গ্রামীণ অর্থনৈতিক উন্নয়নে সমবায়ের ওপর গুরুত্বারোপ করে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সমবায়ের মাধ্যমে গ্রামের মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তনে গুরুত্বারোপ করেছিলেন কারণ তিনি জানতেন একজন মানুষের পক্ষে যা করা সম্ভব নয়, তা সমবায়ের মাধ্যমে ১০ জন মানুষ একত্রিত হয়ে অনায়াসে সম্ভব করতে পারে। শনিবার (৪ নভেম্বর) আগারগাঁওয়ে সমবায় অধিদপ্তরে ৫২তম জাতীয় সমবায় দিবস ২০২৩ এবং জাতীয় সমবায় পুরস্কার ২০২২ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, কুমিল্লার বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (বার্ড) মাধ্যমে পল্লী উন্নয়নের সমবায়ের বাস্তব প্রয়োগ আমাদের দেশে সফল হয়েছে। কুমিল্লা বার্ডের অনুসরণে দক্ষিণ কোরিয়াতেও সমবায়ের মাধ্যমে গ্রামীণ মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সফলতা পাওয়া গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, সমবায়কে শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে আমরাও সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে পারি। তাহলেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর দর্শন ছিল, কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সমবায়ের মাধ্যমে উৎপাদন, বণ্টন ও বিপণন করে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করা। দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু সমবায়ের ওপর যেভাবে গুরুত্বারোপ করেছেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও একইভাবে গুরুত্বারোপ করেছেন।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদে বাংলাদেশের দারিদ্র্যের হার ছিল ৪১.৫ শতাংশ। একটানা ৩ মেয়াদে সরকার পরিচালনার ফলশ্রুতিতে গত সাড়ে ১৪ বছরে এ হার ১৮.৭ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। দেশের অসহায়-দরিদ্র প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ভূমিহীন-গৃহহীন ছিন্নমূল মানুষকে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের আওতায় এনেছেন। বর্তমানে সমবায় অধিদপ্তরের মাধ্যমে ৩টি উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, উন্নয়ন অভিযাত্রায় শহর ও গ্রামের সব শ্রেণিপেশার মানুষের সমান অংশগ্রহণ থাকবে। কাউকে পেছনে ফেলে রাখা চলবে না। সমবায় অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে বর্তমানে প্রায় ১ লাখ ৮৯ হাজার সমবায় সমিতি রয়েছে। সমবায়ীদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য হ্রাসে এ সমবায় সমিতিগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি সদস্য সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ২২ লাখ।
মন্ত্রী এ সময় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে নির্বাচিত হওয়ায় সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, এই বিজয় বাংলাদেশের জন্য একটি বড় অর্জন। বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার বাংলাদেশের জন্য সব সময় সম্মান এবং মর্যাদা বয়ে এনেছে।
সভাপতির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, জাতির পিতা চেয়েছিলেন গ্রামভিত্তিক সমবায়ের মাধ্যমে সম্মিলিত উদ্যোগকে জনগণের উন্নয়নে কাজে লাগাতে। এ লক্ষ্যে সমবায় অধিদপ্তর দেশের প্রতিটি উপজেলায় ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা সমবায় সমিতি’ গঠন করেছে। ইতোমধ্যে দেশের ২০০টি উপজেলায় কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ ছাড়া দুগ্ধ ঘাটতি উপজেলায় দুগ্ধ সমবায়ের কার্যক্রম সম্প্রসারণ প্রকল্প চলমান রয়েছে, যা গ্রামীণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং পুষ্টি চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি নুরুল ইসলাম নাহিদ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব মোসাম্মৎ হামিদা বেগম, সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধক ও মহাপরিচালক মুনিমা হাফিজ।
মন্তব্য করুন