২৪-এর গণজাগরণ অনেক রাজনৈতিক শক্তির জন্য ছিল এক ধরনের আত্মশুদ্ধির সুযোগ বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম।
শুক্রবার (০৮ আগস্ট) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভেরিফায়েড আইডিতে এক পোস্টে এ মন্তব্য করেন তিনি।
পোস্টে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘৭১ আর ২৪’- দুটি সময়ের মাঝে রয়েছে একটি ঐতিহাসিক সেতুবন্ধ। তবে আজকের প্রজন্ম স্পষ্ট ভাষায় বলছে- ২৪ হলো ৭১-এর চেতনার নবজাগরণ, কিন্তু একইসঙ্গে তা একটি নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতার সূচনা।
তিনি বলেন ৭১-এর যে লক্ষ্য ছিল- সমতা, মর্যাদা ও ন্যায়বিচার- তা নতুনভাবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। যেখানে একদিকে বঙ্গবন্ধুর নামে পরিচালিত ‘মুজিববাদ’কে দায়ী করা হচ্ছে জাতীয় স্বার্থকে ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত করে সার্বভৌমত্ব হরণের জন্য, অন্যদিকে ২৪-কে তুলে ধরা হচ্ছে সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনরুদ্ধারের মুহূর্ত হিসেবে।
নাহিদ বলেন, ২৪-এর গণআন্দোলন ছিল কর্তৃত্ববাদ, স্বৈরতন্ত্র ও শোষণের বিরুদ্ধে একটি ঐক্যবদ্ধ লড়াই। এ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে একটি নতুন প্রজন্মের আবির্ভাব ঘটেছে, যারা ৭১-এর গণ্ডি পেরিয়ে এসেছে এবং একটি সমতাভিত্তিক, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণের স্বপ্নে এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে যারা ‘৭১-এর পক্ষে না বিপক্ষে’ এই পুরোনো দ্বৈত রাজনীতিকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন, তারা মূলত দেশকে একটি অচল রাজনৈতিক কাঠামোয় ফিরিয়ে নিতে চান। কিন্তু ২৪-এর চেতনা ছিল পুরোনো দ্বন্দ্ব ছাপিয়ে একটি নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির সূচনা করা- যেখানে রাষ্ট্র ও সমাজকে একতাবদ্ধ ও গণতান্ত্রিক করা হবে।
তিনি উল্লেখ করেন, আজকের প্রজন্ম ‘মুজিববাদ’সহ যে কোনো ধরনের কর্তৃত্ববাদী ও ফ্যাসিবাদী রাজনীতিকে পরাজিত করাকে তাদের দায়িত্ব হিসেবে দেখছে। ৭১ একটি ইতিহাস- রাষ্ট্রের ভিত্তি হিসেবে তাকে সম্মান জানানো হবে, ঠিক যেমন ৪৭-এর ঘটনাকে স্মরণ করা হয় ইতিহাসের দৃষ্টিকোণ থেকে। তবে রাজনৈতিক বৈধতা অর্জনের হাতিয়ার হিসেবে এসব ঘটনাকে ব্যবহার করা আর চলবে না।
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ২৪ কোনো প্রতিশোধের আন্দোলন ছিল না। যারা এটিকে প্রতিশোধ হিসেবে দেখছে, তারা এর মূল চেতনাকেই ভুল বুঝেছে। বরং ২৪ ছিল একটি জাতীয় ঐক্য ও পুনর্মিলনের জায়গা- যার মূল শক্তি ছিল সমবেদনা, আলোচনার মাধ্যমে সমাধান এবং সম্মিলিত দায়িত্ববোধ।
স্ট্যাটাসের শেষে বলা হয়েছে- যারা এখন আবার ৭১-এ ফিরে যেতে চাইছেন, তারা শুধু অতীতে ফিরে যাচ্ছেন না, বরং ২৪-এর চেতনাকে অস্বীকার করছেন। ইতিহাসের প্রশ্নগুলো অবশ্যই আলোচনায় থাকবে, কিন্তু আজকের রাজনীতি গড়ে উঠবে ২৪-এর মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করে।
মন্তব্য করুন