বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, জামায়াতে ইসলামীকে হিন্দুবিদ্বেষী দল হিসেবে অপপ্রচার চালানো হয় অথচ দেশে হিন্দুসহ ভিন্নধর্মাবলম্বীদের সুরক্ষার জন্য জামায়াতে ইসলামী প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
সোমবার (১২ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর পুরানা পল্টনে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে ভিন্নধর্মাবলম্বী নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, একইসঙ্গে হিন্দুদের ব্যাপারেও দেশে একটি ধারণা প্রচলিত আছে, সেটি হলো হিন্দু মানেই মনে করা হয় আওয়ামী লীগ। জামায়াতকে যেমন হিন্দুবিরোধী অপপ্রচার দেওয়া হয়েছে, তেমনি হিন্দুদেরও আওয়ামী লীগের একটা ট্যাগ লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ জন্য হিন্দুদেরও যেমন জামায়াতের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বন্ধে কাজ করতে হবে, তেমনি জামায়াতকেও হিন্দু মানেই আওয়ামী লীগ এই ‘তকমা’ দূরীকরণে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা হিন্দুসহ ভিন্নধর্মাবলম্বীদের সুরক্ষায় জামায়াতের পক্ষ থেকে দুটি দাবি নিয়ে দাঁড়িয়েছি। প্রথমত, রাষ্ট্রীয়ভাবে হিন্দু সম্প্রদায়কে সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। দ্বিতীয়ত, স্বাধীন কমিশন করে হিন্দুসহ ভিন্নধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলা-নির্যাতনের বিচার করতে হবে।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, জামায়াত হিন্দুদের ওপর আঘাতে বিশ্বাস করে না। যে কোনো অন্যায় হিন্দু বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, মুসলমানসহ সব ধর্মেই নিষিদ্ধ। আমি নিজে হিন্দু অধ্যুষিত এলাকার এমপি ছিলাম। আমাকে হিন্দুরাও অনেক ভোট দিয়েছিল, তারা আমাদের বিশ্বাস করে। আমাদের ওপর তাদের পুরোপুরি আস্থা আছে। এটা আমাদের আদর্শিক দায়িত্ব। জামায়াত এই আদর্শিক দায়িত্ব থেকেই সারা দেশে ভিন্নধর্মাবলম্বীদের উপাসানালয় ও বাসা বাড়ির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
হিন্দু-বৌদ্ধসহ অন্যান্য ধর্মীয় নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার বাইরেও যদি আপনারা আপনাদের নিরাপত্তায় জামায়াতকে প্রয়োজন মনে করেন, যে কোনো সময়েই আমাদের ফোন করবেন, আমরা সর্বোচ্চ সামর্থ্য নিয়ে আপনাদের পাশে দাঁড়াব।
হিন্দু নেতারা বলেন, ইতিহাস থেকে দেখা যায় বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক স্বার্থে সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা এ থেকে পরিত্রাণ চাই। বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য সব রাজনৈতিক দল ও ক্ষমতাশীলদের কাছে আহবান জানাচ্ছি।
তারা বলেন, বর্তমান ক্রান্তিকালে জামায়াতে ইসলামী যেভাবে আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। আমরা প্রত্যাশা করি সবসময় আপনারা আমাদের পাশে থাকবেন।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, ভিন্নধর্মাবলম্বী জাতীয় নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সভাপতি অ্যাডভোকেট দীনবন্ধু রায়, নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট প্রদীপ কুমার পাল, মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক।
এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি শ্রী বাসুদেব ধর, সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা, বাংলাদেশ ব্রাহ্মণ সংসদের মহাসচিব বিজয় কৃষ্ণ ভট্টাচার্য, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমারাথ, শ্রী শ্রী ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ডিএন চ্যাটার্জি, শ্রী শ্রী ব্রাহ্মচারী আশ্রম ও মন্দির পরিচালনা পরিষদের সহসভাপতি শ্রী রবিন মুখার্জি, সাধারণ সম্পাদক বিষ্ণু পদ ভৌমিক, জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহিলাবিষয়ক সম্পাদিকা অ্যাডভোকেট প্রতিভা বাগচী, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, সহকারী সেক্রেটারি যথাক্রমে দেলোয়ার হোসেন, কামাল হোসাইন ও ড. আবদুল মান্নান, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি অ্যাডভোকেট এস এম কামাল উদ্দিন প্রমুখ।
মন্তব্য করুন