নির্বাচনের নামে প্রহসনের আয়োজন করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বসার যে নীল নকশা তৈরি করেছে, তা জনগণ কিছুতেই মেনে নিবে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মা’ছুম।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ কাদেরকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দিবে, তা অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে নির্ধারিত হবে। আওয়ামী লীগ ভারতের সহযোগিতা নিয়ে ২০১৪ সালে ভোটারবিহীন ও ২০১৮ সালে মধ্যরাতের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় বসার যে কু-নজির স্থাপন করেছে, তা জনগণ ভুলে যায়নি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আবারও ভারতের সহযোগিতা নিয়ে নির্বাচনের নামে প্রহসনের আয়োজন করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বসার যে নীল নকশা তৈরি করেছে, তা জনগণ কিছুতেই মেনে নিবে না।
শুক্রবার (১১ আগস্ট) আওয়ামী লীগের ভারত তোষণনীতি ও দেশের ইসলামী দলসমূহের ওপর দমনপীড়নের ষড়যন্ত্রের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন।
এ টি এম মা’ছুম বলেন, ভারত বাংলাদেশের প্রতিবেশী রাষ্ট্র। বাংলাদেশের জনগণ ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চায়। কিন্তু ভারত বরাবরই বাংলাদেশের ওপর আধিপত্য বিস্তারের নানা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের দ্বিপাক্ষিক সমস্যাগুলো সমাধানের পরিবর্তে নতুন নতুন সমস্যা তৈরি করে বাংলাদেশকে সংকটের মুখে ফেলে দিয়েছে। পানি সমস্যার সমাধান, টিপাইমুখ বাঁধ ও সীমান্ত হত্যা বন্ধে ভারত কোনো সাড়া দেয়নি। আওয়ামী লীগ দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে তাদের রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের লক্ষ্যে বাংলাদেশ-ভারতের দ্বিপাক্ষিক সমস্যা সমাধানের কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। উল্টো ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের নামে ভারত তোষণনীতিতে লিপ্ত রয়েছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল ভারত সফর শেষে বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) সংবাদ সম্মেলনে যে বক্তব্য রেখেছে- তাতে জনগণ গভীরভাবে শঙ্কিত। আওয়ামী লীগ নেতারা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভারত তাদের পাশে থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। দেশের জনগণকে এড়িয়ে ভারতকে পাশে পাওয়ার প্রবণতা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ত ও ভারত তোষণনীতির সুস্পষ্ট প্রমাণই বহন করে।
জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ নেতারা জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য ইসলামী দলের উত্থান ঠেকানোর যে কথা বলেছেন, তা অনভিপ্রেত, অনাকাঙ্ক্ষিত ও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত ছাড়া আর কিছু নয়। কথিত জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার জন্য দুই দেশের গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে যোগাযোগ ও তথ্য আদান-প্রদানের যেসব কথা বলা হয়েছে, তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত ছাড়া আর কিছু নয়।
জামায়াতের এ নেতা বলেন, আমরা উল্লেখ করতে চাই, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী যে ঐতিহাসিক ভূমিকা রেখেছে, তা এ দেশের জনগণ অবগত আছে। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখতে গিয়ে জামায়াতের পাঁচজন নেতা ও একজন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। আওয়ামী লীগ নেতারা জামায়াতে ইসলামীর নাম উল্লেখ করে যেসব অসত্য ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিয়েছেন, আমরা তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
বাংলাদেশের জনগণ রাজনীতি করে সাংবিধানিক অধিকারের ভিত্তিতে, আর আওয়ামী লীগের রাজনীতি হচ্ছে ভারতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ও তাদের পৃষ্ঠপোষকতার ভিত্তিতে। দেশের জনগণ আওয়ামী লীগের এ কর্মকাণ্ডকে গ্রহণ করেনি। জামায়াত ও ইসলামী দলসমূহকে ভারতের সহযোগিতা নিয়ে ঠেকানোর যে বক্তব্য আওয়ামী লীগ দিয়েছে, দেশের জনগণ তা ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করব, বলেন তিনি।
জামায়াতের শীর্ষ এই নেতা আরও বলেন, আমরা আওয়ামী লীগের ভারত তোষণনীতি ও প্রহসনের নির্বাচনের ষড়যন্ত্রের মোকাবিলায় দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অবিলম্বে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা পূর্বক তাদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে এবং সংসদ ভেঙে দিয়ে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
মন্তব্য করুন