কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৮ অক্টোবর ২০২৩, ০৩:১২ পিএম
আপডেট : ০৮ অক্টোবর ২০২৩, ০৪:০৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

পোশাক শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি ১৭,৫৬৮ টাকার প্রস্তাব সিপিডির

সিপিডি ও ক্রিশ্চিয়ান এইডের যৌথ আয়োজনে ‘গার্মেন্টস খাতে নূন্যতম মজুরি পুনর্নির্ধারণ : পর্যবেক্ষণ ও প্রস্তাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ছবি : সংগৃহীত
সিপিডি ও ক্রিশ্চিয়ান এইডের যৌথ আয়োজনে ‘গার্মেন্টস খাতে নূন্যতম মজুরি পুনর্নির্ধারণ : পর্যবেক্ষণ ও প্রস্তাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ছবি : সংগৃহীত

পোশাক শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি ১৭ হাজার ৫৬৮ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি। পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২০১৮ সালে সবশেষ নির্ধারণ করা হয়। সেসময় এর পরিমাণ ছিল ৮ হাজার টাকা। মূল্যস্ফীতি, শ্রমিকের আর্থিক নিরাপত্তা বিবেচনায় সিপিডি ৯ হাজা ৫৬৮ টাকা বাড়িয়ে নতুন এই ন্যূনতম মজুরির প্রস্তাব দিল।

রোববার (৮ অক্টোবর) সিপিডি ও ক্রিশ্চিয়ান এইডের যৌথ আয়োজনে ‘গার্মেন্টস খাতে ন্যূনতম মজুরি পুনর্নির্ধারণ : পর্যবেক্ষণ ও প্রস্তাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক এই মজুরির প্রস্তাব করেন সংস্থাটির সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

তিনি বলেন, এই মুহূর্তে পোশাক খাতে মজুরি পুনঃনির্ধারণের একটা প্রক্রিয়া চলছে। সরকারের পক্ষ থেকে গত এপ্রিলে মজুরি বোর্ড গঠন করা হয়েছিল। এ সংক্রান্ত বিষয় আলাপ আলোচনা চলছে। একই সঙ্গে দেখছি শ্রমিক প্রতিনিধিরা তাদের প্রস্তাবনাগুলো হাজির করছেন। আবার অন্যদিকে মালিক পক্ষের দিক থেকে সরাসরি কোনো প্রস্তাবনা না থাকলেও বিভিন্নভাবে তারা তাদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। এগুলোর আলোকে আগামীতে নতুন মজুরি পুনঃনির্ধারিত হবে, যেটা ২০১৮ সালে সর্বশেষ হয়েছিল। বর্তমান সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও গার্মেন্টস খাতের মজুরি নির্ধারণের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। কৌশলগতভাবে এবং শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের জায়গা থেকেও এটি গুরুত্বপূর্ণ হবে কারণ সামনে যেহেতু নির্বাচন।

সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ২৭ শতাংশ কারখানা মালিক মনে করেন, তারা ১২ হাজার টাকার উপরে প্রায় ২১ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন দিতে পারেন। শ্রমিকরা ন্যূনতম মজুরি ১৮ হাজার টাকা চেয়েছেন। আবার শ্রমিক সংগঠনগুলো ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা ন্যূনতম বেতনের প্রস্তাব করেছে। পোশাক খাতে জড়িত শ্রমিকের পরিবার ছোট হয়ে আসছে। আমরা গ্রেড সেভেনের জন্য ন্যূনতম মজুরি প্রস্তাব করছি ১৭ হাজার ৫৬৮ টাকা। আমরা মনে করি গ্রেড সেভেনে একজন পোশাক শ্রমিকের এতটুকু পাওয়া প্রয়োজন।

এর আগে পোশাক খাতে ন্যূনতম মজুরি পুনর্নির্ধারণ বিষয়ে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষক তামিম আহমেদ। তামিম আহমেদ বলেন, অর্থনীতিতে যখন মূল্যস্ফীতির চাপ রয়েছে, সে সময় এসে এই মজুরি নির্ধারণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইউনাইটেড নেশন্সের মানবধিকারসংক্রান্ত নীতিমালার আলোকের এই ন্যূনতম মজুরিকে দেখার চেষ্টা করেছি। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রামের ৭৬ পোশাক কারখানার ২২৮ জন শ্রমিকের ওপর জরিপ করে এই গবেষণাটি করা হয়েছে। একই সঙ্গে এই খাতের ছয়জন স্টেক হোল্ডারের সাক্ষাৎকার নিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, দক্ষিণ এশিয়ারসহ অন্যান্য দেশের চেয়ে পোশাক শ্রমিকদের আমরা কম বেতন দিচ্ছি। ২০১৮ সালের যে মজুরির কথা বলা হলো সেটা গত ৫ বছরের কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে তা যদি দেখি, তাহলে দেখব সাম্যকভাবে বাস্তবায়নের জায়গায় বড় ঘাটতি রয়ে গেছে। ৫ বছরে এটার পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয় নাই। ৪২.১ শতাংশ ফ্যাক্টরিতে গ্রেডিং সিস্টেমটাই নাই। এর ফলে ন্যূনতম মজুরি বোর্ড থেকে সিলেক্ট করা গ্রেডওয়াইজ কী তারা বেতন দিচ্ছে না? সেখানে বড় অনিশ্চিয়তা তৈরি করেছে। যদিও গ্রেডিং সিস্টেম অনুযায়ী বেতন দেওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে। বিজেএমইএ, বিকেএমিএ-এর মেম্বার না এমন কারখানায় এই নন গ্রেডিং সিস্টেমটা বেশি।

