কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ জুন ২০২৫, ০৮:৪৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

আবু সাঈদের আত্মত্যাগই ফ্যাসিবাদের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিল : শফিকুর রহমান

সাধারণ জনগণের সঙ্গে মতবিনিময়কালে জামায়াতে ইসলামী আমির ডা. শফিকুর রহমান। ছবি : কালবেলা
সাধারণ জনগণের সঙ্গে মতবিনিময়কালে জামায়াতে ইসলামী আমির ডা. শফিকুর রহমান। ছবি : কালবেলা

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আবু সাঈদের আত্মত্যাগই ফ্যাসিবাদের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিল।

মঙ্গলবার (২৪ জুন) দুপুরে রাজধানীর মিরপুরে ঢাকা-১৫ সংসদীয় আসনের সাধারণ জনগণের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের মাফিয়াতন্ত্রীদের অপশাসন-দুঃশাসন থেকে মুক্তি দিয়েছেন। এক্ষেত্রে আমাদের যুবসমাজ রাজপথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছেন। শহীদ আবু সাঈদ ‘বুকের ভেতর তুমুল ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর’ বলে বন্দুকের নলের মুখে বুক পেতে দিয়ে আমাদের এ ঐতিহাসিক বিজয় নিশ্চিত করেছিলেন। তার এ আত্মত্যাগই মূলত স্বৈরাচারের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছে। মূলত, বাংলাদেশের ওপর আল্লাহ তায়ালার বিশেষ রহমত আছে। আল্লাহ আমাদেরকে অনেক বড় বড় বিপদ থেকে রক্ষা করেছেন। যার অন্যতম নজিরই হচ্ছে আমাদের আগস্ট বিপ্লব। তিনি অর্জিত বিজয়কে অর্থবহ ও ফলপ্রসূ করতে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান। আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সকল প্রকার অশান্তিমুক্ত করে দেশকে ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে জামায়াত আমির।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, পতিত আওয়ামী ফ্যাসিবাদী আমলে পুরো দেশকে একটি জ্বলন্ত অগ্নিগিরিতে পরিণত করা হয়েছিলো। আমি এ আসনে নিজে প্রার্থী হলেও এখানে আমার আসার সুযোগ ছিল না। এমনকি এ আসনে আমাদের দায়িত্বশীলকে নির্বাচনের মাত্র তিন আগে উঠিয়ে নিয়ে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। নির্বাচনের এজেন্ট ও সহকর্মীদের রাস্তায় হাঁটতে পর্যন্ত দেওয়া হয়নি বরং তাদেরকে উঠিয়ে নিয়ে কনসালট্রেশন সেন্টারে আটক করে শারীরিকভাবে নির্মম নির্যাতন করা হয়েছিলো। দিন শেষে কাউকে কাউকে ছেড়ে দিলেও অন্যদেরকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। আর এভাবে কোনো সভ্য সমাজ চলতে পারে না। মূলত, আগুনকে বেশিদিন ছাই চাপা দিয়ে রাখা যায় না। তাই সে আগুনের লেলিহান শিখায় স্বৈরাচারের তখতে তাউস খান খান হয়ে গেছে। তাদের পতন ঘটেছে লজ্জাজনকভাবে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে বিরোধী দল ও ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়েছে। এক্ষেত্রে তারা দেশের বরেণ্য আলেম-উলামাদের বিশেষভাবে টার্গেট করেছিলো। মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মামলা দিয়ে গ্রেফতার করে কথিত রিমান্ডের নামে চালানো হয়েছিল অবর্ণনীয় নির্যাতন। হাতে হ্যান্ডকাফ ও পায়ে ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে জেলে থেকে জেলে স্থানান্তর করে তাদেরকে বেইজ্জতি ও নাজেহাল করা হয়েছিল। বিচারের নামে প্রহসনসহ নানাভাবে তাদেরকে শহীদও করা হয়েছে। তিনি আল্লামা সাঈদীর কথা উল্লেখ করে বলেন, একজন হাসি-খুশি ও প্রাণবন্ত মানুষকে হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে তার পরিবারের সদস্যদের সাথে সাক্ষাৎ করতে দেওয়া হয়নি। এমনকি চিকিৎসকরাও তার সাথে সাক্ষাৎ করতে পারেনি। এরমধ্যেই তার মৃত্যু হয়েছে। বাস্তবে কী হয়েছে আল্লাহ তায়ালাই ভালো জানেন।

