কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ৩০ জুলাই ২০২৫, ০৪:৫১ পিএম
আপডেট : ৩০ জুলাই ২০২৫, ০৪:৫৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

দুই ভাইয়ের সঙ্গে এক নারীর বিয়ে, যে তথ্য সামনে এলো

দুই ভাই প্রদীপ নেগি ও কপিল নেগিকে একইসঙ্গে বিয়ে করেন সুনিতা চৌহান। ছবি : সংগৃহীত
দুই ভাই প্রদীপ নেগি ও কপিল নেগিকে একইসঙ্গে বিয়ে করেন সুনিতা চৌহান। ছবি : সংগৃহীত

ভারতের হিমাচল প্রদেশের সিরমৌর জেলার শিলাই গ্রামে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক ব্যতিক্রমধর্মী বিয়ে ঘিরে শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্ক। এক নারীর সঙ্গে আপন দুই ভাইয়ের বিয়ের এই ঘটনা অনেকের কাছে অস্বাভাবিক মনে হলেও, স্থানীয় ‘হাটি’ জনগোষ্ঠীর কাছে এটি বহুদিন ধরে চলে আসা একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য।

জানা গেছে, সুনিতা চৌহান নামে ওই নারীকে বিয়ে করেছেন একই পরিবারের দুই ভাই—প্রদীপ নেগি ও কপিল নেগিকে। তিনজনই হিমাচলের তপশিলি হাটি জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত এবং এই বিয়েটি হয়েছে ঐতিহ্যবাহী ‘জোড়িদারা’ বা ‘জাজড়া’ প্রথা অনুসারে। এটি মূলত বহুপতিত্বের একটি সামাজিক রূপ, যা ওই সম্প্রদায়ের জন্য দীর্ঘদিন ধরে স্বীকৃত।

বিয়ের অনুষ্ঠানে দুপক্ষের আত্মীয়স্বজন ছাড়াও অংশ নেন শত শত গ্রামবাসী। ছিল ঐতিহ্যবাহী লোকসঙ্গীত, নৃত্য আর স্থানীয় খাবারের আয়োজন। তিনজনের সম্মতিতে সম্পন্ন হওয়া এই বিয়ে হাটি সম্প্রদায়ের একটি চর্চিত ও সামাজিকভাবে স্বীকৃত রীতি বলেই উল্লেখ করা হচ্ছে।

এই প্রথা শুধু শিলাই নয়, হিমাচলের ট্রান্স-গিরি অঞ্চল, সিমলা, কিন্নর, লাহুল-স্পিতি এবং উত্তরাখণ্ডের জৌনসার-বাওয়ার ও রাওয়াই-জৌনপুর এলাকাতেও প্রচলিত। এখানে অনেক পরিবারে একজন নারী একই পরিবারের দুই বা ততধিক ভাইয়ের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।

এ ধরনের বিবাহ পিতৃসম্পত্তি বিভাজন রোধ, ভাইদের মধ্যে ঐক্য রক্ষা এবং পারিবারিক দায়িত্ব সমানভাবে ভাগ করে নেওয়ার একটি সামাজিক কৌশল হিসেবেই দেখা হয়।

‘বিশেষ উদ্দেশ্যে’র কথা বলছেন স্থানীয় বাসিন্দা কপিল চৌহান জানান, ‘এই জোড়িদারা প্রথা আমাদের সমাজের এক গুরুত্বপূর্ণ পরিচয়। এটি শুধু ঐতিহ্য নয়, বরং যৌতুক প্রথা এড়িয়ে চলা, সম্পত্তি বিভাজন রোধ এবং পরিবারে স্থিতিশীলতা আনার একটি বাস্তবসম্মত উপায়।’ তার দাবি, শিলাই এলাকার প্রায় প্রতিটি গ্রামেই এখনো চার থেকে ৬টি পরিবার এই প্রথা অনুসরণ করে।

সংবাদমাধ্যমকে সুনিতা চৌহান বলেছেন, ‘এই বিয়ে ছিল পুরোপুরি আমার নিজের সিদ্ধান্ত। আমি এই প্রথা সম্পর্কে আগে থেকেই জানতাম এবং আমি সম্মতি দিয়েই এই বিয়েতে অংশ নিয়েছি। আমাদের সমাজের কাছে এটি গর্বের বিষয়। আজকাল তো মানুষ লিভ-ইন সম্পর্কও সহজে মেনে নেয়, তাহলে আমাদের ঐতিহ্যকে লুকিয়ে রাখার কিছু নেই।’

প্রদীপ নেগি কাজ করেন রাজ্য সরকারের জলশক্তি বিভাগে এবং কপিল নেগি বিদেশে হসপিটালিটি খাতে কর্মরত। তিনজনই শিক্ষিত এবং এই সামাজিক প্রথাকে তারা সম্মানের সঙ্গে মেনে নিয়েছেন। তাদের ভাষায়, এই সম্পর্ক বিশ্বাস, দায়িত্ব এবং যত্ন ভাগাভাগির প্রতীক।

যদিও এই বিয়েকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে, তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা শুধুই ব্যতিক্রম নয়; বরং এটি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং টিকে থাকার এক বাস্তব অভ্যাস।

সূত্র : বিবিসি

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জামায়াতের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা

‌‌‘তরুণরা সক্রিয় থাকলে কোনো সমস্যাই অমীমাংসিত থাকবে না’

বাগেরহাটে ঢিলেঢালা হরতাল, বন্ধ দূরপাল্লার যানবাহন 

সহিংসতার প্রতীক হিসেবে পতাকা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা ব্রিটেনের

দোকান থেকে বাড়ি ফিরছিলেন মানিক, পথে কুপিয়ে হত্যা

ডিজিটাল লেনদেনে কমবে দুর্নীতি ও অর্থ পাচার : গভর্নর

বাংলাদেশ হোন্ডায় চাকরির সুযোগ, দ্রুত আবেদন করুন

করপোরেট অ্যামেচার প্রিমিয়ার লিগে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের জয়

বিজনেস ম্যানেজার পদে নিয়োগ দিচ্ছে সূর্যের হাসি ক্লিনিক

ভাঙ্গায় ৩ দিনের অবরোধ, যান চলাচল স্বাভাবিক

১০

ভারত থেকে ২০০ কোচ কিনছে রেলওয়ে

১১

ল্যাবএইড ক্যানসার হাসপাতালের কাস্টমার অ্যান্ড বিলিং বিভাগে নিয়োগ চলছে

১২

ঝুঁকির মুখে অস্ট্রেলিয়ার ১৫ লাখ মানুষ

১৩

তিস্তার পানি বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই, খোলা হয়েছে ৪৪ জলকপাট

১৪

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিচ্ছেন মাহমুদুর রহমান

১৫

আফগান বধের পর টাইগারদের তাকিয়ে থাকতে হবে এই ম্যাচের দিকে

১৬

জামায়াত আমিরের সঙ্গে শিল্প মালিক প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎ

১৭

এমি অ্যাওয়ার্ডস ২০২৫ / যাদের হাতে উঠল টেলিভিশনের সর্বোচ্চ মর্যাদার পুরস্কার

১৮

কাতারে ইসরায়েলি হামলা নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানালেন ট্রাম্প 

১৯

স্ত্রীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচার, বাধ্যতামূলক অবসরে ডিআইজি

২০
X