বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, গুম হওয়া পরিবারের কান্না আজ সবার হৃদয়ে স্পন্দন সৃষ্টি করলেও সরকার সে কান্নার শব্দ শুনতে পায় না।
তিনি বলেন, আজকে এই গুম প্রতিরোধ দিবসে এখানে এক শিশু বলল, আমি গুম দিবস চাই না, বাবা দিবস চাই। এটা বলে ওই শিশুর অঝোরে অশ্রু ঝরতে থাকে। এই রকম নিষ্পাপ শিশুদের ক্রন্দনের বন্যায় ভেসে যাবে ক্ষমতাসীন বাকশালি সরকার।
বুধবার (৩০ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় এক মানববন্ধনে এসব কথা বলেন মঈন খান।
আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর বিএনপির যৌথ উদ্যোগে মুখে কালো কাপড় বেঁধে এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। বিকেল ৩টায় শুরু হয়ে কর্মসূচি চলে ৪টা পর্যন্ত। দিবসটি উপলক্ষে কালো পতাকা মিছিলের কথা থাকলেও পরে কর্মসূচি পরিবর্তন করে মানববন্ধন করা হয়।
মঈন খান বলেন, আজকে এই মানববন্ধনে গুম হওয়া পরিবারের সদস্যরা এখানে উপস্থিত হওয়ায় তাদের ধন্যবাদ জালানেও আজকে তাদের জন্য, আমাদের জন্য বিষাদের দিন। সরকারকে এজন্য জবাব দিতে হবে।
তিনি বলেন, বিএনপি আজকে গণমানুষের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার আন্দোলন করছে। বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের প্রদত্ত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে এ সরকারকে বিদায় নিতে হবে। জনগণ এসব শান্তি কর্মসূচি অনুসরণ করে মানুষের অধিকার, ভোটের অধিকার, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবে।
গুম হওয়া পারভেজ হোসেনের ছোট মেয়ে হৃদি বলেন, ‘আমার বুকের সামনে এই ছবিটি আমার বাবার। আমি বাবাকে ১০ বছর দেখি না। আমি আমার পাপ্পাকে ফেরত চাই। আর ভালো লাগছে না আমার। বাবাকে আপনারা ফিরিয়ে দিন। আর গুম দিবস পালন করতে চাই না, বাবা দিবস ফেরত চাই।’
গুম হওয়া মাহফুজুর রহমান সোহেলের ছোট্ট মেয়ে সাফা কান্না বিজড়িত কন্ঠে বলেন, ‘আমার বাবাকে আজকে ১০ বছর ধরে দেখি না। আমি ছোটকালে বাবাকে দেখি নাই। বাবা ছাড়া ভালো লাগে না। বাবাকে নিয়ে ঈদের সময় কাপড় কিনতে পারি না, বাবাকে নিয়ে ঘুরতে যেতে পারি না। আমি খুব কষ্টে আছি। সরকারের কাছে আমার একটাই চাওয়া আমার বাবাকে ফিরিয়ে দিন, আমি আর কিছু চাই না।’
এছাড়া গুম হওয়া সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন সানজীদা ইসলাম তুলি, হুমায়ুন কবির পারভেজের ছেলে শাহরিয়া, মাজহারুল ইসলাম রাসেলের বড় ভাই লোটাস, মিরাজ খানের স্ত্রী আমেনা আখতার বৃষ্টিকে তাদের দুঃখ ও কষ্টের কথা বলতে গিয়ে বার বার অশ্রুসজল হয়ে পড়তে দেখা যায়।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহবায়ক আব্দুস সালাম বলেন, এই সরকারের বিরুদ্ধে কোনোকিছু বলা যায় না। হারিয়ে যাওয়া মানুষদের ফিরে পেতে হলে সরকারের পতনের বিকল্প নেই। আওয়ামী লীগ মানেই অত্যাচার, আওয়ামী লীগ মানেই নিপীড়ন। সকলকে রাজপথে নেমে সোচ্চার হতে হবে, জানিয়ে দিতে হবে আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না।
সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহবায়ক আমান উল্লাহ আমান বলেন, প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের গুম করেছে এই সরকার। রাজপথে আন্দোলনে দাবি আদায়ের প্রস্তুতি নিন, দেশ-বিদেশের সবাই বিএনপির পাশে আছে। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে ক্ষমতাসীনদের পরাজিত করা হবে।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় গুম হওয়া নেতা-কর্মীদের সন্ধানের দাবিতে অনুষ্ঠিত এই মানববন্ধনে বিএনপির সিনিয়ির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মীর সরফত আলী সপু, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানি, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
কর্মসূচিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মফিকুল হাসান তৃপ্তি, বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ, আবু সাঈদ, হাসান মামুন, আকরামুল হাসান, ইকবাল হোসেন শ্যামল, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহবায়ক আব্দুস সাত্তার, সাইফুল ইসলাম, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের অধ্যাপক ডা. জাহিদ হোসেন, কাদের গণি চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক লুৎফর রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের অধ্যাপক মোঃ শামসুল আলম, অধ্যাপক মোঃ নুরুল ইসলাম, কৃষক দল নেতা ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুব, স্বেচ্ছাসেবক দলের রাজিব আহসান, নাজমুল হাসান, ডা. জাহেদুল কবির জাহিদ, সরদার মো. নুরুজ্জামান, হারুনুর রশিদ, সাবেক স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আনু মো. শামীম আজাদ, মোকছেদ আলম, ছাত্রদলের সাইফ মাহমুদ জুয়েল, রাকিবুল ইসলাম রাকিবসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
আন্তর্জাতিক এই দিবসে রাজধানী ছাড়াও সারাদেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে দলের নেতা-কর্মীরা মুখে কালো কাপড় বেঁধে মৌন মিছিল করে।
মন্তব্য করুন