মানুষের মনে বিভিন্ন মন্দ ভাবনা আসে। কখনো এমনসব অবাঞ্ছিত চিন্তাও তার মনে উদয় হয়, ইমান সম্পর্কেই সন্দেহ সৃষ্টি হয়ে যায়। সম্ভবত এমন কোনো মানুষ নেই, যার মনে এ ধরনের চিন্তা কখনোই আসে না। সবার মনেই তা আসে এবং এর কারণে মানুষ পেরেশান হয়। বিশেষত যে ব্যক্তি দ্বীনের পথে চলার ইচ্ছা করেছে এবং চলতে আরম্ভ করেছে, তার মনে এ ধরনের চিন্তা খুব বেশি আসে।
অন্যদিকে দ্বীনদারীর দিকে যাদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই, সারা দিন দুনিয়াবী কাজকর্মে মগ্ন, গুনাহর কাজে লিপ্ত তাদের মনে এই সব চিন্তা আসে না। এগুলো তাদের মনেই আসে যারা আল্লাহর রাস্তায় চলতে আরম্ভ করেছে। কোনো কোনো চিন্তা তো এতই ভয়াবহ, মানুষ তার ইমানের ব্যাপারেও আশঙ্কায় পড়ে যায়। কখনো আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কে প্রশ্ন-সংশয় আসে, কখনো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে, কখনো কোরআন মাজিদ ও হাদিস শরিফ সম্পর্কে, কখনো বা শরিয়তের বিধিবিধান সম্পর্কে। এ সময় সঠিক নির্দেশনা না পেলে গোমরাহীর মধ্যে পড়ে যাওয়ার আশংকা থাকে। তাই অনেকেই জানতে চান, এই পরিস্থিতিতে কী করা উচিত। চলুন তাহলে শরিয়তের আলোকে বিস্তারিত জেনে নিই—
মন্দ চিন্তা কেন আসে?
কোরআন মাজিদে আল্লাহ তায়ালা মুমিনদেরকে সান্ত্বনাবাণী শুনিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, আর যদি শয়তানের প্ররোচনা তোমাকে প্ররোচিত করে, তাহলে আল্লাহর শরণাপন্ন হও। (সুরা আ‘রাফ : ২০০)
অর্থাৎ শয়তানের পক্ষ হতে যে সব মন্দ ভাবনা সৃষ্টি হয় এগুলো প্রকৃতপক্ষে শয়তানের কুমন্ত্রণা। এভাবে সে মুমিনদেরকে পেরেশানিতে ফেলতে চায়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, এই কুমন্ত্রণা মুমিনদের চুল পরিমাণ ক্ষতি করতে পারে না আল্লাহর হুকুম ছাড়া। এজন্য এইসব অনাহূত ভাবনা যখন আপনাকে বিরক্ত করে তখন স্মরণ করুন, এটা ঈমানের আলামত। শয়তান তার উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টা করছে।
বাজে চিন্তা এলে মুমিনের করণীয়
মুসলিম বিশ্বের প্রখ্যাত আলেম হজরত আশরাফ আলী থানভী (রাহি.) বলেন, এ সমস্যার সমাধান হলো ভ্রুক্ষেপহীনতা। মন্দ চিন্তা যদি আসে তবে আসুক। সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করার প্রয়োজন নেই। এই চিন্তাই করবেন না যে, কী চিন্তা আসছে আর কী যাচ্ছে।
কারণ এক সাহাবি হুজুর (সা.)-কে বললেন, আল্লাহর রাসূল! অনেক সময় আমার মনে এমন সব কথা আসে, যা মুখে উচ্চারণ করার চেয়ে আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়াও আমার কাছে অধিক পছন্দনীয়। আমি কী করতে পারি? উত্তরে নবীজি (সা.) বললেন,‘এটা তো খাঁটি ঈমানের আলামত।’ (সহি মুসলিম : কিতাবুল ইমান, বাবু বয়ানিল ওয়াসওয়াসা ফিল ইমান)
অর্থাৎ এই সব অবাঞ্ছিত চিন্তা তো ইমানের চিহ্ন। কেননা, এসব চিন্তা শুধু মুমিনের মনেই আসে, পাপাচারীর মনে আসে না।
প্রখ্যাত ইসলামি স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, যখন কারো মনে ইচ্ছের বাইরে আল্লাহ-রাসুল নিয়ে বাজে চিন্তা আসে এবং সে অস্থির হয়ে যায়, এটা তার দৃঢ় ইমানের দলিল। কারণ, খালি ঘরে চোর আসে না।
তিনি পরামর্শ জানিয়ে বলেন, এরকম পরিস্থিতিতে নিচের ৫টি কাজ করবেন—
১. এই সব চিন্তাকে পাত্তা না দেওয়া।
২. অন্তরে ইমান আছে বলে খুশি হয়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা।
৩. এরকম বাজে চিন্তা আসলে ‘আমানতু বিল্লাহি ও রাসুলিহ’ পড়বেন। এর অর্থ হলো, আমি আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলের ওপর ইমান আনলাম।
৪. বাম দিকে প্রতীকী থুথু নিক্ষেপ করবেন। কারণ এজাতীয় শয়তান মনের ভেতর যে অ্যাটাক করে, এটা সাধারণত বাঁ দিক থেকে হয়ে থাকে।
৫. শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে মুক্তি পেতে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি পানাহ চাইবেন।
মন্তব্য করুন