বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচন নিয়ে যে সিদ্ধান্ত নিবেন, ধারণা করা হচ্ছে সেটির প্রতি দৃঢ় সমর্থন থাকবে ভারতের। বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) ভারতের প্রভাবশালী সাময়িকী আউটলুক ইন্ডিয়া জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনকেন্দ্রিক চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদনে এ বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনটি লিখেছেন সীমা গুহ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের ওপর বিরোধী দল, যুক্তরাষ্ট্র ও বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশের চাপ থাকলেও পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ প্রশাসনের অধীনে নির্বাচন আয়োজনের কোনো আগ্রহ নেই সরকারের। বর্তমান সরকারের ঘনিষ্ঠ মিত্র ভারত প্রকাশ্যে এই বিষয়ে কিছু বলেনি। তবে, ধারণা করা হচ্ছে শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত নেবেন সেটির প্রতি সমর্থন থাকবে দিল্লির।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ যখন আরেকটি জাতীয় নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন দেশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। রাজপথে প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলোর লড়াই আশঙ্কা করা হচ্ছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ৯০ দিন আগে পদত্যাগ না করায় তা বর্জন করে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও রাজপথে সহিংসতার জন্য ব্যাপক সমালোচনায় পড়েছিল দলটি। এবার বিএনপি নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে তাদের সমর্থকরা যেন সহিংস না হয়ে ওঠে। কিন্তু ২৮ অক্টোবর সহিংসতায় এক পুলিশ সদস্য ও বিএনপি নেতা নিহত হয়েছেন। বিএনপি চেষ্টা করছে আবারও যেন তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ না হয়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের চেয়ে নৈতিকভাবে এগিয়ে থাকতে হলে বিএনপিকে তাদের ক্যাডারদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
আউটলুক ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনের অধীনে নির্বাচনে আয়োজনের জন্য শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের ওপর বিরোধীসহ যুক্তরাষ্ট্র ও বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশের প্রচণ্ড চাপ রয়েছে। কিন্তু সরকারের পদত্যাগের কোনো আগ্রহ নেই। শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ মিত্র ভারত প্রকাশ্যে এই বিষয়ে কিছু বলেনি এবং তিনি যে সিদ্ধান্ত নেবেন সেটিকেই তারা সমর্থন করতে পারে। নয়া দিল্লি এ ক্ষেত্রে লো প্রোফাইল বজায় রাখছে এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপকারী হিসেবে চিহ্নিত হতে চায় না। গত এক বছর ধরে বিএনপিও বিভিন্ন কৌশল গ্রহণ করেছে। তবে নয়া দিল্লি অবস্থান পাল্টাবে বলে মনে হয় না। শেখ হাসিনা ও তার আওয়ামী লীগকে দৃঢ় সমর্থন জানাবে।
সীমা গুহ উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল এবং আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি কখনোই উষ্ণতা দেখায়নি। এখন দেশটিতে চীনের উপস্থিতি ছড়িয়ে পড়ায় যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী দল বিএনপিকে সমর্থন দিতে চায়। মজার বিষয় হলো, চীনের সঙ্গে বিএনপিরও দৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে। ২০১৪ সালে বিএনপির নির্বাচন বয়কট করা ছিল কৌশলগত ভুল। বিএনপি ও তাদের জোট মিত্র জামায়াত ইসলামী ওই সময় রাজপথে নজিরবিহীন সহিংসতার জন্ম দিয়েছিল। এবারও বিএনপির নির্বাচন বয়কটের কৌশল সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগের অংশ হতে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
মন্তব্য করুন