সরকার ‘বিষাক্ত ফুল’ দিয়ে ভোটের মাঠ সাজিয়ে ‘একতরফ’ নির্বাচনের যে খেলা শুরু করেছে তা রুখে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক গণতন্ত্র মঞ্চ।
টানা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক এই হুঁশিয়ারি দেন।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচনের ফুল না কি ফুটতে শুরু করেছে। এই ফুল বাগানের ফুল না, এই ফুল প্লাস্টিকের ফুল। ঘরের মধ্যে সাজিয়ে রাখে, যার কোনো গন্ধ নেই, দুর্গন্ধ নেই সেই ফুল দিয়ে তিনি বাগান সাজানোর চেষ্টা করছে।’
তিনি বলেন, আপনারা জানেন যারা বিজ্ঞানের ছাত্র, কোনো কোনো ফুলের রেণু যদি আপনার নাকের মধ্য যায় অনেক সময়ে মানুষের শ্বাস পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায়, মানুষ মারা পর্যন্ত যেতে পারে। এরকম বিষাক্ত ফুলের কিছু কিছু রেণু আছে। আজকের সরকার সেই পথে হাঁটছেন।
তিনি আরও বলেন, সরকার মানুষের ভোট নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন সেজন্য নতুন প্রজন্ম না আগামী প্রজন্ম আপনাদের শুধু ভোট চোর না, শুধু ভোট ডাকাত না, জনগণের বিরুদ্ধে গণশত্রু হিসেবে আপনাদের আখ্যায়িত করবে।
হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, আমাদের কথা খুব পরিষ্কার- এসব সমস্ত খেলা বন্ধ করেন, বাংলাদেশের মানুষ ধরে ফেলেছে। এই খেলাটা বন্ধ করেন না হলে বাংলাদেশের মানুষ এবার একটা আখেরি লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত, জীবনমরণের জন্য প্রস্তুত।
তিনি বলেন, এবার জনগণ রাজপথে নেমেছে কেবল বিএনপিকে ক্ষমতা যাবার জন্য না, ভোটের অধিকার ভাতের অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার, একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সরকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য। এই লড়াইয়ে বিজয় না হওয়া পর্যন্ত গণতন্ত্র মঞ্চ রাজপথে থাকবে, সকল বিরোধী দল জনগণের সফল অংশ গ্রহণে রাজপথে নেমে এসে এই গণজাগরণকে গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করে এই সরকারকে কান ধরে পদত্যাগে বাধ্য না করা পর্যন্ত রাজপথ আমরা ছেড়ে যাবো না।
আগামী সপ্তাহটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই লড়াইয়ে সকলে ঐক্যবদ্ধ হউন। অবরোধের কর্মসূচি আসবে, হরতালের আসবে, ঘেরাও আসবে। নানা ধরনের কর্মসূচি বিরোধী দল থেকে ঘোষণা করা হবে। লক্ষ লক্ষ মানুষকে সাথে নিয়ে সেই কর্মসূচিগুলো আমরা সফল করব।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের সাহেব প্রায়ই খেলতে চান। তারা না কি সেমি ফাইনাল খেলে ফেলেছেন, এখন ফাইনাল খেলা বাকি। আমরা তো জানতাম আওয়ামী লীগ প্রিমিয়ার লীগে খেলে। আমরা যখন কিশোর বয়সে। এই দেশে প্রথম বিভাগ, দ্বিতীয় বিভাগ, তৃতীয় বিভাগ সবশেষে ছিল প্রাইনিয়ার লীগ। তারপরে আমরা যখন আরেকটু বড় হলাম, প্রিমিয়ার লীগ চালু হলো।
তিনি বলেন, আমরা তো ভেবেছিলাম যে, আওয়ামী লীগ প্রিমিয়ার লীগে খেলে, এখন দেখি পাইওনিয়ার লীগে খেলার জন্য তারা প্রস্তুতি নিচ্ছে। পাইওনিয়ার লীগের দলকে বাগিয়ে নিয়ে গিয়ে ‘ফুল ফুটতে শুরু করেছে’ এই হচ্ছে ওবায়দুল কাদের সাহেবদের নির্বাচন, এই হচ্ছে তাদের ফাইনাল খেলা।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী তিনি একদিন নিজেই বলেছেন যে, তাকে ছাড়া আওয়ামী লীগের সবাইকে নাকি কেনা যায়। উনি ভেবেছেন, বাংলাদেশের বোধহয় সব দলের সবাইকে নাকি কেনা যায়। দল হিসেবে রাজনৈতিক নেতা হিসেবে যখন অপরাপর রাজনৈতিক নেতাদের কেনাবেচার কাজকে গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) অনুমোদন করেন, রাজনৈতিক নেতা হিসেবে তার যে আর কোনো জায়গা থাকে না এটা পরিষ্কার। তিনি কি আর রাজনৈতিক নেতা আছেন?
বাংলাদেশের মানুষ বোকা না, বাংলাদেশের মানুষ জানে তাদের (সরকার) পায়ের তলায় মাটি নেই, বাংলাদেশের মানুষ জানে, আপনার দলের লোকেরা আজকে যারা নমিনেশনের জন্য ভিড় করছে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এদের কারও টিকিও নাগাল পাওয়া যাবে না।
সকাল সাড়ে ১১টায় তোপখানা রোড থেকে গণতন্ত্র মঞ্চের মিছিল শুরু হয়ে বিজয়নগর, শিল্পকলা একাডেমি সড়ক হয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে।
গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপনের সভাপতিত্বে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, ভাসানী অনুসারী পরিষদের হাবিবুর রহমান রিজু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রীতম দাস প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
এছাড়া ১২ দলীয় জোটের নওয়াব আলী আব্বাস, রাশেদ প্রধান, আসাদুর রহমান খান আসাদ, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, বাংলাদেশ গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর এবং অপর অংশের সদস্য সচিব ফারুক হাসানের নেতৃত্বে বিজয়নগর, পুরানা পল্টন. নয়া পল্টনের সড়কে মিছিল করেছে।
মন্তব্য করুন