অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের সুপারিশ নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে চিঠি দিয়েছে সাধারণ নাগরিক সমাজ।
চিঠিতে অবৈধভাবে ইউরোপে টাকা পাচারকারীদের সম্পদ জব্দ, ফেরত ও দ্বাদশ নির্বাচনে কালো টাকা-পেশিশক্তির ব্যক্তিদের বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয় ।
বুধবার (১৯ জুলাই) বিকেলে ঢাকাস্থ ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূতাবাসে অ্যাম্বাসাডর এইচ.ই চার্লস হোয়াইটলি বরাবর চিঠিটি প্রদান করা হয়।
বাংলাদেশ সাধারণ নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে সংগঠনের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ লায়ন সাব্বির হাজরা, সংগঠনের কোঅর্ডিনেটর শেখ ফরিদ ও সদস্য হুমায়ুন হিমু চিঠিটি প্রেরণ করেন।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সব দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার ব্যাপারে সরকার, রাজনৈতিক দল, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের সাথে মতবিনিময় করে যাচ্ছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার বিষয়টি আমরা স্বাগত জানাই। তবে দেশের বেশিরভাগ সাধারণ মানুষের মতামত আপনাদের কাছে এখন পর্যন্ত পৌঁছেছে বলে আমরা লক্ষ্য করিনি। তাই সাধারণ নাগরিকদের মতামত তুলে ধরছি।
‘দেশের বেশিরভাগ সাধারণ মানুষ মনে করে সরকার পরিবর্তন হলে কিংবা অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন হলেই জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে। তা ছাড়া জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক, দুর্নীতিমুক্ত, নাগরিকের মতো সংগত অধিকার প্রতিষ্ঠা করা, মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা, অর্থ পাচার বন্ধ, ন্যায়পরায়ণ, আইন আদালত ও সংবিধান সম্মত না হলে সব নাগরিকের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।’
চিঠিতে এও বলা হয়েছে, প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলেই কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত অসাধু রাজনীতিবিদ, কালো টাকার মালিক, ভূমিদস্যু, পেশিশক্তিধর ব্যক্তি রয়েছে। সেই সাথে ব্যাংক লুটপাটকারী, খেলাপি ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি যদি আগামী দিনে নমিনেশন পায় তাহলে কোনোভাবেই নাগরিকের মৌলিক অধিকার রক্ষাসহ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।
কোনোভাবেই এসব ব্যক্তিকে নমিনেশন প্রদান করা না করার জন্য চিঠিতে আহ্বান জানানো হয়।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ থেকে কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তি এমনকি অসাধু সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দেশ থেকে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ লুটপাট করে ইউরোপে বসতি গড়ে তুলেছেন।
দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা যেন কোনোভাবেই ইউরোপে বসবাস করতে না পারে সেই ব্যাপারে একটি ঘোষণা দেওয়ারও অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে। সেইসাথে তাদের সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিক সমাজ।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, সংবিধানে ৭০ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের বিপক্ষে সেই দলের কোনো সংসদ সদস্য ভেটো প্রদান করলে তার সংসদ সদস্যপদ বাতিল হয়ে যায়। অর্থাৎ অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে সংসদ গঠিত হলেও সেই সংসদের গণতন্ত্র থাকছে না। আবার রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে গণতন্ত্র না থাকায় পরিবারতন্ত্রের মাধ্যমে বা নির্দেশেই প্রার্থীকে মনোনয়ন প্রদান করা হয়। ফলে গণতন্ত্র অন্ধকারে রয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন জনগণের মতামতের পথকে কণ্ঠরোধ করেছে।
‘নির্বাচনের মাধ্যমে যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক আমরা সাধারণ নাগরিকরা সেই সরকারকে স্বাগত জানাই। দুঃখের বিষয় হলো প্রশাসনিক জবাবদিহিতা না থাকা, সংসদের জবাবদিহিতা না থাকা, দেশের কমিশন, অধিদপ্তর, আইন আদালত কোথাও জবাবদিহিতা না থাকার ফলে জনগণের যে ন্যায্য অধিকার সুষম বণ্টন এবং ন্যায়সঙ্গত অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয় না। ফলে নাগরিকের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়।’
চিঠিতে নির্বাচন কমিশনের আইন সম্পর্কেও জানানো হয়। বলা হয়, একজন সাধারণ নাগরিক বা ভালো মনের মানুষ দলীয় নমিনেশন ছাড়া স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করা খুব কঠিন। প্রার্থীকে নির্বাচনের জন্য এক শতাংশ ভোটারের সমর্থন প্রয়োজন পড়ে। তা ছাড়া একজন সাধারণ মানের প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে কতটা নাজেহাল হতে হয় তা ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে হিরো আলম উৎকৃষ্ট উদাহরণ। নাগরিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং চিঠিতে উল্লিখিত মতামতগুলোর প্রতি মূল্যায়ন করে সরকারসহ সব রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা করার আহ্বান জানানো হয়। সেই সাথে রইল আমাদের সাধারণ নাগরিকদের মতামত কমিশনের কাছে উপস্থাপন করে আগামী দিনে সার্বিকভাবে জনগণের কল্যাণে এবং রাষ্ট্রের জন্য মঙ্গলজনক একটি ব্যবস্থার মাধ্যমে অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য এবং সব দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশে একটি ভালো মানের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে সহায়তার অনুরোধ করা হয়।
মন্তব্য করুন