কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৫ আগস্ট ২০২৫, ০৪:৫২ পিএম
আপডেট : ১৫ আগস্ট ২০২৫, ০৪:৫৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ এভাবে চলতে পারে না’

রাজধানীর শ্রীশ্রী ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মাষ্টমী উৎসব-২০২৫ উপলক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তরা। ছবি : কালবেলা
রাজধানীর শ্রীশ্রী ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মাষ্টমী উৎসব-২০২৫ উপলক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তরা। ছবি : কালবেলা

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে বৈষম্যহীন রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় ঘোষিত হয়েছে, বিরাজিত পরিস্থিতি তা ধারণে ব্যর্থ হচ্ছে বলে মনে করে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি।

সংগঠন দুটি বলছে, তারা শঙ্কিত এ কারণে যে, অব্যাহত সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসে বিপর্যস্ত ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায় এই নতুন পরিস্থিতিতে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছেন।

সংগঠন দুটি আরও বলেছে, অন্তর্বর্তী সরকার, সেনাবাহিনী, রাজনৈতিক দল ও ছাত্র নেতাদের আন্তরিক চেষ্টায় গত কয়েক মাসে সাম্প্রদায়িক হামলার তীব্রতা কমে এলেও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি, এখনো তা চলছে। তবে এখন যেটা ভয়ঙ্কর হয়ে দাঁড়াচ্ছে, তা হলো নীরব চাঁদাবাজি। যার মাধ্যমে হুমকি দেওয়া হচ্ছে যে, নির্ধারিত অর্থ না দিলে তাদের বাড়ি-ঘর, জায়গা-জমি থাকবে না। দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিন্দু শিক্ষকদের হুমকি দিয়ে পদত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে। ফলে এক উদ্বেগজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আমরা অবিলম্বে এ পরিস্থিতির অবসান দাবি করছি। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ এভাবে চলতে পারে না।

শুক্রবার (১৫ আগস্ট) সকালে রাজধানীর শ্রীশ্রী ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শুভ আবির্ভাব তিথি জন্মাষ্টমী উৎসব-২০২৫ উপলক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় লিখিত বক্তব্যে এসব কথা বলা হয়েছে। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি যৌথভাবে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার কথিত ও পরিকল্পিত অভিযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে অতি সম্প্রতি লালমনিরহাট ও রংপুরের গঙ্গাচড়ার ঘটনা উল্লেখ করতে হয়। ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতনের এই নতুন কৌশল গভীর শঙ্কা ও উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। কেউ যদি ধর্ম অবমাননা করেন, তিনি যে ধর্মেরই হোন না কেন, আমরা তার বিচার ও যথোপযুক্ত শাস্তি দাবি করি। কিন্তু এর আগে নিশ্চিত হতে হবে, কাজটি সত্যিই তিনি করেছেন কিনা। দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, নিশ্চিত হওয়ার আগেই ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করে নির্বিচারে পাড়ার পর পাড়ায় হামলা চালানো হচ্ছে, লুটপাট-অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে। নারীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন প্রকাশ্যে।

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত বছরের ৮ আগস্ট দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে এসেছিলেন। প্রধান উপদেষ্টা সেদিন ঘোষণা করেছিলেন, বাংলাদেশকে তিনি ‘এক পরিবার’ হিসেবে দেখতে চান। আমরা এই ঘোষণায় নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতে পাই। কিন্তু পরবর্তী সময়ে আমরা অত্যন্ত বেদনার্ত চিত্তে লক্ষ্য করেছি, সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা অস্বীকার করা হয়েছে। সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত প্রায় এক ডজন কমিশনের মধ্যে দুটিতে মাত্র দুজন সংখ্যালঘু সদস্য অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। সংবিধান সংস্কারসহ গুরুত্বপূর্ণ কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো অবস্থান নেই। সংখ্যালঘুদের কথা শুনতে চাওয়া হয়নি। এই প্রবণতা এক পরিবারের ধারণার সঙ্গে যায় না। আমরা মনে করি, যে নতুন বাংলাদেশের কথা বলা হচ্ছে, তাতে প্রত্যেক নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। রাষ্ট্র ও সমাজ থেকে সব বৈষম্যের অবসান ঘটাতে হবে।

