মানুষ যেমন অন্যের সন্তানকে লালন-পালনের জন্য দত্তক নেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনও (ডিএনসিসি) তেমনি সড়কগুলো গাছ লাগানোর জন্য দত্তক দেবে। যে কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা গাছ লাগানো ও পরিচর্যার জন্য এসব সড়ক দত্তক নিতে পারে। এ উদ্যোগ পরিবেশকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করবে।
বৃহস্পতিবার (২২ জুন) দুপুরে মহাখালীর এ কে খন্দকার সড়কে ডিএনসিসি ও বন অধিদপ্তরের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘সবুজে বাস, বারো মাস’ শীর্ষক বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন মেয়র আতিকুল ইসলাম।
আতিকুল ইসলাম বলেন, রাজধানীবাসীকে গাছ লাগাতে উদ্বুদ্ধ করতে বিভিন্ন সড়ক গাছ লাগানোর জন্য দত্তক দেওয়া হবে। প্রত্যেকেই গাছগুলোর যত্ন ও পরিচর্যা করবে। সুস্থ পৃথিবী চাইলে গাছ লাগানোর বিকল্প নেই। গাছ আমাদের অক্সিজেন দেয়, আর সেসব গাছ আমরা কেটে ফেলি। এখন থেকে গাছ কাটতে হলে বন বিভাগের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, আগামী ২ বছরের মধ্যে ডিএনসিসিতে দুই লাখ গাছ লাগানো হবে। ৭২ হাজার গাছ দেওয়া হচ্ছে কাউন্সিলরদের। তারা এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে গাছ লাগাবে। যত্ন করবে। কেননা মানুষ পরিবেশকে ধ্বংস করছে। আর পরিবেশও প্রতিশোধ নিচ্ছে। এতে উত্তাপ বাড়ছে। পৃথিবী তার বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে।
মেয়র বলেন, একসময় এ ঢাকা ছিল গাছ-পালায় ভরপুর। মাটি ছিল উর্বর। নিজেদের স্বার্থের কথা ভাবতে গিয়ে বনভূমি উজাড় করে ফেলেছি। এখন রাস্তায় বের হলে আর আগের মতো ছায়া পাই না। বিশুদ্ধ অক্সিজেন হাব কোথাও নেই। অসহ্য তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করতে থাকি। প্রকৃতি তার প্রতিশোধ নিতে শুরু করেছে। তাই মনে হলো আর গাছ কেটে ফেললেন, এটা করা যাবে না।
তিনি বলেন, একসময় সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা সবুজ বাংলাদেশ নামে এ দেশের খ্যাতি ছিল। এখন আর এটা নেই। আমরা গাছ কেটে বনভূমি উজাড় করে ফেলছি। গাছপালা কমে যাওয়ায় শ্যামল ছায়া আর দেখতে পাওয়া যায় না। সবুজ শ্যামল বাংলাদেশ থেকে দূরে সরে গিয়েছি। এগুলো এখন আমাদের কাছে ইতিহাস মনে হয়। ঢাকা শহরে পরিকল্পিতভাবে বৃক্ষরোপণের মধ্য দিয়ে সেই ইতিহাসকে সামনে নিয়ে আসতে চাই। আবার ঢাকা শহরকে সবুজ ছায়ায় ছেয়ে দিতে চাই।
ডিএনসিসি মেয়র বলেন, আমি দাবি জানিয়েছিলাম যারা সুষ্ঠুভাবে ছাদবাগান করবেন সেসব বাসার মালিকদের ১০ শতাংশ হোল্ডিং ট্যাক্স ছাড় দেওয়া হবে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সেই সুবিধা এখন সব সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাকে দিচ্ছে। এটি একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত বলে তিনি উল্লেখ করেন। আমাদের বাঁচার একটাই পথ- বিপুলসংখ্যক গাছ লাগাতে হবে। যেখানেই ফাঁকা জায়গা সেখানেই বৃক্ষরোপণ করে পরিচর্যা করতে হবে। এভাবে এগোতে থাকলে ঢাকা হবে আবার সেই সবুজ ঢাকা এবং একটি পরিপূর্ণ অক্সিজেন হাব।
যে কোনো পরিস্থিতিতে ডিএনসিসিসহ যে কোনো সংস্থাকে আর একটি গাছও না কাটার আহ্বান জানিয়ে মেয়র বলেন, কোনো কাজের জন্য গাছ কাটার দরকার হলে আসুন আমরা বসি, আলোচনা করি। বাস্তবতা বিচার করি। মনে হলো আর গাছ কেটে ফেললেন, এটা করা যাবে না।
মেয়র আরও বলেন, কোরবানির সময় পশুর বর্জ্য যেখানে সেখানে ফেলা যাবে না। সিটি করপোরেশন ১০ লাখ পরিবেশবান্ধব পলিব্যাগ বিতরণ করবে। বর্জ্যগুলো ব্যাগে ভরে নির্দিষ্ট স্থানে রাখুন। সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মীরাই যথাসময়ে নিয়ে যাবে। পশুর হাট থেকে সংগৃহীত গোবরকে সারে পরিণত করে বিভিন্ন নার্সারিকে দেওয়া হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান বন সংরক্ষক আমির হোসেন চৌধুরী বলেন, এ বছর বন অধিদপ্তর সাত কোটি ৭০ লাখ গাছ লাগাবে। দেশের যেখানেই খালি জায়গা পাওয়া যাবে সেখানেই ফুল, ফল ও বনজ গাছ লাগানো হবে। শুধু বনে নয়, সামাজিক বনায়ন তৈরিতে বন অধিদপ্তর রাস্তার পাশে, ফুটপাতে, ফাঁকা জায়গায় গাছ লাগাবে। এমনকি বাড়ির ছাদেও গাছ লাগাতে সহায়তা করবে। এসব গাছের যত্নে এলাকাবাসীকে এগিয়ে আহ্বান জানান তিনি।
আমিরুল ইসলাম বলেন, ডিএনসিসির ফুটপাতগুলোতে ছাতিম, কাঠবাদাম, বকুল গাছ লাগানো হবে। পাখিদের জন্য ফলদ গাছ লাগানো হবে। তা ছাড়া পথচারীরা যাতে জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার করে সেজন্য কাঁটা মেহেদী গাছ গালানো হবে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ডিএনসিসি প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহ. আমিরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় অঞ্চলের বন সংরক্ষক হোসেইন মোহাম্মদ নিশাদ, ঢাকা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা নুরুল করিম, সামাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম ও বন সংরক্ষক আর এস এম মনিরুল ইসলাম, ডিএনসিসির পরিবেশবিষয়ক কমিটির আহ্বায়ক ১৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হুমায়ুন রশিদ জনি মহাখালী ও গুলশান এলাকার কাউন্সিলর মো. মফিজুর রহমান, মো. নাছির, হাসিনা বারী চৌধুরী, আমেনা বেগম প্রমুখ।
মন্তব্য করুন