কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২:২০ এএম
অনলাইন সংস্করণ
ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদদের অভিমত

দেশে গণতন্ত্র না থাকলে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, দেশে যদি নির্বাচিত সরকার না থাকে, তাহলে জবাবদিহিতা ও গণতন্ত্র থাকে না। আর যদি গণতন্ত্র না থাকে, তাহলে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনলেও অর্থনীতিতে সংস্কারের চাকা ঘুরেনি।

বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর গুলশানের লেকশোর হোটেলে বিএনপি আয়োজিত 'সংকট থেকে স্থিতিশীলতা : অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ভিত্তি গণতন্ত্র' শীর্ষক সেমিনারে তারা এ কথা বলেন।

সেমিনারে পলিসি এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান ও অর্থনীতিবিদ এম মাশরুর রিয়াজ বলেন, রাজস্ব, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার শৃঙ্খল ভেঙ্গে পড়েছে। যা ঠিক করতে গেলে তিনটি জিনিস করতে হবে। প্রথমত, আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনার প্রয়োজন। বিগত সরকারের আমল থেকে রাষ্ট্রের আর্থিক শৃঙ্খলা ভেঙ্গে পড়েছে। বিনিয়োগকারী, গ্লোবাল কমিউনিটি, গ্লোবাল ইকোনমিক পার্টনার, তারা যে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ডিল করবে; যেই পলিসির আন্ডারে তারা কাজ করবে সেটার প্রেডিক্টিবিলিটি, কনসেন্টেন্সি সব কিছুর উপর কনফিডেন্স নির্ভর করবে। এই কনফিডেন্স সাধারণত নির্বাচিত সরকারের আমলে যেভাবে হয়, অনির্বাচিত বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে সেইভাবে হয় না।

তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার কিছু ভাল কাজ করেছে। ম্যাক্রোতে কিছু স্থিতিশীলতা তৈরি, সেন্ট্রাল ব্যাংককে তার স্বাধীনতা ফেরত দিয়েছে। সংস্কারের ইচ্ছা ব্যক্ত করেছে। আমরা দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে যেটা শুনেছি, তাদের কনসার্ন এবং আমরা দেখছি সরকারের পক্ষ থেকে আউটরিচটা খুব কম। সরকার তাদের এনগেইজ করছে কম। এর ফলে আত্মবিশ্বাস আবার আঘাতপ্রাপ্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বাণিজ্য-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য সংস্কার, পুরো অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা সংস্কার বহু বছর ধরে বকেয়া হয়ে আছে। কিন্তু আগে তো হয়নি, গত এক বছরে সেই রিফর্মের চাকা আসলে ঘুরেনি। জনগণের ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত সরকার আসার আগে সেই সংস্কারের যেই শক্তিটা প্রয়োজন হয়, আত্নবিশ্বাস প্রয়োজন হয়, সেটা পাওয়া যাবে না। সুতরাং সেই দিক থেকেও আমাদের যে ডেমোক্রেটিক ট্রানজিশন; ইলেকশনের মাধ্যমে সেটা খুব ত্বরান্বিত হওয়া প্রয়োজন।

এই অর্থনীতিবিদের মতে, জনগণের ম্যান্ডেটসহ নির্বাচিত সরকার সেই গণতন্ত্র, এর সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ওতপ্রোত সম্পর্ক আছে। আটলান্টিক কাউন্সিল, হেরিটেজ ফাউন্ডেশন সবগুলোর প্রতিবেদন দেখাচ্ছে যে, গণতান্ত্রিক পরিবেশের সঙ্গে একটা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি জড়িত। এর যদি কমতে থাকে; সমৃদ্ধি ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার ইনডেক্স যদি গত ৫ বছরেরটা দেখেন, আর এই বছরেরটা দেখেন, দেখবেন- এর পরিবর্তন হয়েছে । এই পরিবর্তনকে সুসংহত করতে গেলে আমাদের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে হবে, সেখানে নির্বাচিত সরকার ও নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ।

