যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত মুসলমানদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। কোথাও গড়ে উঠেছে ছোট ছোট কমিউনিটি, আবার কোথাও মুসলিম জীবনযাপন এতটাই শক্ত ভিত্তি পেয়েছে যে, পুরো শহরকে ঘিরেই তৈরি হয়েছে একধরনের ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক আবহ।
মসজিদ, হালাল খাবারের দোকান, ইসলামি স্কুল থেকে শুরু করে সামাজিক, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড— সব মিলিয়ে এসব শহরে মুসলমানদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। ফলে কেউ যদি নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস শুরু করতে চান বা মুসলিম পরিবার নিয়ে স্থায়ী হওয়ার কথা ভাবেন, তবে এই শহরগুলো হতে পারে আদর্শ পছন্দ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু সংখ্যার ভিত্তিতে নয়, বরং কোথায় মুসলিম সমাজ কতটা প্রাণবন্ত, সাংগঠনিক ও সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ; এসব বিষয় বিবেচনা করলে এই ১০ শহরকে আলাদা করে দেখা যায়। চলুন জেনে নিই আমেরিকান সেই ১০টি শহরের নাম, যেখানে অন্যান্য শহরের তুলনায় মুসলিম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেশি—
১. ডিয়ারবর্ন, মিশিগান
ডেট্রয়েটের পাশের এই শহরটিকে অনেকেই বলেন যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম রাজধানী। এখানে রয়েছে উত্তর আমেরিকার অন্যতম বৃহৎ মসজিদ Islamic Center of America। রাস্তাঘাটে চোখে পড়বে আরবি সাইনবোর্ড, হালাল রেস্টুরেন্ট, বেকারি আর মুদি দোকান। স্থানীয় সরকারেও মুসলমানদের সক্রিয় অংশগ্রহণ রয়েছে।
২. নিউইয়র্ক সিটি, নিউইয়র্ক
যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ও বৈচিত্র্যময় মুসলিম জনসংখ্যা নিউইয়র্কেই। এখানে রয়েছে আড়াই শতাধিক মসজিদ। শহরটিতে বসবাসকারীরা ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহায় সরকারি ছুটি উদযাপনের সুযোগ পান। এই শহরের কুইন্স, ব্রুকলিন থেকে হারলেম; প্রতিটি অঞ্চলে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন মুসলিম কমিউনিটির প্রাণবন্ত উপস্থিতি।
৩. প্যাটারসন, নিউ জার্সি
ফিলিস্তিনি-আমেরিকানদের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচিত নিউ জার্সির প্যাটারসন শহর। ‘লিটল রামাল্লাহ’ নামেও খ্যাতি রয়েছে এই শহরের। শহরটিতে আরবি হালাল দোকান ও ক্যাফে রয়েছে। আরও আছে পরিবারভিত্তিক মসজিদ এবং ইসলামি স্কুল।
৪. শিকাগো, ইলিনয়
শিকাগো দীর্ঘদিন ধরেই মুসলিম আমেরিকার অন্যতম শক্ত ঘাঁটি। আফ্রিকান-আমেরিকান মুসলমানদের ঐতিহাসিক উপস্থিতি এই শহরকে আলাদা মাত্রা দিয়েছে। এখানে রয়েছে শতাধিক মসজিদ ও ইসলামি কেন্দ্র। প্রতি বছর MAS-ICNA’র মতো বড় সম্মেলনও হয় এখানে।
৫. হিউস্টন, টেক্সাস
পরিবারবান্ধব, তুলনামূলক সাশ্রয়ী এবং সুসংগঠিত মুসলিম সমাজ; এই তিন কারণে হিউস্টন দ্রুত জনপ্রিয় হয়েছে। এখানে আছে ডজনখানেক বড় মসজিদ, পূর্ণাঙ্গ ইসলামি স্কুল, আর হালাল খাবারের অঢেল সুযোগ।
৬. লস অ্যাঞ্জেলেস, ক্যালিফোর্নিয়া
বহুজাতিক মুসলিম জনসংখ্যার কারণে লস অ্যাঞ্জেলেস সত্যিই এক সাংস্কৃতিক মোজাইক। আফ্রিকান-আমেরিকান থেকে ইরানি, ইন্দোনেশীয়; সবাই মিলে গড়ে তুলেছে উজ্জ্বল এক মুসলিম জীবন। পাশাপাশি মুসলমানরা সক্রিয় রয়েছেন মিডিয়া, শিল্প, ফ্যাশনসহ নানা সৃজনশীল ক্ষেত্রে।
৭. আটলান্টা, জর্জিয়া
এই শহরের মুসলিম জনগোষ্ঠীর আতিথেয়তার বিশেষ খ্যাতি রয়েছে। শহরটিতে দ্রুত বাড়ছে হালাল রেস্তোরাঁ ও দোকান। নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য পছন্দের গন্তব্য হতে পারে এই শহরটি। এখানে আল ফারুক ও মসজিদে ওমর নামে বিশাল দুটি মসজিদ রয়েছে। শহরের মুসলিম শিশুদের জন্য ইসলামি স্কুল ও হিফজ শিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে।
৮. ফিলাডেলফিয়া, পেনসিলভানিয়া
ফিলাডেলফিয়ার সমাজ ও সংস্কৃতিতে গভীরভাবে প্রোথিত হয়ে আছে ইসলাম। শহরটিতে উত্তরাধিকার সূত্রে বসবাস করছেন আফ্রিকান-আমেরিকান মুসলিমরা।
৯. মিনিয়াপোলিস-সেন্ট পল, মিনেসোটা
যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বড় সোমালি জনসংখ্যা বসবাস করে এই টুইন সিটিজে। সোমালি-মালিকানাধীন মসজিদ, ব্যবসা, সংগঠন; সব মিলিয়ে শহরটি মুসলিম পরিচয়ে উজ্জ্বল। এখান থেকেই উঠে এসেছেন জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতিক ইলহান ওমর।
১০. ডালাস-ফোর্ট ওর্থ, টেক্সাস
মুসলিম অবকাঠামো গড়ে তোলার ক্ষেত্রে পরিকল্পিত উন্নয়নের এক বড় উদাহরণ ডালাস-ফোর্ট ওর্থ। বিশাল মসজিদ, পূর্ণাঙ্গ ইসলামি স্কুল ও মুসলিম অধ্যুষিত আবাসিক এলাকা গড়ে উঠেছে এখানে। পরিবার নিয়ে স্থায়ী হওয়ার জন্য অনেক মুসলমান এই অঞ্চল বেছে নিচ্ছেন।
সূত্র : দ্য হালাল টাইমস
মন্তব্য করুন