২৮ শতাংশ শ্রমিকরা গ্রেডিং সিস্টেম সম্পর্কে জানে না জানিয়ে তিনি বলেন, ৩১ শতাংশ শ্রমিকরা জানে না তারা কোন গ্রেডে কাজ করছে। অর্থাৎ একদিকে কারখানা গ্রেড সিস্টেম ফলো করছে না অন্যদিকে শ্রমিকরা জানছে না তারা কোন গ্রেডে কাজ করছে। আবার ৩০ শতাংশ কারখানা সংশ্লিষ্টরাও এই গ্রেডিং সম্পর্কে জানে না। ২০১৯ সালের পরে যোগদান করেছে, তাদের কিন্তু ৮ হাজার টাকার নিচে পাওয়া সুযোগ নেই। কিন্তু ৪১.৭ শতাংশ শ্রমিক আমরা পেয়েছি তাদের বেতন ৮ হাজার টাকার নিচে। প্রতিবছর নির্দিষ্ট হারে ইনক্রিমেন্ট দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেয়নি ১৭.১ শতাংশ প্রতিষ্ঠান।

তিনি আরও বলেন, ডিজিটাল পেমেন্টের মাধ্যমে এ খাতে স্বচ্ছতা আনা সম্ভব ছিল। কিন্তু আমরা দেখেছি ২০২৩ সালে ৪৯.৫ শতাংশ কারখানা এমএফএস বা ডিএফএস ব্যবহার করে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করছে। ২০২২ সালে এই হার ছিল ৫০ শতাংশ। শ্রমিকদের একটা বড় অংশ নগদে চাচ্ছে তাদের বেতনটা। ৮০ শতাংশ শ্রমিকের এমএফএস একাউন্ট থাকার পরেও কেনো তারা নগদে নিচ্ছে এইটা বড় ভাবনার জায়গা। ব্রান্ডগুলোর ও ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নে অবহেলা ছিল।

তিনি বলেন, ২০১৮ সালে ন্যূনতম বেতন নির্ধারণ হওয়ার পরে গড়ে মাত্র ১২ শতাংশ ব্র্যান্ড বেতনের সঙ্গে প্রাইস এডজাস্ট করেছে। কারখানা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামীতে নতুন বেতন নির্ধারণ করা হলে ৯ শতাংশ ব্র্যান্ড সমন্বয়ে এগিয়ে আসবে। কারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর ন্যূনতম বেতন নিশ্চিত হচ্ছে কী না সেটা দেখে। ২০২৩ সালে ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রে এটা হয়েছে বাকি ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে এই অধিদপ্তরের লোকজন কারখানায় গিয়ে বেতনের কথাটা বলেনি।

ক্রিশ্চিয়ান এইডের অন্তর্বতী কান্ট্রি ডিরেক্টর নুজহাত জাবিন ছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী মোল্লা, বিজিএমইএ প্রেসিডেন্ট ফারুক হাসান, বিকেএমইএ-এর এক্সিকিউটিভ প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম প্রমুখ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ধর্ম যার যার নিরাপত্তা সবার : আমীর খসরু

স্বাস্থ্যকর ঘুমের ১২ অভ্যাস

বাংলাদেশকে দুঃসংবাদ দিল ইতালি সরকার

পিআরসহ ৫ দফা মেনে নেওয়ার আহ্বান ইসলামী আন্দোলনের

অবতরণের সময় মিগ-৩১ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত

জানা গেল কবে দেশে ফিরবেন শহিদুল আলম

পচা চাল কিনে বাধ্যতামূলক অবসরে খাদ্য কর্মকর্তা

ভুল সময়ে ওজন মাপলে জানবেন ভুল তথ্য

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার দাবি সাইকেলিস্টদের

কোটি টাকার বিষ্ণু মূর্তি উদ্ধার, গ্রেপ্তার ১

১০

ভোট নিয়ে জামায়াত আমিরের হুঁশিয়ারি

১১

ফুটবল খেলা নিয়ে দুপক্ষের সংঘর্ষ, আহত ৩০

১২

প্রাথমিকে নাচ-গানের শিক্ষক নিয়োগ বাতিলের দাবিতে খতমে নবুওয়তের বিক্ষোভ

১৩

জুলাই সনদে পিআর পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত করে গণভোট দিতে হবে : গোলাম পরওয়ার

১৪

স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ গড়তে ৩১ দফার বিকল্প নেই : ড্যানী

১৫

ভারতের ১৭ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা

১৬

অতিরিক্ত মদ্যপানে আরও চারজনের মৃত্যু

১৭

‘গণভোটের মাধ্যমেই জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে হবে’

১৮

অযোধ্যায় ভয়ংকর বিস্ফোরণ, অভিযান চলছে

১৯

শরীর যথেষ্ট ফাইবার পাচ্ছে কিনা বুঝবেন যেভাবে

২০
X