পরিকল্পিতভাবেই ২৮ অক্টোবর বিএনপি-জামায়াতের কর্মসূচিতে সাংবাদিকদের ওপর হামলা করার অভিযোগ করেছেন সাংবাদিক নেতারা। তারা বলেছেন, যে কোনো রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশে সাংবাদিকরা পেশাগত দায়িত্ব পালন কালে কোনো ধরনের হামলার শিকার হলে, সেই দলকেই এর দায়ভার নিতে হবে। সাংবাদিকদের ওপর বর্বর হামলা অগণতান্ত্রিক চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করেন তারা।
আজ সোমবার (৩০ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাস্টিস ফর জার্নালিস্ট আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
বিএনপির আন্দোলনের নামে সাংবাদিকদের ওপর হামলা, জ্বালাও পোড়াও, পুলিশ হত্যা এবং প্যালেস্টাইনে ইসরায়েল-মার্কিনি বর্বরতায় নারী, শিশু, সাংবাদিকসহ গণহত্যার প্রতিবাদে সভাটির আয়োজন করা হয়।
সভায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, ২৮ অক্টোবরের হামলা এবং ফিলিস্তিনের হামলার মধ্যে অদ্ভুদ মিল রয়েছে। ইসরায়েল ফিলিস্তিনের হাসপাতালে হামলা করে, বাংলাদেশে আন্দোলনের নামে হাসপাতালে হামলা হয়। ইসরায়েলের ৭ অক্টোবর থেকে আজ পর্যন্ত ৩৭ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছে, ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশ ৩২ জন সাংবাদিক আহত হয়েছে। কিন্তু সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় সবাই নীরব, বিদেশি দূতাবাসগুলো নীরব। সাংবাদিকদের ওপর বর্বর হামলা কোনো গণতান্ত্রিক আচরণ নয়। পশ্চিমা শক্তিগুলো গণতন্ত্রকে নিজেদের সুবিধার্থে নিজেদের মতো ব্যবহার করে।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক দল আন্দোলন করবে এটা স্বাভাবিক, গণমাধ্যম সেখানে তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করবে। কিন্তু পরিকল্পিতভাবে সাংবাদিকদের ওপর হামলার পেছনে দুরভিসন্ধি রয়েছে। এটি আকস্মিক কোনো ঘটনা নয়। আমরা ৭৩ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে, ৭২ ঘণ্টা শেষ হলে আমরা লাগাতার কর্মসূচি দিব।
সভায় বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, বিএনপি-জামায়াত জন্মগতভাবে স্বাধীন গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে। তাদের শাসনামলে (২০০১-০৫) সাংবাদিক হত্যা এবং হামলার পরিসংখ্যান অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা তুলে ধরেছিল। ২৮ অক্টোবর প্রায় ৩০ জন সাংবাদিক গুরুতর আহত হয়েছেন। সাংবাদিক সমাজ ঐক্যবদ্ধ না হলে এমন হামলার ঘটনা থামানো সম্ভব না।
তিনি বলেন, সাংবাদিক হত্যার বিচারের নজির এদেশে খুব কম। স্বাধীন বাংলাদেশ মাত্র দুটি সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়েছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই বারবার সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে। সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনের স্থায়ী বিচারিক সমাধান করতে হবে।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ বলেন, আন্দোলনের নামে বিএনপি দেশে ফিলিস্তিনের মতো পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছে। আমরা কল্যাণমূলক রাষ্ট্র চাই, এমন আগ্রাসন চাই না।
দৈনিক সংবাদের বার্তা সম্পাদক কাজী রফিক বলেন, গণতন্ত্রের নামে এমন বর্বরতা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
২৮ অক্টোবর বিএনপির এক দফা কর্মসূচির সমাবেশে দায়িত্ব পালনকালে আহত দুই সাংবাদিক সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। তারা হলেন- সংবাদ সংস্থা ফোকাস বাংলার জ্যেষ্ঠ আলোকচিত্রী মোস্তাফা কামাল এবং ডিজিটাল খবরের আলোকচিত্রী মেহেদী হাসান।
জাস্টিস ফর জার্নালিস্টের কো-চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন জ্যেষ্ঠ্য সাংবাদিক কামাল চৌধুরী, সাংবাদিক শেখ মামুন হোসেন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সহসভাপতি মানিক লাল ঘোষ, ডিইউজের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খায়রুল আলম, জাস্টিস ফর জার্নালিজমের চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম প্রমুখ।
মন্তব্য করুন