ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম (চরমোনাই পীর) বলেছেন, ‘আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতির নির্বাচনের কথা উঠলেই কেউ কেউ ভয় পায়। কারণ, এই পদ্ধতি চালু হলে চাঁদাবাজি, ভোট ডাকাতি, দলীয়করণ ও বিদেশে অর্থ পাচার বন্ধ হয়ে যাবে। অথচ যারা এর বিরোধিতা করছে, তারা আজও যৌক্তিকভাবে কোনো অসুবিধা তুলে ধরতে পারেনি। যে নির্বাচন পদ্ধতির মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট, খুঁনি, চাঁদাবাজ তৈরি হয় এমন নির্বাচন বাংলাদেশে আমরা দেখতে চাই না।’
শুক্রবার (১৮ জুলাই) এক দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলের কার্যালয়ে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের উদ্যোগে ‘জুলাই জাগরণ ও স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস’ উপলক্ষে ‘জুলাইয়ের শিক্ষা: নীরবতা মানে গোলামী’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও শহীদদের স্মরণে এই দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি ইউসুফ আহমাদ মানসুরের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি জেনারেল শেখ মাহবুবুর রহমান নাহিয়ানের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা ইউনুস আহমদ, সহকারী মহাসচিব মাওলানা কে এম আতিকুর রহমান, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নেতা ইমরান হোসাইন নূর, সুলতান মাহমুদ, ফয়জুল ইসলাম, মুহাম্মাদ আশিকুল ইসলাম, এস এম কামরুল ইসলাম, মাইমুন ইসলাম, ইউসুফ পিয়াস, শেখ মুহাম্মাদ মাহদী ইমাম, মুহাম্মাদ খাইরুল কবির, আবদুল আজিজ নোমান, এম ইব্রাহীম নাসরুল্লাহ, মুহাম্মাদ তুহিন মালিকসহ আরও অনেকে।
সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘আমাদের কানে এখনো বাজে মুগ্ধের ‘পানি লাগবে পানি’। আবু সাঈদের মতো নিরপরাধ মেধাবী ছাত্রকে যেভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, তা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারিনি। মায়েদের বুক ফাটা কান্না আমরা সহ্য করতে পারিনি। এই নির্মমতা ও জুলুমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে একমাত্র আমরাই রাজনৈতিক দলের ব্যানারে মাঠে নেমেছিলাম।’
চরমোনাই পীর বলেন, ‘আমরা ইসলাম, দেশ ও মানবতার জন্য সংগ্রাম করছি। রাষ্ট্র সংস্কার ও গণহত্যার বিচার চাই। কিন্তু একটি দল ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য যেন উন্মাদ হয়ে উঠেছে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাওলানা ইউনুস আহমদ বলেন, ‘পীর সাহেব চরমোনাই একটি যুগোপযোগী, বাস্তবসম্মত এবং দেশ ও জাতির মঙ্গলকামী প্রস্তাব দিয়েছেন, দেশে অনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচন আয়োজনের। এই পদ্ধতি চালু হলে নির্বাচনী অনিয়ম, ভোট চুরি, চাঁদাবাজি এবং রাজনৈতিক সন্ত্রাসের অবসান ঘটবে ইনশাআল্লাহ। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, কিছু দল এই পদ্ধতির বিরোধিতা করছে। কারণ তারা জানেন, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে তাদের অবৈধ আধিপত্য, দুর্নীতি ও অন্যায়ের সুযোগ বন্ধ হয়ে যাবে।’
এদিকে গোপালগঞ্জে জুলাই যোদ্ধাদের ওপর হামলা, সারা দেশে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি এবং ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস স্থাপনের অনুমতি বাতিলের দাবিতে শুক্রবার বাদ জুমা জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
সমাবেশে ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি শেখ ফজলে বারী মাসউদের সভাপতিত্বে দলের মহাসচিব মাওলানা ইউনুস আহমদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম, আহমদ আবদুল কাইয়ুম, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম, মুহাম্মদ আরিফুল ইসলাম, আব্দুল আউয়াল মজুমদার, ফরিদুল ইসলাম, মো. মাছউদুর রহমান, মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসাইন, ছাত্রনেতা মাহবুবুর রহমান নাহিয়ান প্রমুখ বক্তব্য দেন।
বিক্ষোভ মিছিলে মাওলানা ইউনুস আহমদ বলেন, ‘জুলাই যোদ্ধা ও শহীদ পরিবার এখনো যথাযথ ক্ষতিপূরণ পায়নি। আহতরা সুচিকিৎসার অভাবে এখনো হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন। ব্যবসায়ীরা নিরাপত্তাহীনতায়, পরিবহন ব্যবসায়ীরা চাঁদাবাজদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ। রিকশা-ভ্যান অটো চাঁদা ছাড়া রাস্তায় চলতে পারে না। এমন দেশের জন্য ছাত্র-জনতা জীবনবাজি রেখে লড়াই করেনি।’
মন্তব্য করুন