রাজন ভট্টাচার্, শিবচর (মাদারীপুর) থেকে ফিরে
প্রকাশ : ০৪ মে ২০২৪, ০৬:৫৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ভাঙ্গা-চন্দনা কমিউটার ট্রেনে যাত্রীপ্রতি অতিরিক্ত টোল, ভাড়া বাড়ায় অসন্তোষ

ভাঙ্গা ও চন্দনা কমিউটার ট্রেন। ছবি : কালবেলা
ভাঙ্গা ও চন্দনা কমিউটার ট্রেন। ছবি : কালবেলা

বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চল থেকে স্বল্প আয়ের মানুষের যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে উদ্বোধন করা হয়েছে দুই জোড়া কমিউটার ট্রেন। রোববার (৫ মে) থেকে ট্রেনগুলো আনুষ্ঠানিক যাত্রী পরিবহন করবে। ভাঙ্গা ও চন্দনা কমিউটার নামে ট্রেন দুটি চালু করলেও এর ভাড়া নির্ধারণ করার পরে যাত্রীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা গেছে। মূলত পদ্মা সেতুর টোলের কারণে স্বল্প দূরত্বের মধ্যে বেশি ভাড়া বলছেন অনেকেই।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছেন, মাদারীপুরের শিবচরে ঢাকা-ভাঙ্গা রুটে ‘ভাঙ্গা কমিউটার’ ট্রেন ও ভাঙ্গা-রাজবাড়ী রুটে ‘চন্দনা কমিউটার’ নামে ট্রেন চলবে।

শনিবার (৪ মে) মাদারীপুরের শিবচর রেল স্টেশনে এক অনুষ্ঠানে ট্রেন দুটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন রেলপথ মন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম। এরপর পরীক্ষামূলক ট্রেনটি ঢাকায় আসে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম বলেন, ভবিষ্যতে এই ট্রেন কমলাপুর থেকে টঙ্গী পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হবে। এই রুটে দেয়া হবে নতুন ট্রেন।

ভাড়া যে কারণে বেশি:

ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত চলাচলকারী ভাঙ্গা কমিউটার ট্রেনটির ভাড়া ২২৫ টাকা। আর ট্রেনটি মাঝের তিন স্টেশন মাওয়া, পদ্মা(জাজিরা) ও শিবচর স্টেশনে থামবে। এরমধ্যে ঢাকা থেকে মাওয়া স্টেশন পর্যন্ত ৪৫ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হলেও ১০ কিলোমিটার পরের স্টেশন পদ্মা সেতুর অপর প্রান্তের জাজিরা এলাকার পদ্মা স্টেশনের ভাড়া ১৯৫ টাকা। অর্থাৎ সেতু পার হতে গেলেই গুণতে হচ্ছে অতিরিক্ত ১৫০ টাকা। এরপর পরের স্টেশন শিবচর ২০৫ টাকা আর সবশেষ ভাঙ্গা স্টেশনে ২২৫ টাকা। অন্যদিকে ভাঙ্গা থেকে রাজবাড়ী রুটে চলাচলকারী চন্দনা কমিউটার ট্রেনের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৫ টাকা। অর্থাৎ রাজবাড়ী থেকে এই দুই ট্রেনে ঢাকা ফিরতে ২৯০ টাকা খরচ হবে যাত্রীদের।

রেলসুত্র জানিয়েছে, বর্তমানে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা রুটে তিনটি আন্তঃনগর ট্রেন সুন্দরবন এক্সপ্রেস, বেনাপোল এক্সপ্রেস ও মধুমতী এক্সপ্রেস চলাচল করে। এই ট্রেন তিনটিতে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা যেতে শোভন চেয়ারে লাগে ৩০৫ টাকা, ট্রেনগুলো ভাঙ্গার ননস্টপ যাত্রীদের ঢাকায় পৌঁছে দেয়। কিন্তু একাধিক স্টপেজের কমিউটার ট্রেনের নীচের সারির শোভন কোচে যেতে নির্ধারণ করা হয়েছে ২২৫ টাকা ভাড়া।

ভাঙ্গা ও চন্দনা কমিউটার ট্রেন যে রেক দিয়ে চলছে তার ইঞ্জিন ও কোচের মান নিম্নমানের, যেটা দিয়ে ঢাকা আসতে ২২৫ টাকা ভাড়াকে অতিরিক্ত বলছেন যাত্রীরা।

উদ্বোধনী ট্রেনে সাংবাদিকদের বহন করা ট্রেনটির বগি ঢাকা ঘুরতে আসছিলেন সবুজ হোসেন। ট্রেনে নিয়মিত ঢাকা যেতে পেরে খুশি হলেও ভাড়ার কথা শুনে হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, বাসে ঢাকা যেতে ৩০০ টাকা লাগে। কিন্তু ট্রেনে যদি কম লাগতো তাহলে ভালো হতো। অনেকে ট্রেনে করে বাড়ি থেকেই অফিসে যাতায়ত করতে পারতেন। লোকাল ট্রেনে এতো ভাড়া রাখা ঠিক হয়নি।

বাসের সঙ্গে পদ্মার টোলের তুলনামূলক রেখা টেনে দেখা যায়, বাসের চেয়ে ট্রেনের যাত্রীদের টোল দিতে হচ্ছে বেশি। ৩১ সিটের একটি বাসের যেখানে ১৪০০ টাকা ভাড়া দিতে হয় সেখানে জনপ্রতি টোল পড়ে ৪৫ টাকা কিন্তু বাংলাদেশ রেলওয়ে নিন্মবিত্তের শোভন শ্রেণীর যাত্রীদের থেকেই নিচ্ছে ১৫০ টাকা। এ বিষয়ে ঢাকা বিভাগীয় রেলওয়ে বাণিজ্যিক কর্মকর্তা শাহ আলম কিরন শিশির বলেন, পদ্মা সেতুর টোলের কারণে ভাড়া বেড়েছে।

