বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেছেন, শহীদ পরিবারের সদস্যদের কষ্ট ও কলিজাছেঁড়া আর্তনাদে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। রক্ত সাগর পাড়ি দিয়ে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে বিপ্লব সৃষ্টি হয়েছে, তার ফলে আমরা একটি মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি, মত প্রকাশের সুযোগ পেয়েছি।
রাষ্ট্রীয় সব শক্তিকে কাজে লাগিয়ে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট অপশক্তি ছাত্র-জনতার আন্দোলন ব্যর্থ করে দিতে চেয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইতিহাস সাক্ষী ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান ছিল ছাত্রদের নেতৃত্বে। ছাত্রদের আন্দোলন কখনো ব্যর্থ হয়নি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ব্যর্থ করার সব রকম অপচেষ্টা করেও এই জুলুমবাজ ফ্যাসিস্ট সরকার পার পায়নি। ৫ আগস্ট লক্ষণ সেনের মতো পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে বলে জানান এ জামায়াত নেতা।
শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর শনির আখড়ায় ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের যাত্রাবাড়ী অঞ্চলের উদ্যোগে আয়োজিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় ও আর্থিক অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
জামায়াতের এ অনুষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ ২৫ পরিবারের মাঝে ৫০ লাখ টাকা আর্থিক অনুদান দেওয়া হয় বলে দলটির প্রেস বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়।
নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে এ দেশকে বসবাসের অযোগ্য ও ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল। দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে সাংবিধানিক সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছিল। বিচার ব্যবস্থাকে দলীয়করণ করে বিচারের নামে অবিচার শুরু করেছিল।
তিনি আরও বলেন, তারা জুডিশিয়াল কিলিংয়ের মাধ্যমে জামায়াতের ১১ শীর্ষ নেতাকে হত্যা করেছে। ১৬ বছরের শাসনামলে জামায়াতের ৫০০ নেতাকর্মীকে শহীদ করেছে, ২০ হাজার মিথ্যা মামলা দিয়ে লাখ লাখ নেতাকর্মীকে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে দেয়নি। স্বাধীন বাংলাদেশের সীমানাকে অরক্ষিত করে সীমান্তে ফেলানীর মতো লাশ উপহার দিয়েছে। এমতাবস্থায় দেশ পুনর্গঠন করতে হবে।
দেশপ্রেমিক শক্তির মাধ্যমে সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঢেলে সাজাতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিপ্লবোত্তর নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। ৫ আগস্ট থেকেই দুর্বৃত্তদের লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও চাঁদাবাজি প্রতিরোধ এবং ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের কোনো উপাসনালায়সহ দেশের মানুষের জান-মালের নিরাপত্তায় জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করেছে।
ষড়যন্ত্রকারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার এই ঐতিহাসিক বিজয়কে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করলে এর দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে। এ দেশের জনগণ এখন সজাগ ও সচেতন রয়েছে; কোনো কুচক্রী মহলের আর কোনো দেশবিরোধী এজেন্ডা আর বাস্তবায়ন করতে দেবে না।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যাদের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে দেশপ্রেমিক অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেসব শহীদ পরিবারের দায়িত্ব নিয়ে তাদের কর্মসংস্থান এবং আহতদের সুচিকিৎসা ও পঙ্গুত্ববরণকারীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
মহানগর দক্ষিণের নায়েবে আমির আব্দুস সবুর ফকিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কর্মপরিষদ সদস্য ড. মোবারক হোসাইন, মজলিসে শূরা সদস্য আব্দুর রহিম জীবন।
উপস্থিত ছিলেন মহানগর দক্ষিণের মজলিসে শূরা সদস্য মাওলানা সাদেক বিল্লাহ, অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ, শাজাহান খান, মীর বাহার আমিরুল ইসলাম, জুনায়েদ ইসলাম, মাওলানা বায়জিদ হাসান, আবুল হোসেন, নওশাদ আলম ফারুক, মিজানুর রহমান মালেক, অ্যাডভোকেট শাফিউল আলম, আহমেদ রাসেল, মির্জা হেলাল, ছাত্রশিবিরের ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সভাপতি আমান উদ্দিন আমিনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।
মন্তব্য করুন