বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন হবে বলে প্রত্যাশা করেছেন সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ইমন গিলমোর। তিনি বলেন, বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায় ইইউ।
বাংলাদেশ সফরের দ্বিতীয় দিনে মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা জানান ইমন গিলমোর।
এ দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে ইইউর উদ্বেগ রয়েছে বলে জানান তিনি।
গিলমোর বলেন, সাংবাদিকসহ অনেকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে (ডিএসএ) মামলা হয়েছে। তাদের এই আইনটি নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে। তারা ডিএসএ ও শ্রম আইনের সংশোধন চান।
আরও পড়ুন: সংশোধন হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন : আইনমন্ত্রী
আজ সকালে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়ার সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে দিনের কার্যক্রম শুরু করেন। এরপর তিনি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন। এসব বৈঠকে ইউরোপিয়ান এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের (ইইএএস) রাজনৈতিক উপদেষ্টা ভিক্টর ভেলেক, ঢাকায় নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি এবং ফার্স্ট সেক্রেটারি (রাজনৈতিক) সেবাস্টিয়ান রিগার-ব্রাউন উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকগুলোর পর গিলমোর গণমাধ্যমের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
এর আগে গত সোমবার সকালে এক সপ্তাহের সফরে ঢাকায় আসেন ইমন গিলমোর। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও তার সাক্ষাতের কথা রয়েছে। এ ছাড়াও তিনি আগামীকাল বৃহস্পতিবার রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখতে কক্সবাজার যাবেন।
কোনো দলকে নির্বাচনে আনার ব্যাপারে কথা হয়নি : গতকাল দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ইমন গিলমোরের সঙ্গে বৈঠকের পর এক প্রশ্নের জবাবে শাহরিয়ার আলম বলেন, আমরা নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেছি। কিন্তু অন্য রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে আনার বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। এটি সম্পূর্ণভাবে তাদের বিষয়। আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছি এবং জানিয়েছি, নির্বাচনকালীন সরকার নির্বাচন কমিশন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে।
বাংলাদেশের গণতন্ত্রের বয়স খুব বেশি দিনের নয় এবং এর ‘সীমাবদ্ধতা’ ইইউ নেতৃত্ব ভালো করে জানেন ও বোঝেন বলেও উল্লেখ করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।
এক প্রশ্নের জবাবে ইমন গিলমোর বলেন, আশা করছি, বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। নির্বাচন বলতে আমরা শুধু ভোটের দিনেই কী ঘটছে, তা দেখব না। নির্বাচনপূর্ব পরিবেশের প্রতিও নজর রাখব। কে নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর পরিস্থিতি, রাজনৈতিক বিতর্ক, সংবাদমাধ্যমের পরিস্থিতি, প্রশাসনিক ও নির্বাচনী ব্যবস্থাও নজরে রাখব। এরই মধ্যে ইইউ’র প্রাক-নির্বাচনী অনুসন্ধানী দল বাংলাদেশ সফর করেছেন। তারা ইইউ পররাষ্ট্র নীতিবিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেলের কাছে প্রতিবেদন জমা দিলে তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন নির্বাচন পর্যবেক্ষক পাঠানো হবে কিনা। এখনই এর বেশি কিছু বলতে চাই না।
তিনি আরও বলেন, আমরা একটি নতুন ধাপে প্রবেশ করছি। এখন কীভাবে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও বাড়ানো যায়, সেদিকে নজর দেব। সেক্ষেত্রে আমাদের ফোকাস হবে মানবাধিকার ও অর্থনীতি। কারণ, এখন ভোক্তারা অনেক বেশি সতর্ক। আর বিনিয়োগকারীরাও মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে অনেক বেশি অবগত।
বিদেশিদের সফরে ভুল বোঝাবুঝি দূর হচ্ছে : পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর ইইউ’র বিশেষ প্রতিনিধি সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকের পর এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী জানান, বিদেশিদের সফর কখনো কোনো ভুল বোঝাবুঝি হয়ে থাকলে সেগুলো দূর করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আলোচনার মাধ্যমে সেগুলো অনেক ক্ষেত্রেই দূর হচ্ছে।
ডিএসএ’তে যে সংশোধনী আসছে তাতে সাংবাদিকরা খুশি হবে জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যেই সংশোধিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংসদে পাস হবে।
গিলমোর জানান, বৈঠকে তারা মুক্ত গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের গুরুত্বের কথা বলেছেন। ডিএসএ, শ্রম আইন ছাড়াও প্রস্তাবিত উপাত্ত সুরক্ষা আইন নিয়েও আলোচনা হযেছে। তারা আইনগুলোর সংশোধনী আনার চলমান প্রক্রিয়া নিয়েও অবগত রয়েছেন।
গুম-খুন কমেছে জানালেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : ইইউর বিশেষ প্রতিনিধি ইমন গিলমোরের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ভালো অবস্থায় আছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি জানান, ইইউ প্রতিনিধিদল রোহিঙ্গা নিয়ে সরকারের ভূমিকার প্রশংসা করেছে।
নির্বাচন বিষয়ে ইইউ প্রতিনিধি জানতে চেয়েছেন বলে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা নির্বাচনের প্রস্তুতি বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনকে যেভাবে গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে, সে অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সহযোগিতা করা হবে বলে জানিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, হঠাৎ করে বিরোধী দল এমন কর্মসূচি দিচ্ছে, যা জনগণের জন্য দুর্ভোগ সৃষ্টি করছে। তাদের কোনো কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হয়নি। তবে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মানবাধিকার ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বিগ্ন ইইউ : সকালে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কার্যালয়ে চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বৈঠকের পর ইমন গিলমোর বলেছেন, নির্বাচন সামনে রেখে মানবাধিকার পরিস্থিতি ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে তাদের উদ্বেগ রয়েছে।
গিলমোর বাংলাদেশ ও ইইউ’র সুসম্পর্কের কথা তুলে ধরে বলেন, অর্থনৈতিকভাবে আমাদের সম্পর্ক অনেক শক্তিশালী। বাংলাদেশের মানবাধিকার ইস্যুতে আমরা বেশকিছু পরামর্শ দিয়েছি। তারা সরকারি পর্যায়ে কথা বলবে। কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুম এসব বিষয় নিয়েই মানবাধিকার কমিশন কাজ করছে। এসব ঘটনা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক। বিদেশিদের কাছে ভাবমূর্তি নষ্ট করে।
মন্তব্য করুন