আমীরে জামায়াত বলেন, দীর্ঘ অপশাসনে-দুঃশাসনে দেশ অপরাধ ও অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছিলো। হত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, দুর্নীতি, দুঃশাসন, লুটপাট, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, গুপ্তহত্যা, গুম ও অপহরণ আমাদের দেশকে প্রায় অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করেছিলো। দেশে আইন বা সুশাসন বলে কিছুই ছিল না। জনগণের অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলেও রাষ্ট্রই জনগণের অধিকার কেড়ে নিয়ে দেশকে একটি মাফিয়াতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করেছিলো। কিন্তু আল্লাহর বিশেষ রহমতে সে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। আগামী নির্বাচনে জনগণ আমাদেরকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করলে আমরা দেশকে দীর্ঘ অপশাসন- দুঃশাসনের দুষ্ট ক্ষত থেকে মুক্ত দেশকে ন্যায়-ইনসাফের ভিত্তিতে আধুনিক কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করবো-ইনশাআল্লাহ। তিনি সুখী, সমৃদ্ধ আধুনিক বাংলাদেশ গড়তে সকলকে জামায়াতের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

থানা আমির রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে মতবিনিময়কালে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম, কেন্দ্রীয় মজলিস শূরা সদস্য লস্কর মোহাম্মদ তসলিম এবং ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সক্রেটারি ডা. ফখরুদ্দীন মানিক প্রমুখ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘আমরা খুব খুশি যুদ্ধ শেষ হয়েছে, এটা শুরুর দরকারই ছিল না’

আমরা ঐতিহাসিক বিজয় অর্জন করেছি : নেতানিয়াহু

চীনের প্রশংসায় বিএনপি

দুঃখ প্রকাশ করে ইরানের প্রেসিডেন্টের কাতারের প্রতি বার্তা

ঢাবিতে ককটেল বিস্ফোরণ

হাসনাতের পোস্টে দুদকে তোলপাড় / তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ দুর্নীতি দমন কমিশনের

সংঘাত থামছে না, উল্টো আরও জটিল রূপ নিচ্ছে

যেসব লক্ষ্য পূরণ হওয়ায় যুদ্ধবিরতিতে রাজি হন নেতানিয়াহু

‘দাঁড়িপাল্লায় ভোট দিন’ স্লোগান দিয়ে বিপাকে বিএনপির ১৩ নেতা

অধ্যক্ষের ‘ভুয়া’ সনদ তদন্তে দুদকের অভিযান

১০

ভাঙনে ছোট হয়ে আসছে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত

১১

কাজ না করেই বিল উত্তোলন, প্রতিবেদন জমা হয়নি ৫ কর্মদিবসেও

১২

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আবারও বজ্রসহ ভারী বর্ষণের আভাস

১৩

চট্টগ্রাম প্রতিদিন সম্পাদক আয়ান শর্মার বাবার পরলোকগমন

১৪

জাতিসংঘ পানি কনভেনশনে যুক্ত হলো বাংলাদেশ

১৫

জনগণের ভেতরে বিএনপির শেকড় : প্রিন্স

১৬

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলি সেনা নিহত

১৭

ইরানের জালে আটক মোসাদের ৬ এজেন্ট

১৮

প্রতীকসহ নিবন্ধন ফেরত পাওয়ায় খুশি জামায়াত

১৯

স্কুল ভবন নির্মাণ / কাজ শেষ না করেই বিল ভাউচারে সই নেওয়ার অভিযোগ

২০
X