

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এবার অ্যাপ্রুভার বা রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন পুলিশের সাবেক উপপরিদর্শক (এসআই) শেখ আবজালুল হক। জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় তিনি ঢাকার আশুলিয়া থানায় কর্মরত ছিলেন। সে সময় আশুলিয়ায় ছয়জনকে গুলিতে হত্যা ও তাদের লাশ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল।
এ ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এ মামলার ২৩তম সাক্ষী হিসেবে আজ জবানবন্দি দেন তিনি।
বুধবার (১৯ নভেম্বর) সাবেক এসআই শেখ আবজালুল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ ‘অ্যাপ্রুভার’ বা রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন। এ নিয়ে দ্বিতীয় কোনো পুলিশ সদস্য মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ‘অ্যাপ্রুভার’ হলেন।
এর আগে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের আরেকটি মামলায় ‘অ্যাপ্রুভার’ হন।
মামুনের সঙ্গে ওই মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানও আসামি ছিলেন। মামলাটির রায় ঘোষণা হয় গত সোমবার। রায়ে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ড এবং মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
আশুলিয়ায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আসামি ১৬ জন। এর মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, আশুলিয়া থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম সায়েদ, এএসআই বিশ্বজিৎ সাহাসহ আট আসামি পলাতক।
গ্রেপ্তার হওয়া বাকি আসামিরা হলেন ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী ও মো. শহিদুল ইসলাম (সাভার সার্কেল); ঢাকা জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সাবেক পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন, আশুলিয়া থানার সাবেক উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল মালেক, আরাফাত উদ্দীন, কামরুল হাসান ও শেখ আবজালুল হক এবং সাবেক কনস্টেবল মুকুল চোকদার।
এ মামলার ২৩তম সাক্ষী হিসেবে আজ জবানবন্দি দেন শেখ আবজালুল। তিনি জবানবন্দিতে বলেন, ৫ আগস্ট (২০২৪ সাল) আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আশুলিয়া এলাকায় ছাত্র-জনতা বিজয় মিছিল বের করেন। সেই মিছিল থানার দিকে এলে তৎকালীন ওসি সায়েদের নির্দেশে বিশ্বজিৎসহ আরেকজন গুলি করেন।
জবানবন্দি শেষে আবজালুলকে জেরা করেন এ মামলার আসামি আবদুল্লাহিল কাফীর আইনজীবী সৈয়দ মিজানুর রহমান। তার প্রশ্নের জবাবে আবজালুল বলেন, গত বছরের ১৫ আগস্ট আশুলিয়া থানার অস্ত্রাগারের দায়িত্বে থাকা এসআই আউয়ালের কাছে তিনি অস্ত্র ও গুলি জমা দেন। ৫ আগস্ট (২০২৪ সাল) তার নামে ইস্যু করা ১০টি গুলিই জমা দেন।
জেরায় আবজালুল বলেন, গত বছরের ৫ থেকে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত তিনি ‘ট্রমায়’ ছিলেন। ১৫ আগস্ট অস্ত্র জমা দিতে এসে তিনি আশুলিয়া থানা এলোমেলো অবস্থায় দেখেন।
জবানবন্দি শেষে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে ব্রিফিং করেন প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়েছেন আবজালুল। তবে আবজালুল আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর ঘটনা দেখেননি। লাশে আগুন দেওয়ার কথা তিনি শুনেছেন। প্রসিকিউশন মনে করে, আবজালুল আশুলিয়ার ঘটনা সম্পর্কে পূর্ণ সত্য প্রকাশ করেছেন।
মন্তব্য করুন