কবির হোসেন
প্রকাশ : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮:৪৩ পিএম
আপডেট : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮:০৬ এএম
অনলাইন সংস্করণ

ফাঁসির রায় দেওয়ায় বিচারককেই ফাঁসিতে ঝোলানোর চেষ্টা

জয়পুরহাটের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. আব্বাস উদ্দিন। সৌজন্য ছবি
জয়পুরহাটের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. আব্বাস উদ্দিন। সৌজন্য ছবি

ফাঁসির রায় দেওয়ায় বিচারককেই ফাঁসিতে ঝোলানোর চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে। সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) গভীর রাতে রায় প্রদানকারী বিচারকের বাসার জানালার গ্রিল কেটে ঘরে ঢুকে ওই বিচারককে ফাঁসিতে ঝোলানোর চেষ্টা চালানো হয়েছে।

বাসায় ঢুকে ছোরা হাতে ওই বিচারকের উদ্দেশে একজন দুষ্কৃতকারী বলেন, ‘তুই বেদীন ও তার লোকজনকে ফাঁসি দিয়েছিস। এখন আমরা তোর ফাঁসি দিতে এসেছি’।

এরপরই তারা বিচারককে ফাঁসি দেওয়ার চেষ্টা চালায়। পরে পুলিশ চলে আসায় তারা পালিয়ে যায়। ঘটনাটি ঘটেছে জয়পুরহাট সদরে।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ওই বিচারক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. আব্বাস উদ্দিন জয়পুরহাট সদর থানায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগে একটি মামলা করেছেন। সদর থানার ওসি মো. হুমায়ুন কবির কালবেলাকে জানিয়েছেন, ‘একটি মামলা হয়েছে। আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

জানা গেছে, গত ৩১ জানুয়ারি জয়পুরহাটে চাঞ্চল্যকর স্কুলছাত্র মোয়াজ্জেম হত্যা মামলায় ১১ জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-২ আদালতের বিচারক আব্বাস উদ্দীন।

ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- বেদারুল ইসলাম বেদিন, সরোয়ার হোসেন সুমন, মশিউর রহমান এরশাদ, মনোয়ার হোসেন মনছুর, নজরুল ইসলাম, রানা, শাহী, টুটুল, সুজন, রহিম, ডাবলু। তাদের বাড়ি জয়পুরহাটের বিভিন্ন এলাকায়। দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে নজরুল ইসলাম, বেদারুল ইসলাম, টুটুল, সুজান, আবদুর রহিম ও ডাবলু পলাতক।

২০০২ সালের ২৮ জুন ব্যক্তিগত শত্রুতার জের ধরে মোয়াজ্জেম হোসেনকে জয়পুরহাট শহর থেকে তুলে নিয়ে আসামিরা ধারাল অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা দিয়ে নির্যাতন করে। পরে তাকে জয়পুরহাট-জামালগঞ্জ সড়কে একটি জায়গায় নামিয়ে দেওয়া হয়। পর দিন স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে জয়পুরহাট আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে জয়পুরহাট সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনার ২২ বছর পর বিচার শেষ করে ৩১ জানুয়ারি রায় দেন বিচারক আব্বাস উদ্দিন।

রায় প্রদানের এক সপ্তাহ পর সোমবার গভীর রাতে বিচারকের বাসার জানালার গ্রিল কেটে অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারীরা ভেতরে ঢুকে তাকে হত্যার চেষ্টা করে। বিচারক আব্বাস উদ্দিন তার এজাহারে উল্লেখ করেছেন, ‘জয়পুরহাট হাউজিং এস্টেটের এনএসআই ভবনের সামনে ডাক্তার মো. মনোয়ার হোসেনের বাসার নিচ তলায় আমার স্ত্রী আফসানা আক্তারসহ ভাড়া বাসায় বসবাস করি। ৬ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৩টার সময় হঠাৎ আমাদের শয়ন কক্ষের দরোজার লক খোলার চেষ্টা করছে এমন শব্দ পেয়ে আমি ঘুম থেকে জেগে উঠি এবং আমার স্ত্রীকে উঠাই।

তখন আমরা দুজনে চিকৎকার করিতে থাকি। আমার স্ত্রী আমার বাসার নিকটবর্তী জনৈক লিটনের ভাড়াটিয়া জয়পুরহাট জেলা পুলিশের কনস্টেবল মো. আরিফুল ইসলামকে মোবাইল ফোনে ঘটনা জানায় এবং আমি জয়পুরহাট সদর থানার অফিসার ইনচার্জকে মোবাইল ফোনে ঘটনা জানাই।

ইতোমধ্যে দুষ্কৃতকারীরা ঘরের দরোজার লক খুলে ঘরে প্রবেশ করে। সবার সামনে থাকা একজন অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারী যার উচ্চতা অনুমান ৫ ফুট ৬/৭ ইঞ্চি হবে, গায়ের রং শ্যাম বর্ণ। তার হাতে থাকা বাটসহ অনুমান এক ফুট লম্বা ছোরা দেখিয়ে আমাকে বলে, ‘তুই বেদীন ও তার লোকজনকে ফাঁসি দিয়েছিস। এখন আমরা তোর ফাঁসি দিতে এসেছি।’

ওই দুষ্কৃতকারীরা আমার দিকে অগ্রসর হওয়া মাত্রই কনেস্টবল মো. আরিফুল ইসলাম আমার ঘরের বেলকনিতে এসে চিৎকার করে বলতে থাকে, ‘স্যার আমি আরিফ পুলিশ এসেছি। আপনার কী হয়েছে?