প্রসঙ্গত, ঢাকা-ভাঙ্গা রুটে ১২১ ও ১২৪ নম্বর ট্রেনটির নাম প্রস্তাব করা হয়েছে ভাঙ্গা এক্সপ্রেস। আর ভাঙ্গা-রাজবাড়ী রুটে ১২২ ও ১২৩ নম্বর ট্রেনের নাম নির্ধারণ করা হয়েছে চন্দনা এক্সপ্রেস। ট্রেনটিতে ২৪টি প্রথম, ৪৪টি শোভন চেয়ার এবং ৪২৪টি শোভন শ্রেণীর আসন ব্যবস্থা থাকবে।

উভয়পথে ভাঙ্গা জংশন, শিবচর, পদ্মা ও মাওয়া স্টেশনে যাত্রা বিরতি থাকবে। সাপ্তাহিক বন্ধ শুক্রবার। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেল যোগাযোগ ব্যবস্থাকে মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌঁছানোর জন্য পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। ভবিষ্যতে এই পথে আরেকটি ট্রেন আমরা চালু করবো। আবার আগামী দুই মাসের মধ্যে ভাঙ্গা থেকে খুলনা, যশোর হয়ে বেনাপোল পর্যন্ত আরেকটি ট্রেন চালু হবে। ওই ট্রেন প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন।

ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সেটি আটটি জেলাকে যুক্ত করবে। কিন্তু এই অঞ্চলের মাটি ভালো না, তাই পুরো লাইনটি হবে এলিভেটেড (উড়াল)।

তিনি আরও বলেন, আমরা চিন্তা করছি, রেলে বর্তমানে দুইটা জোন আছে, আরও দুইটা জোন তৈরি করা হবে। এর একটা হবে ভাঙ্গা-ফরিদপুর, এটির জোনাল অফিস হবে ভাঙ্গায়। এতে করে ভাঙ্গায় রেলের সেবা আরও বাড়বে।

সবচেয়ে সস্তা পরিবহন হলো রেল একথা উল্লেখ করে রেলমন্ত্রী বলেন, দক্ষ জনবলের অভাবে ট্রেন দুর্টনা বাড়ছে। বিএনপির আমলে গোল্ডেন হেন্ডশেক দিয়ে রেলের জনবল বিদায় করা হয়েছে। অনেকে অবসরে গেছেন। এখন চুক্তিতে চালক, গার্, স্টেশন মাস্টার দিয়ে আমাদের রেল পরিচালনা করতে হয়। ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি বন্ধের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আবারো কেউ টিকিট কালোবাজারির চেষ্টা করলে তাদের মূল উৎপাটনে আমরা বদ্ধ পরিকর। রেলে অনিয়ম বন্ধের চেষ্টা করছি। রেলকে একটি ভালো প্রতিষ্ঠান হিসেবে এগিয়ে নিতে চাই। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে রেলকে দুর্নীতিমুক্ত করে জনসেবার প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে চাই।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন চিফ হুইপ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী। এসময় উপস্থিত ছিলেন রেল মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ. বি. এম ফজলে করিম চৌধুরী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্বে করেন রেলের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কলার কাঁদি নিয়ে ঝগড়ায় ভাইয়ের হাতে ভাই খুন

নির্বাচন সংক্রান্ত সেবা মিলবে ৯৯৯-এ

এক জালে ধরা পড়ল ১৬ লাখ টাকার ইলিশ

৩৪ জনকে নিয়োগ দেবে বিআরটিসি, আবেদন অনলাইনে

চিকিৎসা অনুদান পাবে শিক্ষার্থীরা, আবেদন যেভাবে

হঠাৎ বৃষ্টিতে প্রাণ ফিরে পেল বীজতলা

ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যাকসেসরিজ এবং লাইটিং পণ্যের ৪৭ শতাংশই বেনামী ব্র্যান্ডের দখলে

পুকুরে ভাসছিল যুবকের মরদেহ

১২ সেকেন্ডে চুরি ৩০০ কোটি টাকা

কুমিল্লার গোমতী পাড়ে দেখা মিলেছে ‘মৃত্যুদূত’ পার্থেনিয়ামের

১০

আজ সাংবাদিক গৌতম দাসের ৫২তম জন্মবার্ষিকী

১১

মুক্তি পাচ্ছে নিরব-স্পর্শিয়ার ‘সুস্বাগতম’ 

১২

এস আলম গ্রুপে চাকরি, আবেদনের শেষ সময় ২৩ মে

১৩

সেপটিক ট্যাংকে নেমে ২ শ্রমিকের মৃত্যু 

১৪

দিনাজপুরে বেড়েছে কাঁচা মরিচের ঝাঁঝ

১৫

কিম জং উনের চেয়েও ভয়ংকর নেতা আসছে উত্তর কোরিয়ায়

১৬

ইউটিউবের এক চ্যানেলেই জয়কে নিয়ে ১০ বার গুজব

১৭

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশ মোতায়েন

১৮

ধানক্ষেতে কৃষককে কুপিয়ে হত্যা করল বোন জামাই

১৯

পরিত্যক্ত জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের বাদাম চাষ

২০
X