মতবিনিময় সভায় এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, সংখ্যালঘুদের জীবনাচরণ হুমকির সম্মুখীন। তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। নারীরা রাস্তাঘাটে বের হলে নানাভাবে কটূক্তি করা হচ্ছে। প্রতিবাদ করলে আরও অনেক ধরনের ঘটনা ঘটে। এ অবস্থায় সংখ্যালঘুরা হীনম্মন্যতায় ভুগছেন।

জন্মাষ্টমী উৎসব ঘিরে নিরাপত্তা আশঙ্কা আছে কিনা, এ-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বলেন, সরকার পরিপূর্ণ নিরাপত্তার পদক্ষেপ নিয়েছে। তারা আশা করছেন, কোনো সমস্যা হবে না। বরাবরের মতো এবারও উৎসবমুখর পরিবেশে ঢাকাসহ সারা দেশে জন্মাষ্টমী উৎসব উদযাপিত হবে।

মতবিনিময় সভায় জানানো হয়, জন্মাষ্টমী উপলক্ষে পূজা উদযাপন পরিষদ ও মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি প্রতি বছরের মতো এবারও দু’দিনের অনুষ্ঠানসূচি গ্রহণ করেছে। সূচি অনুযায়ী, শনিবার (১৬ আগস্ট) বিকেল ৩টায় জন্মাষ্টমীর মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। পলাশীর মোড়ে কেন্দ্রীয় জন্মাষ্টমী মিছিলের আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান, বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন, সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মো. মঈন খান। শোভাযাত্রাটি প্রতি বছরের মতোই একই পথে গুলিস্তান হয়ে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কে গিয়ে শেষ হবে।

মতবিনিময় সভায় পূজা উদযাপন পরিষদের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য কাজল দেবনাথও বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে পূজা উদযাপন পরিষদের সহ-সভাপতি মনীন্দ্র কুমার নাথ, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সহ-সভাপতি বাবুল দেবনাথ, শ্যামল কুমার রায়, যুগ্ম সম্পাদক শুভাশীষ কুমার বিশ্বাস (সাধন), ব্রজগোপাল দেবনাথ প্রমুখ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ঢাকায় আনা হলো হাতির আঘাতে আহত চিকিৎসকদের

খালেদা জিয়ার জন্মবার্ষিকীতে ক্যালিফোর্নিয়ায় দোয়া মাহফিল

হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ

হোয়াটসঅ্যাপে নতুন ফিচার, জেনে নিন কী থাকছে

জনগণ নির্বাচনমুখী হলে কেউ আর আটকতে পারবে না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

আগামী নির্বাচন পিআর পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হবে : গোলাম পরওয়ার

ইংল্যান্ডের ১৩৬ বছরের রেকর্ড ভাঙতে যাচ্ছেন বেথেল

দেশে আরেক চেতনার উদ্ভব হয়েছে : রিজভী

বানানীতে রাব্বি হত্যা নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিল র‌্যাব

তরুণদের রক্তে ফিরতে পারে ত্বকের তারুণ্য

১০

গণতন্ত্রের জন্য জাতীয় ঐক্য বজায় রাখতে হবে : সালাহউদ্দিন 

১১

শরতের প্রথম দিন আজ

১২

বিপুল অস্ত্র উদ্ধার, রাজশাহীতে বাড়ি ঘিরে রেখেছে সেনাবাহিনী

১৩

কোনো যুদ্ধবিরতি, ‍কোনো চুক্তি হয়নি : বৈঠকের ফল ‘শূন্য’

১৪

৬৩ বছরে পা রাখতেন রক লেজেন্ড আইয়ুব বাচ্চু

১৫

টাকার বিনিময়ে শেখ মুজিবকে নিয়ে পোস্ট? সামনে এলো সত্য ঘটনা

১৬

যমুনায় দ্রুত বাড়ছে পানি, প্লাবিত নিম্নভূমি

১৭

শসা খেয়ে পানি খাচ্ছেন? হতে পারে যেসব বিপদ

১৮

প্রিমিয়ার লিগে যে ইতিহাস গড়লেন সালাহ

১৯

দেব-শুভশ্রী জুটি কেন জনপ্রিয়, জানেন না দেব নিজেও

২০
X