

ফর্টিফাইড রাইস উৎপাদনে মান নিয়ন্ত্রণ, গুণগত মান নিশ্চিতকরণ এবং আদর্শ পরিচালনা পদ্ধতি বিষয়ে দুদিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। টেকনোসার্ভ পরিচালিত মিলার্স ফর নিউট্রিশন কোয়ালিশন, নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনাল (এনআই) এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)-এর যৌথ উদ্যোগে এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
প্রশিক্ষণটি দুই ব্যাচে বিভক্ত ছিল। প্রথম ব্যাচ শনি ও রোববার (২২-২৩ নভেম্বর) এবং দ্বিতীয় ব্যাচ সোম ও মঙ্গলবার (২৪-২৫ নভেম্বর) সাভারের ব্র্যাক সিডিএমে অনুষ্ঠিত হয়। সারা দেশ থেকে আগত ১৪০ জন ফর্টিফাইড রাইস ব্লেন্ডিং মিলের মালিক ও প্রতিনিধিরা এই প্রশিক্ষণে অংশ নেন।
প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য ছিল ফর্টিফাইড রাইস উৎপাদনে মান নিয়ন্ত্রণ, গুণগত মান নিশ্চিতকরণ ও আদর্শ পরিচালনা পদ্ধতি অনুসরণে কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধি করা। যাতে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক পরিচালিত সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির (সোশ্যাল সেফটিনেট প্রোগ্রাম) আওতায় কার্যকর, মানসম্মত ও নিরাপদ ফর্টিফাইড রাইস উৎপাদন এবং বিতরণ নিশ্চিত করা যায়।
প্রশিক্ষণে টেকনোসার্ভ, নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনাল (এনআই) বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি), বুলার, খাদ্য অধিদপ্তর এবং মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষকরা প্রশিক্ষণ সেশনগুলো পরিচালনা করেন।
প্রশিক্ষণের প্রথম দিনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবুল হাছানাত হুমায়ুন কবীর। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মো. ফিরোজ উদ্দিন খলিফা, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির ডেপুটি হেড অব প্রোগ্রাম মেরিবেথ ব্ল্যাক এবং বাংলাদেশ ফর্টিফাইড রাইস মিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফআরএমএ) সভাপতি সৈয়দ জুলফিকার মাহমুদ নিয়াজ।
প্রশিক্ষণের প্রথম দিন স্বাগত বক্তব্য দেন টেকনোসার্ভের কান্ট্রি প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. গুলজার আহম্মেদ, ডব্লিউএফপির প্রোগ্রাম পলিসি অফিসার ড. মোহাম্মদ মাহবুবর রহমান এবং নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনাল-বাংলাদেশের প্রোগ্রাম অফিসার ইঞ্জিনিয়ার মো. আকিব আবরার।
বক্তারা ফর্টিফাইড রাইস উৎপাদনে মান নিয়ন্ত্রণ, গুণগত মান নিশ্চিতকরণর বিষয়টি গুরুত্বের সাথে তুলে ধরেন। এ ছাড়া সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিকে (সোশ্যাল সেফটিনেট প্রোগ্রাম) বেগমান এবং সুবিধাভোগীদের কাছে পুষ্টি সমৃদ্ধ চাল সরবরাহের বিষয়টিও অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে উপস্থাপন করেন।
প্রধান অতিথি মো. আবুল হাছানাত হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘সরকারের নেতৃত্বে ফর্টিফাইড রাইস উৎপাদন ও বিতরণে পুষ্টিচাল মিশ্রণ মিল মালিকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। পুষ্টি সমৃদ্ধ চালের মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে তাদের অবদান প্রশংসনীয়।’ তিনি টেকনোসার্ভ, এনআই এবং ডব্লিউএফপি-এর ধারাবাহিক প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন করতে গিয়ে বলেন, ‘উন্নয়ন সহযোগীদের প্রচেষ্টার কারণে বাংলাদেশের ফোর্টিফিকেশন ইকোসিস্টেম আরও শক্তিশালী হয়েছে।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর অংশগ্রহণকারীদের একাধিক থিম্যাটিক মডিউলের আওতায় ফর্টিফাইড রাইস উৎপাদনে মান নিয়ন্ত্রণ, গুণগত মান নিশ্চিতকরণ ও আদর্শ পরিচালনা পদ্ধতির উপর তথ্য ও প্রযুক্তিগত উপস্থাপনা মাধ্যমে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। যার মধ্যে দলগত অনুশীলন, প্রশ্নোত্তর পর্ব এবং পর্যবেক্ষণ ও পরিদর্শন সংক্রান্ত বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল। টেকনোসার্ভ, ডব্লিউএফপি, এনআই ও বুলার’র কারিগরি বিশেষজ্ঞরা প্রশিক্ষণটি প্রদান করেন।
সমাপনী পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাদ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. জামাল হোসেন। সমাপনী পর্বে টেকনোসার্ভের কান্ট্রি প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. গুলজের আহমেদ, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির সিনিয়র প্রোগ্রাম পলিসি অফিসার ডা. মোহাম্মদ মাহবুবর রহমান এবং নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশের প্রোগ্রাম অফিসার ইঞ্জিনিয়ার মো. আকিব আবরার বক্তব্য দেন। তারা অংশগ্রহণকারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানান এবং ভবিষ্যতেও সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির (সোশ্যাল সেফটিনেট প্রোগ্রাম) আওতায় ফর্টিফাইড রাইস উৎপাদনে তাদের দৃঢ় সমর্থন অব্যাহত রাখার আশ্বাস ব্যক্ত করেন।
সমাপনী পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপস্থাপনকালে মো. জামাল হোসেন সরকারের ফর্টিফিকেশন কর্মসূচি অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন এবং ফর্টিফাইড রাইস মিশ্রণ মিলারদের সঠিক গুণাগুণ সমৃদ্ধ নিরাপদ পুষ্টি চাল উৎপাদন ও বিতরণে অঙ্গীকার বজায় রাখার আহ্বান জানান। তিনি প্রশিক্ষণ কর্মসূচির সফল আয়োজনে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা সমূহসহ সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান এবং অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
মিলার্স ফর নিউট্রিশন কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে স্ট্র্যাটেজিক ফর্টিফিকেশন পার্টনার, আঞ্চলিক সহযোগী এবং ক্রমবর্ধমান স্থানীয় কারিগরি অংশীদারদের সমন্বয়ে। তাদের মধ্যে রয়েছে, বিএএসএফ, বায়োঅ্যানালিট, ডিএসএম-ফারমেনিস, ম্যুলেনকেমি, স্টার্নভিটামিন, হেক্সাগন নিউট্রিশন, পিরামাল, সাংকু। যারা খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং ফর্টিফিকেশনের মাধ্যমে সমাজসেবা ও ব্যবসায়িক স্থায়িত্বে অবদান রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। উদ্যোগটি পরিচালিত হচ্ছে গেটস ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে টেকনোসার্ভের মাধ্যমে। মিলারস, খাদ্য ফর্টিফিকেশন সংশ্লিষ্ট অংশীজনসহ আগ্রহীরা কোয়ালিশনে যুক্ত হওয়ার জন্য এবং বিস্তারিত জানতে ওয়েবসাইটে ভিজিট করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
মন্তব্য করুন