বিজিএমইএ'র সভাপতি মাহমুদ আহসান খান বাবু বলেন, গত পনের বছরে আমরা দেখেছি, গণতন্ত্র না থাকলে জবাবদিহিতা থাকে না। জবাবদিহিতা না থাকলে বিনিয়োগ হবে না। লুটপাট হবে এবং লুটপাটের সংস্কৃতি চালু হবে। সুতরাং দেশের মানুষের স্বার্থে এবং যদি সত্যিকারের জবাবদিহিতামূলক সরকার আমরা চাই, তাহলে অবশ্যই গণতন্ত্র লাগবে। গণতন্ত্র না থাকলে যে সমস্যাগুলো হয়, সেটা আমরা গত ১৫ বছরে দেখেছি। বিজিএমইএ থেকে আমরাও চাই না যে, বাংলাদেশ শুধুমাত্র একটিমাত্র পণ্যের ঊপর নির্ভরশীল থাকুক। পণ্যের বৈচিত্র্যকরণ যেমন লাগবে, সাথে সাথে বাজার বৈচিত্র্যকরণও লাগবে। সেটা করতে হলে আমি আশা করবো, আগামীতে একটা ভালো নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে যদি জনগণ বিএনপিকে ভোট দেয়, আশা করি- তারা একটি শক্তিশালী নীতি করবে, যেটা ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে আসা প্রতিনিধি বলেছেন। কেউ ইনভেস্ট করতে আসার পর নীতিতে যদি ভিন্ন চিত্র পাওয়া যায়, তাহলে ফরেন ইনভেস্টমেন্ট আসবে না। আশা করি, ভবিষ্যতে যারা দেশ পরিচালনায় আসবেন, এই বিষয়গুলো অনুসরণ করবেন। এটা যদি অনুসরণ করা হয়, অবশ্যই দেশে বিনিয়োগ আসবে।

বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ইসরাফিল খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমরা ঋণ নিয়েছি এবং টাকা ছাপিয়েছি। আমাদের ঋণভিত্তিক অর্থনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। দেশে ব্যবসায়ীরা অনেক নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। অনেক বেশি নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থায় অর্থনীতি ঠিকঠাক কাজ করে না। নির্বাচিত হলে বিএনপির সবচেয়ে বড় কাজ হবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা।

বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়ালের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, অর্থনীতিবিদ ড. রাশেদ তিতুমীর, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ড. মাহদী আমিন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসিরউদ্দিন আহমেদ অসীম, আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, স্পেশাল এসিস্ট্যান্ট টু দ্যা চেয়ারপার্সনস ফরেইন অ্যাফেয়ার্স এডভাইজরি কমিটির ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনসহ ঢাকাস্থ আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন, বৃটেনসহ ১০ দেশের রাষ্ট্রদূত ও ওয়ার্ল্ড ব্যাংককের প্রতিনিধি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

গভীর রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে জামায়াতের এমপি প্রার্থীর অবস্থান

নোভার্টিসের নতুন নাম নেভিয়ান লাইফসায়েন্স

হংকংয়ের বিপক্ষে ম্যাচ জিতিয়ে যা বললেন লিটন

২৮তম ব্রোকার হিসেবে কোয়ান্ট থেকে ওএমএস নিচ্ছে পূবালী ব্যাংক সিকিউরিটিজ

অর্ডার বিপক্ষে গেলে ফেসবুকে আলোচনা না করতে আইনজীবীদের প্রতি আহবান বিচারপতির

বিএনপি ক্ষমতায় এলে স্বাস্থ্যসেবায় আমূল পরিবর্তন আসবে : আফাজ উদ্দিন

ডাকসুতে শিবিরের জয়ে শশী থারুরের উদ্বেগ, জবাব দিলেন মেঘমল্লার

ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদদের অভিমত / দেশে গণতন্ত্র না থাকলে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না

ডাকসুতে শিবিরের জয় ভারতের জন্য উদ্বেগজনক : শশী থারুর

নির্বাচন ও বিচারের মতোই গুরুত্বপূর্ণ হলো জুলাই সনদ : প্রধান উপদেষ্টা

১০

পরীমনির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ী নাছিরের মামলা চলতে বাঁধা নেই

১১

সর্ব মিত্র চাকমার ফেসবুক আইডি গায়েব করল কারা

১২

সাগরে ফের লঘুচাপের আভাস, বাড়বে বৃষ্টি

১৩

লিটন-হৃদয়ের ব্যাটে ভর করে টাইগারদের সহজ জয়

১৪

আন্তর্জাতিক খতমে নবুওয়ত মহাসম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটির জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত

১৫

শনিবার বিদ্যুৎ থাকবে না সিলেটের যেসব এলাকায়

১৬

‘জাকসুর ফল না নিয়ে যাব না’, সিনেট ভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের অবস্থান

১৭

বৃষ্টি বাড়বে না কমবে, জানাল আবহাওয়া অফিস

১৮

ডাক্তার না হয়েও দাঁত ও চোখের চিকিৎসা করেন দুই ভাই

১৯

৫৪৭ শিক্ষকের এমপিও নিয়ে সিদ্ধান্ত জানাল মাউশি

২০
X