

কোনো একটি দল কিংবা ব্যক্তি বিবেচনায় নয়, বরং জীবনের হুমকি বিবেচনায় গোপালগঞ্জ থেকে এনসিপি নেতাদের উদ্ধার করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে সেনাসদর।

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) ঢাকা সেনাসদরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সেনাসদরের মিলিটারি অপারেশনস পরিদপ্তরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উদ-দৌলা এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, অবশ্যই জীবন রক্ষা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং আমরা সেটা করেছি ইতোপূর্বে। কোনো দল নয় বরং জীবন রক্ষার্থেই আমাদের এ কাজটি করতে হয়েছে।

গত ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কর্মসূচিতে দফায় দফায় হামলার পর পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ বাধে। একপর্যায়ে পুরো শহরে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষের মধ্যে গুলিতে চারজন নিহত এবং অন্তত ৯ জন গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশতাধিক আহত হন। পরে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরেকজনের মৃত্যু হয়। এসময় এনসিপির শীর্ষ নেতাদের নিজেদের এপিসিতে করে উদ্ধার করে সেনাবাহিনী।

সংবাদ সম্মেলনে জানতে চাওয়া হয়, এনসিপির প্রতি সেনাবাহিনীর বিশেষ নজর আছে কিনা?

আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন শেষে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উদ-দৌলা বলেন, কোনো দলকে উদ্দেশ্য করে নয়। যাদের জীবন হুমকির মধ্যে বিবেচনায় পড়েছিল তাদের আমরা উদ্ধার করেছি। সেটা দলের পরিচয়ে মুখ্য বিষ্য ছিল না। জীবন রক্ষার্থেই এ কাজটি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমি নিশ্চিত করতে চাই সেনাবাহিনী আয়ত্তের ভেতরে আছে, কাছাকাছি আছে সেনাবাহিনীর দায়িত্বের ভেতরে আছে ওই সময় কারও জীবন বিপন্ন হবে বলে আমি মনে করি না। এটা যে কারও বেলায় আমাদের অবস্থান একই রকম থাকবে। সিনিয়র লিডারশিপের নির্দেশনা একই লাইনে দেওয়া।

কোনো একটা আকস্মিকভাবে মৃত্যুর মুখে রেখে বা মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছে এ সময় তার প্রতি নজর না দিয়ে সেনাবাহিনী দাঁড়িয়ে থাকবে না বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, কোনো জীবনহানী ঘটুক, এটা কখনোই আমরা কাম্য করি না, আশাও করি না। কিন্তু গোপালগঞ্জে যে ঘটনাটি হয়েছে সেটি দুঃখজনক। গোপালগঞ্জের ঘটনা কোনো প্রেক্ষাপটে ঘটেছে এবং কেন সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বল প্রয়োগ করতে হয়েছিল সে বিষয়ে তদন্ত করতে একজন বিচাপতির নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের কথা বলেন তিনি।

তদন্ত কমিটি খুঁজে বের করবে, কীভাবে এটা হয়েছে- কেন হয়েছে, প্রেক্ষাপট কী ছিল। সে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন তিনি।

মেজর সাদিক নামে এক কর্মকর্তা আওয়ামী লীগের কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন আলোচনার বিষয়ে জনতে চাইলে নাজিম-উদ-দৌলা বলেন, মেজর সাদিকের বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। যদিও বিষয়টি তদন্তাধীন আছে। তারপরেও আমি বলব, যে এরকম একটা ঘটনার কথা জানার পরে সে সেনাবাহিনী হেফাজতে আছে এবং তদন্ত চলমান আছে। তদন্তে তার দোষ প্রমাণিত হলে নিঃসন্দেহে সেনাবাহিনীর প্রচলিত নিয়মে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যেহেতু বিষয়টি তদন্তাধীন আছে এর বেশি এই মুহূর্তে বলা আমার মনে হয় সমীচীন হবে না।

পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন গোষ্ঠীর সমসাময়িক সহিংসতার বিষয়ে তার ভাষ্য, সেখানে ইউপিডিএফ, জেএসএসের মতো যে দলগুলো আছে, তাদের আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময় মারামারি হয়। অবশ্য সেনাবাহিনী কাজ করছে এবং সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করছে যাতে করে এটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে। সেনাবাহিনী একাই কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের স্টেক হোল্ডার নয়। বেসামরিক প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন সবাই কিন্তু এটার অংশ। সবাই যদি সমন্বিতভাবে কাজ করে আমি নিশ্চিত যে এটাকে আরও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে যাওয়া সম্ভব এবং এটা অবশ্যই প্রয়োজন।

পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী কেএনফের সঙ্গে আরাকান আর্মির যোগসাজশের বিষয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আরাকান আর্মি এখন এমন একটা অবস্থায় আছে, তাদের সঙ্গে কেএনএফের যোগসূত্র সৃষ্টি হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। তারা মোটামুটি একই গোত্রীয় মানুষ এবং একই ধরনের মানসিকতা নিয়ে তারা কাজ করছে। সেক্ষেত্রে কেএনএফ আরাকান আর্মির কাছ থেকে যদি কোনো অস্ত্র পেয়েও যায় এটাতে আমি অবাক হবো না।

কেএনএফ কোনো অবস্থাতেই আধিপত্য বিস্তার করতে পারছে না জানিয়ে তিনি বলেন, যখন কেএনএফের উত্থান হলো আমরা যদি খুঁজে দেখি সে সময় সময় কেএনএফের কর্মকাণ্ড। কেএনএফ বলব না নিঃশেষ হয়েছে, কিন্তু বহুলাংশে তাদের আধিপত্য কমেছে। শুরুর দিকে কেএনএফের সঙ্গে সংঘর্ষে সেনাবাহিনীর আট জন সদস্য নিহত হয়েছে, অসংখ্য আহত হয়েছে। গত কয়েক মাসে এরকম কোনো ঘটনা দেখা গেছে কিনা প্রশ্ন রাখেন তিনি।

এই সেনাকর্মকর্তা বলেন, আমরা নিজেদের অভিযান পরিচালনা করার কারণে কেএনএফেরই অনেক সদস্য হতাহত হয়েছে, তাদের অনেকগুলো অস্ত্র উদ্ধার করতে পেরেছি। তাদের যে বিভিন্ন বেইজ বা ট্রেনিং ক্যাম্প সেগুলো আমরা খুঁজে পেতে সক্ষম হয়েছি এবং সেগুলো ধ্বংস করা হয়েছে।

একটি স্বাধীন দেশে এরকম একটা কোন গোত্রের আধিপত্য কোনো অবস্থাতেই মেনে নেওয়ার নয় জানিয়ে তিনি বলেন, সবমিলিয়ে যদি বলি কেএনএফ কোনো অবস্থাতেই আধিপত্য বিস্তার করছে না বরং কেএনএফ এখন অন্তত নাজুক অবস্থায় আছে। আমাদের অভিযান চলমান আছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে চাই সবার সম্মিলিতভাবে কাজ করলে কেএনএফকে সমূলে উৎপাটন করা সম্ভব এবং সেটা অবশ্যই প্রয়োজন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জুমার দিন আসরের পর দোয়া কবুল বেশি হয়?

সাবেক আইজিপি বেনজীরের ‘ডক্টরেট’ ডিগ্রি স্থগিত

আবারও সৈকতে ভেসে এলো মৃত ডলফিন, শরীরে আঘাতের চিহ্ন

৩০ বছর ধরে হিমায়িত ভ্রূণ থেকে জন্ম নিল মার্কিন শিশু

৯ দফার আঁতুড়ঘর রুম নম্বর ১২০৪ থেকে বলছি...

স্বামীর ভালোবাসা ফিরিয়ে আনার কোরআনি আমল

ফ্যাসিবাদ বিদায় নিলেও ষড়যন্ত্র থেমে নেই : সপু

স্পেন-জার্মানিসহ ৫ দেশ আকাশ থেকে ত্রাণ ফেলল গাজায়

ছাদ ধসের ঘটনা তদন্তে ইউজিসির কমিটি গঠন 

আটক ৩ বাংলাদেশিকে ফেরত দিল বিএসএফ

১০

অজ্ঞাত যানের চাপায় সড়কে ঝরল পুলিশ সদস্যের প্রাণ

১১

এক দিনেই এনবিআরের ৪৯ কর্মকর্তা বদলি

১২

পর্যটকদের জন্য দ্বার খুলে দিচ্ছে বিশ্বের অন্যতম বিচ্ছিন্ন দেশ

১৩

তিন দিনের সফরে ভারত আসছেন মেসি!

১৪

মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য দুঃসংবাদ

১৫

পরকীয়া সন্দেহে স্ত্রীকে হত্যা, সন্তানসহ থানায় স্বামী

১৬

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন ভবনের ছাদধসের ঘটনা তদন্তে ইউজিসির কমিটি গঠন

১৭

রূপায়ণ গ্রুপে চাকরির সুযোগ

১৮

৫ মণ গাঁজাসহ যুবক গ্রেপ্তার

১৯

ঘোড়ার গাড়িতে চড়িয়ে শিক্ষক-অফিস সহায়কের বিদায়

২০
X