এ সময় পুলিশের কথা শোনা মাত্রই দুষ্কৃতকারীরা দ্রুত পালিয়ে যায়। এরপর কনস্টেবল আরিফুল ইসলাম, আমার বাসার নিকটবর্তী আমার কোর্টের সাবেক বেঞ্চ সহকারী মো. ইসহাক আলী, আমার বাসার মালিক ড. মনোয়ার হোসেন ও তার স্ত্রী জাকিয়া ফারহানা চৌধুরী আমাদের ঘরে এলে আমরা দেখতে পাই, আমাদের পূর্বপাশের কক্ষের জানালার গ্রিল কাটা এবং আমাদের ড্রয়িং রুমে রাখা একটি ব্রিফ কেসের মালামাল ছড়ানো ছিটানো অবস্থায় আছে। তার মধ্যে থেকে আমার স্ত্রীর দুটি স্বর্ণের চুরি যার ওজন দুই ভরি, একটি স্বর্ণের চেইন যার ওজন দুই ভরি ও দুইটি কানের দুল যার ওজন এক ভরি যার মোট মূল্য অনুমান পাঁচ লাখ পঞ্চান্ন হাজার টাকাসহ নগদ পঞ্চাশ হাজার টাকা চুরি করে নিয়ে গেছে।

উল্লেখ্য, আমি গত ৩১ জানুয়ারি সেসন ১৫৫/০৫ মামলায় আসামি বেদারুল ইসলাম বেদিন, সরোয়ার হোসেন সুমন, মশিউর রহমান এরশাদ, মনোয়ার হোসেন মনছুর, নজরুল ইসলাম, রানা, শাহী, টুটুল, সুজন, রহিম, ডাবলুকে মৃত্যুদণ্ডসহ প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করেছি। এসব আসামিদের পিসি/পিআর খুবই খারাপ। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই খুন, ডাকাতি, অস্ত্রসহ একাধিক মামলা মোকদ্দমা রয়েছে। আমার ধারণা, ওই মামলার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামিরা অথবা তাদের দলীয় লোকজনকে দিয়ে আমাকে হত্যা করার জন্য এই মামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। দুষ্কৃতকারীরা পালিয়ে যাওয়ার সময় এনএসআই ভবনের সামনে কনস্টেবল আরিফুল ইসলাম একজন দুষ্কৃতকারীকে জাপটে ধরে ফেলে। কিন্তু ওই দুষ্কৃতকারী জোর করে ছুটে গেলে ওই আরিফুল ইসলাম রাস্তার ওপর পড়ে গিয়ে ডান পায়ের হাঁটুর নিচে গুরুতর জখম হয়।’

জানতে চাওয়া হলে বিচারক আব্বাস উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, বিষয়াটি আমি আমার জেলা জজ স্যারকে জানিয়েছি। পুলিশ সুপার এবং ওসিকেও জানিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, আমরা ঘরের মধ্যে অজ্ঞাতনামা অন্তত তিনজনকে দেখেছি। সোমবার গভীর রাতের ওই ঘটনার পর আমি স্বাভাবিক হতে পারছিলাম না। আমি নিরাপত্তাহীনতায় আছি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ফিরে দেখা ৩১ জুলাই : ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিতে পুলিশের বাধা 

রাজনৈতিক দলগুলোর আয়-ব্যয়ের হিসাব দেওয়ার শেষ দিন আজ

শিশুকে ধর্ষণচেষ্টা, অটোরিকশাচালকের কারাদণ্ড

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সে চাকরি, আকর্ষণীয় বেতনের সঙ্গে সাপ্তাহিক ২ দিনের ছুটি

সাপুড়ের প্রাণ নেওয়া বিষধর সাপ চিবিয়ে খেলেন আরেক সাপুড়ে

৩১ জুলাই : টিভিতে আজকের খেলা 

অস্ট্রেলিয়া / এবার ১৬ বছরের কম বয়সীদের ইউটিউবে নিষেধাজ্ঞা

চাকরি দিচ্ছে সুলতান’স ডাইন, বেতন ছাড়াও থাকছে খাবার সুবিধা

এক দিনেই বিএনপির ২০ নেতা বহিষ্কার 

ইসরায়েলের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ড্রোন হামলা

১০

শর্তসাপেক্ষে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা কানাডার

১১

ঢাকায় বৃষ্টি নিয়ে আবহাওয়া অফিসের নতুন বার্তা

১২

দুপুরের মধ্যে যেসব জেলায় হতে পারে ঝড়

১৩

বৃহস্পতিবার রাজধানীর যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ

১৪

৩১ জুলাই : আজকের নামাজের সময়সূচি

১৫

দেশের বাইরে থেকেও স্কুল শিক্ষিকা তুলছেন বেতন, নিচ্ছেন সুযোগ-সুবিধা

১৬

আতাই নদীর বাঁধ ভেঙে অভয়নগরের দুই শতাধিক পরিবার পানিবন্দি

১৭

সিদ্ধিরগঞ্জে ৪ মাসে ৯ খুন

১৮

বেনাপোল বন্দরে চাঁদা আদায়ের অভিযোগে ৫৪ আনসার বদলি

১৯

শেখ হাসিনা রাজনীতিকে বিষাক্ত প্রাণীদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন : স্বপন

২০
X